সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন

প্রধান পৃষ্ঠপোষকঃ মোহাম্মদ রফিকুল আমীন
উপদেষ্টা সম্পাদকঃ জহির উদ্দিন স্বপন
সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতিঃ এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু
প্রধান সম্পাদকঃ লায়ন এস দিদার সরদার
সম্পাদকঃ কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদকঃ মাসুদ রানা পলাশ
সহকারী সম্পাদকঃ লায়ন এসএম জুলফিকার
সংবাদ শিরোনাম :
বরিশালে সাংগঠনিক সফরে আসছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: মাহমুদা মিতু দুই দিনের সফরে আজ বরিশাল আসছেন অতিথি গ্রুপ অব কোম্পানির এমডি লায়ন সাইফুল ইসলাম সোহেল  পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার যুব মহিলা লীগ নেত্রী জুথি গ্রেফতার গৌরনদীতে তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা প্রশাসনকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাওয়ায় গৌরনদীতে আনন্দ মিছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জসহ চারটি থানা এবং উপজেলায় নাগরিক কমিটি গঠন   আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ শান্তিতে থাকবে, এটা অনেকেরই ভালো লাগেনা-এম. জহির উদ্দিন স্বপন তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর
স্কুল খোলার সময় কখন?

স্কুল খোলার সময় কখন?

দেখতে দেখতে আমরা কাটিয়েছি প্রায় নয় মাস। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ পড়ে আছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী গতি অব্যাহত। দ্বিমত করার সুযোগ নেই, করোনা পরিস্থিতির অন্যতম বড় শিকার আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা। মূল রাজধানীতেও এমন এলাকা আছে, যেখানে স্মার্টফোন অলীক স্বপ্ন। গ্রামাঞ্চলে নেটসংযোগ আকাশ-কুসুম ভাবনা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। শিশুর শিক্ষা লাভের পথে প্রত্যেকটি সোপান ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, তা সন্দেহের চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ভীত একবার শক্ত হয়ে গেলে উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা নিজে থেকে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে নিতে পারে। কিন্তু বেড়ে ওঠার সময়টা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। চারাগাছ একবার শুকিয়ে গেলে তার ভবিষ্যৎ ফুলে-ফলে ভরে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। তাই দেশের জনসংখ্যার হিসাবে এই বিশাল মানবসম্পদের এত বড় অপচয় সমাজের অনেক বড় ক্ষতি।

ভারতের উত্তর কাশীতে একটি প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শনে গেলে একজন পরিদর্শক দেখতে পান, প্রধান শিক্ষকের টেবিলে একটি পাখির বাসা রাখা হয়েছে। তিনি কিছুটা অবাক হয়েই প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করেন, পাখির বাসাটি তার টেবিলে রাখা কেন? প্রধান শিক্ষক জানান, ওটা ছাত্রছাত্রীদের একটি প্রজেক্ট-ওয়ার্কের নমুনা। স্কুল চত্বরের গাছে একটি পাখিকে বাসা বাঁধতে দেখে প্রধান শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের বাসাটির ওপর নজর রাখা এবং প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে নোট করে রাখার কাজ দেন। শর্ত ছিল বাসাটিকে ছোঁয়া বা পাখিদের বিরক্ত করা যাবে না। প্রবল উৎসাহে ছাত্রছাত্রীরা সেই প্রজেক্ট সুসম্পন্ন করেছে এবং এমন অনেক কিছু জানতে পেরেছে, যা কোনো পরিবেশ-পরিচিতির বই তাদের শেখাতে পারত না।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার সুন্দরবনের একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেখিয়েছিলেন আর এক অভিনব বাস্তব শিক্ষা। আগের রাতের কালবৈশাখী ঝড়ে তার স্কুলের বাগানের লেবুগাছের ডাল থেকে খসে পড়েছিল একটি বুলবুলির বাসা। ছোট্ট তিনটি ছানাকে দুহাতের আজলায় ভরে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেন প্রধান শিক্ষক। দুজন ছাত্র তখন গাছে চড়ে বাসাটিকে পুনরায় স্থাপনের কাজে ব্যস্ত ছিল। দিনাজপুরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রতিদিন স্কুলে গিয়েছেন এবং তার তিন কিলোমিটার দূরের বাড়িতে ফিরেছেন রাত দশটার পর। স্কুলের নানা কাজের পাশাপাশি তিনি তার মোটরবাইকে চড়ে ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে হাজির হয়েছেন। হাঁক দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তারা পড়াশোনা করছে কিনা। মসজিদের নামাজ ঘরে, মন্দিরের চাতালে, ক্লাবের মাঠে- যেখানে সম্ভব সেখানে পড়াতে বসে গিয়েছেন তিনি। নিজে মাস্ক পরে, ছাত্রছাত্রীদের মাস্ক পরিয়ে যতদূর সম্ভব তিনি পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন সীমিত পরিসরে। ব্যাগে একটি ছাপানো ব্যানার ভাঁজ করে রেখে দিতেন। তাতে লেখা ছিল- ‘ভ্রাম্যমাণ পাঠশালা’। এর বাইরেও স্কুলের অনেক শিক্ষক অনলাইন ক্লাস নিয়েছেন।

যাদের স্মার্টফোন আছে, তারা তাদের ক্লাস গ্রহণ করেছে। আমার কাছে এসব নায়কশিক্ষকদের পুরো হিসাব নেই। থাকলে ভালো হতো। অন্তত তাদের সঙ্গে দেশবাসীর বিশেষত শিক্ষক সমাজের অবশিষ্টাংশের পরিচয় করিয়ে দিতে পারতাম। তাহলে অলস, ফাঁকিবাজ, দায়িত্ব-জ্ঞানহীন অপবাদগুলো থেকে তাদের মুক্তিলাভ হলেও হতে পারত।

ইতোমধ্যে অনেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষত প্রাইমারি এবং হাই স্কুলগুলোর জন্য এখন একটি শিক্ষা-মানচিত্র প্রস্তুত করা অতি প্রয়োজনীয়। এই মানচিত্র আমাদের স্পষ্ট ধারণা দিতে পারবে- কারা অনলাইন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, কারা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যারা অনলাইনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত, বিশেষ করে তাদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়ার চিন্তা আসতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। স্কুলকে চালু করে দিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুতিনদিন হতে পারে শুরুটা। বিশেষ করে অনলাইনে যাদের সুযোগ নেই, তারা আসতে পারে স্কুলে। অনলাইন এবং সরাসরি এই দুই পদ্ধতিতেই চলতে পারে স্কুলের কার্যক্রম।

স্যানিটাইজেশন, মাস্ক এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ কঠিন হাতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। জানুয়ারি ২০২১ থেকেই শুরু হতে পারে এই স্কুল কার্যক্রম। স্কুল মানে শুধু ক্লাসে বসে পড়াশোনা নয়; স্কুল মানে ভাগ করে টিফিন খাওয়া, ভাগাভাগি করে গল্পের বই পড়া, হাতে হাত রেখে চলা। এই নতুন পর্যায়ে শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্কের সমীকরণ নিয়েও নতুন করে ভাবা প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে পেরেন্ট-টিচার মিটিং আদৌ হয় না। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নতুন করে ভাবতে হবে। নিশ্চিত নির্দেশিকা আসতে হবে তাদের কাছ থেকে।

পেরেন্ট-টিচার সম্পর্কটি হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দায়িত্বের অংশ হিসেবে। এরা কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। পারস্পর নির্ভরতা হতে হবে অমোঘ শর্ত। শিক্ষককে মনে রাখতে হবে- তিনি যাকে শিখাচ্ছেন, তার শেকড় বাড়িতে। তাকে সমৃদ্ধ না করতে পারলে চলবে না। আর সমৃদ্ধ করার জন্য ছাত্রছাত্রীর পরিবারের সহযোগিতা ও অবদানও প্রয়োজন। শিক্ষককে মনে রাখতে হবে, অভিভাবকেরও নিজের একটি কর্মক্ষেত্র আছে। আছে একটি ছোট্ট জগত- যেখানে তিনি শ্রদ্ধার জায়গায় আসীন। অভিভাবককেও মনে রাখতে হবে, তাকে সহমর্মী হতে হবে। তার সন্তানকে ঘিরে তার নিজস্ব বৃত্ত এটা যেমন সত্য, আবার এ রকম অনেক বৃত্ত নিয়ে একজন শিক্ষকের সংসার। তাই আজকের এই করোনাকালীন কিংবা করোনা পরবর্তী সময়ে শিশুদের পথ দেখানোর জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকেই সদিচ্ছাসম্পন্ন এবং আরও একটু দায়বদ্ধ ও তৎপর হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সবাইকেই অনুধাবন করতে হবে- একজন শিশু যদি আগামী দিনের সহৃদয়, দায়িত্ববান, বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতাসম্পন্ন ভালো মানুষ না হতে পারে, তাহলে লিখতে, পড়তে, গুনতে বা যোগ করতে শিখে কোনো লাভ হবে না। আর এই মানুষ হওয়ার কাজটি শুধু একা শিক্ষকের ওপরই বর্তায় না, এর সঙ্গে অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতারও প্রয়োজন।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ করে রাখা যাবে না। শিশুদের স্কুল থেকে দূরে রাখা যাবে না দীর্ঘ সময় ধরে। ইতোমধ্যে অনেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। শিশুদের স্কুল থেকে দূরে রাখা হয়েছে। আর এটা করা ঠিক হবে না। স্বাস্থ্যসম্মত পন্থা বের করতে হবে- শিশুদের নিরাপদ রাখতে সবার চেষ্টা থাকতে হবে। কিন্তু স্কুল খুলে দিতে হবে। শিশুদের বিকাশ বন্ধ করে রাখা জাতির জন্য নিরাপদ কাজ হবে না। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর চীনে প্রথম আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। আমেরিকায় প্রথম সংক্রমণের খোঁজ মিলেছিল ২১ জানুয়ারি। ৩০ জানুয়ারি ভারতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ইউরোপে প্রথম মৃত্যু ঘটে। ১ মার্চের মধ্যে সারাবিশ্বে সংক্রমণ ছাড়িয়ে যায় এক লাখের ওপর। তারপর আর পিছনে তাকায়নি করোনা। হু হু করে সংক্রমিত করেছে সারাবিশ্বকে। বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিশুদের হাতে বই-কলম আর রাখা যায়নি। পড়াশোনা থেকে, শিক্ষার বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে এই শিশুরা। কোনো কোনো শিক্ষক নিজ উদ্যোগে কোথাও কোথাও ব্যতিক্রমী কার্যক্রম করতে পারলেও অধিকাংশ শিশুই আজ পড়াশোনা থেকে দূরে সরে আছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। শিশুদের স্কুলমুখী করতে না পারলে ভবিষ্যৎ হবে সংকটাপন্ন । তাই স্কুল কীভাবে খোলা যায় তা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।

মেজর (অব) সুধীর সাহা : কলাম লেখক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017-2024 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com