নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অনিয়ম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসার মোরশেদুল হাসান সোহেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার (১৬ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের স্বাক্ষরে এ বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়। সোহেলের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০১৮ সালে করা বিভাগীয় মামলায় তদন্ত শেষে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
গত ১১ আগস্ট তার গ্রেফতারের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, তিনি হাইকোর্টে বেঞ্চ অফিসারের দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে কখনও ব্যারিস্টার, কখনও বিচারক বলে পরিচয় দিতেন। গত ৬ আগস্ট এক নারীসহ তাকে রাজধানী মিরপুরের পীরেরবাগের ঝিলপাড়ের তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তার দুটি বিলাসবহুল গাড়িও জব্দ করে পুলিশ।
সোহেল এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। মাত্র একদিন কারাগারে থেকে পরদিন জামিনে মুক্তি পান। এবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতারের সূত্রে ফের গ্রেফতার হয়েছেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, গত ৬ আগস্ট তার থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান অভিযান চালিয়ে রানা ম-ল নামের এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। এ সময় তার কাছে ১০০ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানান, এই ইয়াবা তিনি মিরপুর এলাকার ‘মাদক সম্রাট’ সোহেলের কাছ থেকে কিনে এনেছেন। তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে পরে যাত্রাবাড়ী থানা ও মিরপুর থানার পুলিশ ওই দিনই অভিযান চালায় মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ৩১৫ নম্বর বাড়ির (তাসমিম বিজয় অ্যাপার্টমেন্ট) চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে। সেখানে গিয়ে ফাতেমা ইসলাম চাঁদনী নামের আরেক খুচরা মাদক বিক্রেতাকে পায় পুলিশ। তার কাছ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আর সোহেলের কাছে পাওয়া যায় ৬০০ পিস ইয়াবা। পরে দুজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘মোরশেদুল হাসান সোহেল নামের একজন বেঞ্চ অফিসার, সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি ওই শাখায় বেঞ্চ অফিসার হিসেবে অ্যাটাচ আছেন।’
গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এলো, সোহেল মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িয়েছেন কয়েক বছর আগেই। গত বছরও তাকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ; কিন্তু একদিনের বেশি তাকে আটকে রাখা যায়নি। এবার তাকে গ্রেফতারের পর মিরপুর থানার পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে; কিন্তু রিমান্ড মঞ্জুর হয়নি। পুলিশ বলছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় তার সম্পদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিতে পারেনি তারা। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা বিক্রির টাকায় তিনি দুটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। এর মধ্যে গত কোরবানির ঈদের আগে ৯৫ লাখ টাকায় একটি গাড়ি কিনেছেন, যেটির ওপর এখনও বসেনি নম্বর প্লেট। পুলিশের ধারণা, তার বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকতে পারে।
সোহেলের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সাহেবগঞ্জ এলাকায়। তার বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তিনি এখন বৃদ্ধ। ছেলের অন্যায় দেখেও কিছু করতে পারছেন না বলে পুলিশকে জানান তিনি।
Leave a Reply