মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ জহির উদ্দিন স্বপন
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতিঃ এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু
প্রধান সম্পাদকঃ লায়ন এস দিদার সরদার
সম্পাদকঃ কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদকঃ মাসুদ রানা পলাশ
সহকারী সম্পাদকঃ লায়ন এসএম জুলফিকার
সংবাদ শিরোনাম :
বরিশালে সাংগঠনিক সফরে আসছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: মাহমুদা মিতু দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর
পেশার দ্বন্দ্ব

পেশার দ্বন্দ্ব

ফাইল ছবি

পেশা নিয়ে সম্মান-অসম্মানের ধারণা সমাজে বহুযুগ থেকে চর্চিত। শিশুকালেই আমাদের বলা হয়ে থাকে যেভাবেই হোক ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার, ব্যাংকার, মিলিটারি কিংবা পুলিশ অফিসারের মতো সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত হতে হবে। অর্থাৎ অন্য পেশাগুলো যে অসম্মানের সুস্পষ্টভাবে সেই ধারণাই দেন অভিভাবকরা।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন বিভেদ, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও শ্রেণি বৈষম্যের একটি প্রধান কারণ পেশা বিষয়ক প্রচলিত এই ধারণা। এর ফলে বড় হয়ে কেউ নিজেকে সম্মানজনক পেশার লোক ভেবে অহংকারী হয়। আর কেউবা নিজের পেশাকে অসম্মানজনক ভেবে হীনম্মন্যতায় ভোগে। অহংকারীরা কারণ-অকারণে অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করেন আর হীনম্মন্যতার শিকার মানুষগুলো সারাজীবন জড়ো পদার্থের মতো বাঁচেন। যেমন চিকিৎসায় অবহেলার কথা আসলেই কিছু ডাক্তার নাখোশ হন। মানবিক চিন্তা বিসর্জন দিয়ে কর্মবিরতি ডেকে বসেন। রোগীকে জিম্মি করে দাবিও আদায় করেন।

‘আপনি একজন কাস্টমস অফিসার বা যে কোন অফিসের একজন অফিসার। আপনি দু’হাতে ঘুষ খান। মানুষ কি আপনাকে সম্মান করবে? ডাকাতের সামনে কেউ যদি হাতজোড় করে দাঁড়ায়, কেউ কি বলবে যে-সে ডাকাতকে সম্মান করছে?’

সংবাদকর্মী হিসেবে এসব ঘটনা পাঠকের কাছে তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। আমি চেষ্টা করি শতভাগ নিরপেক্ষ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ণনা করতে। এক্ষেত্রে রোগী বা তার স্বজনদের ভুল-ত্রুটিও আড়ালে থাকে না। কিন্তু রিপোর্ট ছাপা হলেই আমাকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। কেস না বুঝে রিপোর্ট করার অভিযোগও করেন। দম্ভ নিয়ে অনেক ডাক্তারকেই তখন বলতে শুনি আরে তিনি তো বকলম সাংবাদিক। বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে পিছে লেগেছে। পেশা নিয়ে অহংবোধে শিক্ষকরাও কম যান না। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়ম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, দলাদলি, গবেষণা কর্মে কাট-কপি, মারামারি-হাতাহাতিসহ নানাবিধ অনিয়ম-অনাচারের কথা বললে তাদের অনেকে একরকম তেড়ে আসেন।

সাংবাদিকতার এথিক্স নিয়ে নতুন করে পাঠ দেন। এসব নিউজ করার কী আছে এমন দাবিও করেন। মনে মনে যে গালমন্দ করেন তা আর বলার অবকাশ রাখে না। বিশেষ বিশেষ পেশার মানুষ তো আরো একধাপ এগিয়ে। অনিয়মের কথা আসলে প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্পে তারা দাঁতের মাড়ি শক্ত করে রাখেন। সুযোগ বুঝে পেটে লাথি মারতেও কুণ্ঠিত হন না। বড় হাতের ইশারায় চুটকিতে এই নগণ্য কাজ সেরে ফেলেন। পরে আলোআঁধারে চিয়ার্স ধ্বনিতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বাতাসে মিলিয়ে দেন।

সাংবাদিকরা যে ধোয়া তুলসি পাতা এমনটা দাবি করছি না। মাটিতে পা পড়ে না এমন জার্নালিস্টের সংখ্যা নেহাতি কম না। তেলবাজিতে বিশেষ দক্ষতায় অনেকে যে আঙ্গুল ফুলে বট গাছ (কলা গাছে পোসায় না) বনে গেছেন তার প্রমাণ ঢের। তবে এটাও সত্যি যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জবাবদিহিতার জায়গায় গণমাধ্যম বা সংবাদকর্মীর যে ভূমিকা তা অন্য যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা ব্যক্তির তুলনায় অগ্রগণ্য। আপনি ভাবতেই পারেন সুযোগ পেয়ে নিজ পেশার গুণকীর্তন করছি। আমি সেটা অস্বীকারও করতে চাই না। তবে আমার দাবি একটু ভেবে দেখার আহ্বান জানাতে চাই। সমাজে একই পেশার মানুষের মাঝে আবার কতো বৈষম্য বিদ্যমান। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে আমরা যে নজরে দেখি স্কুল শিক্ষককে সেভাবে মূল্যায়ন করি না। কিংবা মূল ধারার সাংবাদিকে আমারা যতটা গুরুত্ব দিই মফস্বলের সাংবাদিকে পাত্তাই দিই না। অথচ কমবেশি সাবাই জানি জেলার সংবাদদাতারাই গণমাধ্যমের প্রাণ। এক্ষেত্রে যার বৈভব যত বেশি তার সাফল্য তত ঈর্ষণীয়।

স্কুল শিক্ষকদের বেলাতেও তাই। যতদিন আপনি প্রাইমারি মাস্টারদের যথাযথ মর্যাদা-মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হবেন ততদিন আপনি উন্নত জাতির তকমাও পাবেন না। সহজ শর্তে উন্নত রাষ্ট্রের কাছ থেকে বড় ঋণ হবে আপনার টিকে থাকার অবলম্বন। কয়েক দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা লেখা নজরে আসে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে সংগৃহীত উল্লেখ করে লেখাটা আপ করা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ‘সম্মানজনক পেশা’ বলেতে কি কিছু আছে? উত্তরে লেখক বলছেন আসলে পেশার কারণে কেউ সম্মানিত বা অসম্মানিত হতে পারে না। সম্মান আসে জ্ঞান, চরিত্র আর সততায়।

আপনি একজন কাস্টমস অফিসার বা যে কোন অফিসের একজন অফিসার। আপনি দু’হাতে ঘুষ খান। মানুষ কি আপনাকে সম্মান করবে? ডাকাতের সামনে কেউ যদি হাতজোড় করে দাঁড়ায়, কেউ কি বলবে যে-সে ডাকাতকে সম্মান করছে? আপনি একজন শিক্ষক। কিন্তু আপনার জ্ঞান জোড়াতালি মার্কা, আপনি ভালো পড়াতে পারেন না, কিংবা পড়ান না-ছাত্ররা আপনাকে সম্মান করবে? করবে না। পরীক্ষায় ফেলের ভয়ে বড়জোর তারা আপনাকে তোয়াজ করবে। অর্থাৎ অর্থকারী পেশা মানেই সম্মানজনক পেশা নয়। পেশা হলো জীবনধারণের প্রয়োজনে ব্যয় নির্বাহের উপায় মাত্র। মানবিক দিক থেকে দুনিয়ার সব মানুষের মর্যাদা সমান।

ধরেন একজন দলিত, তো তাঁর পেশাকে কি আপনি খুব অসম্মানজনক মনে করেন? যদি করেন, কেন? আপনার কি টয়লেট-বাথরুম পরিষ্কার করতে হয় না? কিংবা আপনি কি নিজেকে পরিষ্কার করেন না। তখন কি আপনি অসম্মানিত হয়ে পড়েন? কাউকে না ঠকিয়ে, বৈধভাবে অর্জিত যেকোন জীবিকাই সম্মানের। এখানে ছোট্ট একটা গল্প শেয়ার করতে চাই। তখন আমি অন্য এক টিভিতে শ্রম দিই। একদিন কথায় কথায় সিনিয়র এক সাংবাদিক আমাকে বলেন শোন কর্মই হচ্ছে ধর্ম। অর্থাৎ আমরা যদি যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করি তাহলে সেটাই প্রার্থনা।

যেমন বাবা-মাকে দেখভাল করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। কেউ যদি সেটা পালন করে তাহলে সে স্রষ্টার সন্তুষ্টিও অর্জন করে। এই পথে নিজের উন্নতি-প্রশান্তির পাশাপাশি দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি অনিবার্য। আসলে সমাজে সবাই সবার ওপর নির্ভরশীল। কাউকে ছাড়া কারো চলে না। তাই কারো সাথে অন্যায়-অনিয়ম করার আগে একবার নয় শতবার ভাবুন। কেননা আপনি যদি কাউকে ইট মারেন তবে পাটকেলের আঘাত অবধারিত। অবশ্য তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে না গেলে এসব কথায় চিড়ে ভিজবে না। কবির ভাষায়-এসব মন্ত্রে জাগে না হৃদয় লাগে যেন পরিহাস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017-2024 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com