সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ জহির উদ্দিন স্বপন
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতিঃ এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু
প্রধান সম্পাদকঃ লায়ন এস দিদার সরদার
সম্পাদকঃ কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদকঃ মাসুদ রানা পলাশ
সহকারী সম্পাদকঃ লায়ন এসএম জুলফিকার
সংবাদ শিরোনাম :
বরিশালে সাংগঠনিক সফরে আসছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: মাহমুদা মিতু দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর
যেভাবে মার্কেটে বরাদ্দ ৯১১ অবৈধ দোকান

যেভাবে মার্কেটে বরাদ্দ ৯১১ অবৈধ দোকান

উচ্ছেদের কথা বলে আগে দোকানে দেয়া হতো তালা। তারপর দোকানদারদেরকে জিম্মি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ তোলা হতো টাকা। টাকা দেয়ার পর খুলে দেয়া হতো সেই দোকান। না হয় বন্ধ। এভাবেই গুলিস্তানের কয়েকটি মার্কেটের দোকান বন্ধ করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনহ করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং মার্কেট কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে দোকানদাররা এসব অভিযোগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার বিনিময়ে ফুলবাড়ীয়া সুপার মার্কেটের অবৈধ দোকানগুলোকে বৈধতা দেয়া হয়। ফুলবাড়ীয়ার সিটি প্লাজায় অবৈধ দোকানে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে আবারো সামনে আসে দোকানমালিকদের কাছ থেকে সিটি করপোরেশনে মোটা অংকের টাকা নেয়ার বিষয়টি।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানের বৈধতা পেতে সাঈদ খোকনের  মেয়র থাকার সময়ে দোকান প্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন তারা। অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, টাকা দেয়ার পরও সে সময়  দোকানের বৈধতা পাননি তারা।

যেভাবে দোকান বরাদ্দ: ২০১৮ সালে দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের শেষ সময়ে গুলিস্তান ফুলবাড়ীয়া এলাকার ১৬টি মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তার লোকজন। তখন অবৈধ দোকানকে বৈধতা দেয়ার কথা বলে প্রতি দোকান থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কেবল ফুলবাড়ীয়া-২ মার্কেট থেকেই ২০১৮ সালে ২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের একজন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মকর্তা এবং মার্কেট সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মিলে ওই দোকানগুলো তৈরি করেন। এরপর পজিশন বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, আমি একটি দোকানের পজিশন কিনেছি ৩০ লাখ টাকায়। আমি বিদ্যুৎ বিল দিয়েছি। আমার দোকানের হোল্ডিং নম্বরও আছে। টাকা দিয়েছি মার্কেট সমিতির নেতাদের কাছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও বলছিলেন আমাদের বৈধতা দেয়া হবে। কিন্তু এখন তো সব শেষ। রাজধানীর ফুলবাড়ীয়া এলাকার তিন থেকে চারটি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেলোয়ার হোসেন দেলুর। তিনি ফুলবাড়ীয়া-২ মার্কেটের সভাপতি। অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়রের প্রশ্রয়ে তিনি এই মার্কেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন যদিও এখন নিজেই দুষছেন মেয়রকে। ফুলবাড়িয়া-২ মার্কেটের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে এই মার্কেটগুলো তার দখলে। তবে যে যখন ক্ষমতায় আসে তার সঙ্গে তার সখ্যতা হয়। সর্বশেষ সাবেক মেয়রের সঙ্গে সখ্যতা করে এই অবৈধ দোকানগুলো বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন এবং সাধারণ দোকান মালিকদের কাছ থেকে পজিশন বুঝিয়ে দেয়ার নামে টাকা নিয়েছেন।

জাকের প্লাজার একজন ব্যবসায়ী নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি দোকান কিনেছিলাম ৭০ লাখ টাকা দিয়ে। পরবর্তীতে  বৈধ-অবৈধর কথা বলে নিয়েছে আরো ২৫ লাখ টাকা। এখন শুনি দোকান নাকি অবৈধ। তাহলে এখন আমাদের কী হবে। এই টাকা কে নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়রের কথা বলে দিলু এই টাকা নিয়েছে। সিটি প্লাজার ফুটপাতের দোকানদার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১০ লাখ টাকা দিয়ে দুই হাতের এক শাটারের একটি দোকান ক্রয় করি। পরে এই দোকান স্থায়ী করে দেয়ার কথা বলে দেলু ১০ লাখ টাকা নেন। একই মার্কেটের দোকানদার অনিক আহমেদ বলেন, মার্কেট সমিতি তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে দোকানের পজিশনের জন্য। আর বৈধ কাগজপত্র করে দেয়ার জন্য নিয়েছে আরো ১০ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এইসব অবৈধ দোকানের একাংশকে ভুয়া বরাদ্দপত্রও দেয়া হয়েছে। বরাদ্দপত্র দেয়া হবে বলে দোকান প্রতি গড়ে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। এক হাজার অবৈধ দোকান থেকে কম করে হলেও ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। দেলোয়ার হোসেন দেলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মার্কেট থেকে টাকা কালেকশনের সিংহভাগ বিভিন্ন ব্যাংক চেক, পে-অর্ডার এবং নগদ টাকা সাবেক মেয়র ও তার সহযোগীদের দিয়েছেন। একটি বড় অংশ নিজে ভোগ করেছেন।

সাবেক মেয়রকে টাকা দেয়ার প্রমাণ রাখতে দেলোয়ার উত্তরা ব্যাংকের ফুলবাড়ীয়া  ব্রাঞ্চ এক্সিম ব্যাংকের পল্টন ব্রাঞ্চ, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকের করপোরেট  ব্রাঞ্চের একাউন্ট ব্যবহার করেছেন। এসব ব্যাংকের ৪৮টি চেক ট্রানজেকশনের লিস্ট আছে বলে দেলোয়ার দাবি করেন। এছাড়াও রয়েছে কোটি কোটি টাকা প্রদানের পে-অর্ডারসহ নগদ টাকা দেয়ার একাধিক প্রমাণ। কেবল ফুলবাড়ীয়া-২ মার্কেট  থেকে ২১ কোটি টাকা তুলেছে মালিক সমিতি। আর ওই টাকা তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়ার জন্য জমা দেন ফুলবাড়িয়া মার্কেটের লোপাটের মূল হোতা ফুলবাড়ীয়া মার্কেট-২ এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর অ্যাকাউন্টে।

দোকানগুলো যে কারণে অবৈধ: দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ওই মার্কেটের গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত, সিঁড়ি, গলি, টয়লেট, লিফটের জায়গায় নকশাবহির্ভূত এসব  দোকান নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ আইন অনুযায়ী পার্কিং বা নকশাবহির্ভূত স্থানে অন্য কিছু নির্মাণের বিধান নেই। এছাড়া এসব অবৈধ দোকানের কারণে মার্কেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এই অবৈধ দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে উঠেছে।   জানা গেছে, যারা এই ৯১১টি দোকান নির্মাণ করেছেন, তারা এখানে ব্যবসা করেন না। তারা অধিকাংশ দোকান কম দামে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ডিএসসিসি সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ডিএসসিসি’র  যেসব ভবনে পার্কিংয়ের জায়গায়  দোকানপাট রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদে নির্দেশনা দিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সুপারিশ করে ডিএসসিসি’র একটি তদন্ত কমিটি। কিন্তু তা আর  বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো ২০১৯ সালের ৩১শে জুলাই এসব  দোকান  থেকে একসঙ্গে সাত বছর দুই মাসের বকেয়া ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তখন এই খাতে কয়েক কোটি টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছিল। ওই মার্কেটের তিনটি ব্লকে বৈধ দোকান  প্রায় তিন হাজার।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: ফুলবাড়ীয়া-২ মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। এ রকম যদি প্রমাণ দেখাতে পারে, যে শাস্তি দিবে সেই শাস্তিই মেনে নেবো। তবে আমি যা নিয়েছি মার্কেটের সভাপতি হিসেবে নিয়েছি। রশিদ দিয়েছি। মেয়র সাহেব ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে এসে বার বার দোকানে তালা দিয়েছে। তখন আমরা বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছি। এসব প্রমাণ আছে আমার কাছে। তিনি বলেন, আমারো তো জীবনের ভয় আছে। আমি বলবো যে উচ্ছেদ অভিযান চলছে সেটা চলতে থাকুক।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি মার্কেট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা দুই চার পাঁচ লাখ করে টাকা নিয়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ দোকানের ভাড়া কাটার জন্য প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছি। আর দেলোয়ার হোসেন তার অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তরা ব্যাংক ফুলবাড়ীয়া শাখার মাধ্যমে সাবেক মেয়রকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এসব টাকা দিয়েছেন। এখন ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবে। এর একটা সুষ্ঠু বিহিত হওয়া প্রয়োজন। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশনা ও সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তেই টাকা নিয়ে বৈধতা ঘোষণা করা হয়েছিল অনেক দোকানকে। ঢালাওভাবে অভিযান পরিচালনা ঠিক নয়। নিজে কোনো টাকা নেননি দাবি করে সাঈদ খোকন বলেন, টাকা নেয়া হয়ে থাকলে সেটা সিটি করপোরেশনের জন্য নেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন রশিদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017-2024 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com