শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় গৌরনদীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে এতিমখানা ও মাদ্রাসার দরিদ্র, অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কারাবন্ধী ও রাজপথে সাহসী সৈনিকদের সম্মানে ইফতার দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায়, দখিনের খবর পত্রিকা অফিসের তালা ভেঙে কোটি টাকার লুণ্ঠিত মালামাল বাড়িওয়ালার পাঁচ তলা থেকে উদ্ধার, মামলা নিতে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা গলাচিপা উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সভাপতি হাফিজ, সম্পাদক রুবেল চোখের জলে বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী বাবুলকে চির বিদায় বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন কারামুক্ত উচ্চ আদালতে জামিন পেলেন বরিশাল মহানগর বিএনপির মীর জাহিদসহ পাঁচ নেতা তসলিম ও পিপলুর নেতৃত্বে বরিশাল জেলা উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের বরিশাল নগরীতে কালো পতাকা মিছিল হিউম্যান ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গৌরনদীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ
বরিশাল নগরীর ব্যবসায়ী পলাশ কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

বরিশাল নগরীর ব্যবসায়ী পলাশ কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০১৬ সালে জমি মরগেজ রেখে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বরিশাল শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ ঋণ গ্রহণ করেন বরিশাল সদর উপজেলার কাশিপুর গণপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং নগরীর হাটখোলা পেঁয়াজপট্টি সিকদার বাণিজ্যালয়ের মালিক আরিফুর রহমান ওরফে পলাশ সিকদার। উত্তোলন করা টাকার বিপরিতে তিনি ওই ব্যাংকে সদর উপজেলার মুকন্দপট্টি এলাকার ৮৯ শতাংশ জমি মরগেজ রাখেন। ওই সময় জমির বাজার মূল্য ছিল ৮০ লাখ টাকারও কম। অথচ ওই জমির ওপরে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এভাবে শুধু মিউচুয়াল ট্রাস্টই নয়, ‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাকসহ আরও একাধিক ব্যাংক থেকে কোটি কোটি ঋণ নিয়েছেন আরিফুর রহমান পলাশ। কোন কোন ব্যাংকে মরগেজ রেখেছেন জমি আবার কোন ব্যাংকে ফ্ল্যাট। আশ্চর্যের বিষয় হলো- ব্যাংকে মরগেজ রাখা জমি জালিয়াতি করে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রিও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পলাশ সিকদারের মালিকানাধীন তিনটি ফ্ল্যাটও একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন প্রতারক পলাশ সিকদার। শুধু ব্যাংক আর ফ্ল্যাট নয় নগরীর একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা প্রতারক পলাশ সিকদার।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে যাওয়া হয় আরিফুর রহমানের এলাকা কাশিপুর গণপাড়ায়। বাড়ির কাছেই মুকন্দুপট্টিতে তার নামে রয়েছে ২৩ শতাংশ জমি। ওই জমিতে দেখা যায় দুটি সাইনবোর্ড ঝুঁলানো রয়েছে। একটিতে লেখা ‘এই সম্পত্তি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বরিশাল শাখায় দায়বদ্ধ’। অপরটিতে লেখা ‘ক্রয়সূত্রে এই জমির মালিক জুঁই রাণী রায়’। একই জমিতে দুটি সাইনবোর্ড দেখার পর যোগাযোগ করা হয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বরিশাল শাখার ম্যানেজার আরিফুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘পলাশ সিকদার আমাদের সাথে অনেক বছর ধরে লেনদেন করে আসছে। ২০১৬ সালে ৮৯ শতাংশ জমি মরগেজ রেখে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণ গ্রহণের পর থেকে তার কিস্তিও রেগুলার ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে শুনি তিনি লাপাত্তা হয়ে গেছেন। এরপর আমরা জমিতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছি। আমরা আরিফুর রহমানের বাড়িতে গিয়েছিলাম। খোঁজ-খবর নিচ্ছি। ঋণ দেয়ার পূর্বে জমির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এ ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অবশ্যই খোঁজ নিয়েছি। তাছাড়া অন্যান্য আরও অনেক ব্যাংকে ওই জমির ওপরে ঋণ নেওয়া ছিল। সেগুলো ক্লোজ করা হয়েছে বলে শুনেছি। গাঁঢাকা দেয়ার দুই দিন পূর্বেও তিনি অনেক টাকা ব্যাংকে লেনদেন করেছে। আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো এরকম একজন ব্যবসায়ী পালিয়ে যাবেন। তাছাড়া তার এত সুন্দর ধর্মীয় লেবাজ, দেখেতো বোঝার উপায় নেই এ ধরণের প্রতারণা সে করতে পারে। মুখে কি সুন্দর দাঁড়ি, মাথায় টুপি। আমাকে এসে প্রায়ই বলতো ‘ভাই নামাজ পড়েনতো, ঠিকমত নামাজ পড়বেন’।
মাস দুয়েক আগে নগরীর বাজার রোডে ‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কোঅপারেটিভ ব্যাংক’ থেকে ৪০ লাখ টাকা ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগ’ ঋণ গ্রহণ করেন আরিফুর রহমান ওরফে পলাশ সিকদার। ঋণ গ্রহণের সময় জামিনদার হিসেবে কাগজপত্রে নাম রয়েছে আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তির। পলাশ সিকদার পালিয়ে গেছেন এমন সংবাদ পাওয়ার পর পরই জিম্মাদার আবুল কালাম আজাদকে নোটিশ দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
আবুল কালামের দাবি, তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তার সাথে যোগাযোগ না করেই ভুয়া স্বাক্ষরে পলাশ সিকদারকে ঋণ দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। নিয়মানুযায়ী ঋণ দেয়ার পূর্বে জিম্মাদারের খোঁজ-খবর নেবেন এবং টাকা প্রদানের সময় জিম্মাদারকেও উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু আমি এর কিছুই জানিনা। জিম্মাদার হিসেবে ব্যাংকে আমার যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে তাও সঠিক নয়। এ থেকেই প্রমাণ হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন খোঁজ-খবর না নিয়েই ভুয়া স্বাক্ষরে ঋণ দিয়েছে। এ ব্যাপারে ওই ব্যাংকের ম্যানেজার তাজিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরিফুর রহমানের একটি দোকানের মালিক আবুল কালাম। পলাশ সিকদার গাঁঢাকা দিয়েছে এমন খবর পাওয়ার পর আমরা জিম্মাদার আবুল কালামের বাসায় যাই। তিনি (আবুল কালাম) আমাদের অনেক কাগজপত্র দেখিয়েছেন। আমরা দেখলাম আবুল কালাম নিজেই অনেক জমি কিনে রেখেছেন পলাশের কাছ থেকে। আমরা জিম্মাদারদের নোটিশ করেছি এবং পলাশের মায়ের সাথেও কথা হয়েছে। ব্যাংক ম্যানেজার তাজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জানামতে পলাশ কাশিপুর ইউনিয়নে গেলোবার ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ব্যানারে নির্বাচনও করেছেন। তিনি কমপক্ষে ২৭টি মসজিদের সভাপতি। নগরীর লাইন রোড, নাজিরপোল এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এতকিছু থাকার পরেও তিনি কেন পালিয়ে যাবেন আমাদের মাথায় আসছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে জমি ট্রাস্ট ব্যাংকে মরগেজ রাখা রয়েছে একই জমি অন্তত ৪/৫ জনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। ব্যাংকে মরগেজ রাখা মুকন্দপট্টি এলাকায় ২৩ শতাংশ জমির মধ্যে ২০১৯ সালে ৭ শতাংশ জমি এক লাখ ২০ হাজার টাকা দরে ক্রয় করেন জুঁই রাণী রায়।
এ ব্যাপারে জুই রাণী রায়ের স্বামী আশুতোষ সিংহ রায়ের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি মুঠোফোনে বলেন- ‘আমাকে দলিলের ফটোকপি দেওয়া হয়েছে। মূল দলিল এখনও পাইনি। কেনার আগে ভূমি অফিসেও গেছি। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয়েছিল ‘জমিতে কোন ধরণের ত্রুটি নেই’। এখনতো শুনি এ জমি নাকি আরও ৪/৫ জনের কাছে বিক্রি করেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও এ জমি এখন দাবি করছেন। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে- শুধু ব্যাংকের টাকাই নয়, ব্যক্তিগতভাবে অনেকের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে গাঁঢাকা দিয়েছেন প্রতারক পলাশ সিকদার। বরিশাল নগরীর জর্ডনরোড এলাকার বাসিন্দা ফিরোজুর রহমান জানান, ‘নগরীর লাইন রোডে আরিফুর রহমানের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটটি আমি ৪২ লাখ টাকায় ক্রয় করি। ৪০ লাখ টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে। বাকি ২ লাখ টাকা পাওনা ছিল। টাকার বিনিময়ে পলাশ সিকদার আমাকে একটি চেকও দিয়েছেন। ১৫ অক্টোবর দলিল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন তার মোবাইলের সবকটি নম্বর বন্ধ এবং ফ্ল্যাটে তালা। ফিরোজুর রহমান জানান, শুধু আমার কাছেই নয়, এখন শুনছি ফ্ল্যাটটি এর আগেও নাকি দুইজনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
নাজিরপোল এলাকায় একটি ফ্ল্যাট দেখিয়ে প্রবাসী সাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন পলাশ। ওই ফ্ল্যাট শুধু সাইদুলের কাছে নয়, আরও দুইজনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের ভাই সেন্টুর কাছেও ওই ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয় ২০১৭ সালে। তছলিম উদ্দীন নামে এক আইনজীবীর কাছ থেকে ব্যবসা করার কথা বলে ২৩ লাখ টাকা নিয়েছেন আরিফুর রহমান পলাশ। আবুল কালাম আজাদের কাছ থেকে ১৭ লাখ, গির্জা মহল্লার ব্যবসায়ী শাহীনের কাছ থেকে ১০ লাখ, জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে ৫ লাখ এবং মোঃ মুসা এর কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নিয়েছেন পলাশ সিকদার। এভাবে নগরীর অর্ধ শতাধিক লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছেন আরিফুর রহমান ওরফে পলাশ সিকদার।
গত মঙ্গলবার দুপুরে কাশিপুর এলাকায় গিয়ে কথা হয় একাধিক ব্যক্তির সাথে। পলাশ সিকদারের উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদেরও জানা। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পলাশ সিকদারের বাবা মানিক সিকদার ছিলেন সর্বহারা নেতা। ১৯৯০ সালের দিকে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে তার দুই চোখ উৎপাটন করে। এরপরেও তার মৃত্যু না হওয়ায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পলাশের মা একজন নিরীহ মানুষ। কিন্তু পলাশের বাবা তাকে ডিভোর্স দিয়েছিল। তবে মানিক সিকদারের মৃত্যুর পর ছেলে পলাশ সিকদার তার মাকে কাশিপুরে নিয়ে আসেন। পলাশ সিকদার টাউট প্রকৃতির। তিনি মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা এনে এলাকায় কিছু দান সদগা করায় সবাই ভাবতো ‘পলাশ খুব দানশীল ব্যক্তি। এত ভাল মানুষ পাওয়া খুব কঠিন’। কিন্তু প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সবাই আসল রহস্য জানতে পেরেছে।
কথা হয় আরিফুর রহমান পলাশের মায়ের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক দিন ধরেই বিদেশে যাওয়ার কথা বলছে। গত ১২ অক্টোবর আমার সাথে কথা হয়। আমিতো এতকিছু জানিনা বাবা। লোকজন আসতেছে বিধায় অনেক কিছু শুনতে পাই। এখন কার কথা সত্য আর কথা মিথ্যা তাতো আমার ছেলে না আসলে বলতে পারবোনা। তবে ছেলে আমাকে প্রায়ই বলতো ‘মা আমি তিনজন লোক নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। তারা আমার অনেক ক্ষতি করছে’। এখন এই তিনজন কারা সে ব্যাপারে বিস্তারিত আমাকে কখনোই বলেনি। ছেলের দুটি ফ্ল্যাট আছে এই পর্যন্ত আমি জানি। এখন এগুলো কারও কাছে বিক্রি করছে কিনা আমার জানা নেই।
মঙ্গলবার রাতে কথা হয় পলাশ সিকদারের বোনের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই দেশের বাইরে আছে। তার সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। দেশে আসলেই আসল ঘটনা আপনারা জানতে পারবেন। যেহেতু আমার ভাই দেশে নেই তাই একতরফাভাবে যে যা বলছে আমাদের বিশ্বাস করতে হচ্ছে। ভাই দেশে আসার পর সব রহস্য উদঘাটিত হবে। তবে কম দামের জমি দেখিয়ে এতটাকা লোন নেওয়ার ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না বলে অনেকেই দাবি করেছেন এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দুষছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com