দখিনের খবর ডেস্ক ॥ ভোলার চরফ্যাশন সদর বাজারসহ বিভিন্নি হাটবাজারে সামুদ্রিক রূপচাঁদা নামে নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত পিরানহা মাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। দাম কম হওয়ায় এ মাছ নি¤œ আয়ের মানুষের কাছে এরইমধ্যে চাহিদা সম্পন্ন হয়ে উঠেছে। অনেকের পছন্দের তালিকায় এখন এ মাছ। চরফ্যাশন মৎস্য ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, এ মাছের চাহিদার ফলে আমরা মাছ বিক্রি করছি। নিষিদ্ধ ও বিষাক্ত কিনা জানি না।
চরফ্যাশন মেডিকেল অফিসার ডা. শাহাদাৎ হোসেন জুয়েল বলেন, ৩০টি মাছ একটি হরিণকে খেতে সময় নেয় মাত্র ১ ঘণ্টা। এ মাছের এমন কিছু বিষক্রিয়া আছে যা আমাদের পাকস্থলি বিনষ্ট করার প্রধান হাতিয়ার। এক বোতল অ্যালকোহলের চাইতেও এ মাছের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি অংশ বেশি ক্ষতিকর। পিরানহা মাছের চর্বি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এ মাছে থাকা ফসফেট আমাদের মূত্র প্রদাহ সৃষ্টি করে, নববিবাহিত নারীর বন্ধ্যত্ব সৃষ্টির অন্যতম কারণ। প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও রক্ত বের করে দেয়। পিরানহা মাছ খেলে মানসিক সমস্যাসহ মানুষের দেহে নানান রোগের সৃষ্টি করে। মেডিকেল অফিসার বলেন, আমাদের এলাকায় মূলত রেড বেলি পিরানহা মাছ বেশি পাওয়া যায়। একটি অসাধু চক্র এ মাছ আমাদের এলাকায় আনার পেছনে দায়ী। বাংলাদেশ সরকার এ মাছকে ২০০৮ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমরা শিগগিরই অভিযানে নামবো। পিরানহা মাছ সাধারণত দুই প্রকার। ব্ল্যাক বেলি পিরানহা (কালো পেটওয়ালা) ও রেড বেলি পিরানহা (লাল পেটওয়ালা)। এ মাছের প্রধান আবাসস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, ব্রাজিলসহ কয়েকটা দেশের নদীতে। সারা বিশ্বে মানুষখেকো মাছ হিসেবে পরিচিত পিরানহা মাছের মানুষের প্রথম আঘাতের স্থান পায়ের আঙ্গুল। তিন ধরনের শব্দ উৎপন্ন করার মাধ্যমে এদের নিজস্ব একটা ভাষা আছে। জলাশয় বা নদীর অন্যান্য মাছ সমূলে ধ্বংস করে। ক্ষুধার্ত থাকার সময় এক পিরানহা আরেক পিরানহা মাছকেও খেয়ে থাকে। ধারালো দাঁত আর প্রায় মানুষের মতো জিহ্বা থাকার কারণে সে তার লক্ষ্যবস্তুতে শরীরের ১০ গুণ বেশি শক্তিতে কামড় দিতে সক্ষম।
বাঁধ ভেঙে ভোলায় ১২ গ্রাম প্লাবিত, মানুষের দুর্ভোগ চরমে
ভোলা প্রতিবেদক ॥ সাগরে নি¤œ চাপের প্রভাব এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা এলাকায় মেঘনা নদীর বাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও অন্তত ২০ গ্রাম জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। এতে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। প্লাবিত এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আজ শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক দুর্গতদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। মেঘনা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তীব্র স্রোতে বৃহস্পতিবার ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের মুরাদছবুল্লাহ এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে। স্থানীয় লোকজন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষনিক চেষ্টা করলেও তীব্র স্রোতের কারণে বাঁধ মেরামত করতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে গত দুই দিনে বাগার হাওলা, গুপ্তমুন্সি, রামদাসপুর, কালাপুরসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ জোয়ার ভাটার পানিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জোয়ারের সময় কোন কোন ঘরে এক বুক পানি হয়। এতে ওই এলাকার প্রায় ৪ হাজার পরিবারের রান্না বন্ধ রয়েছে। খেয়ে না খেয়ে তার চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ওই এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এদিকে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগে বালি ভরে পাইলিং করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে জোয়ারে চাপে তা ভাসিয়ে নেয়। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দ্রুত সংস্কার সম্ভব না হওয়ায় তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, পানির চাপ কমলে দুই এক দিনের মধ্যে অনুকূল পরিবেশ পাওয়া গেলে বাঁধ সংস্কার করা হবে। আজ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক ইলিশার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জানান, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অপর দিকে দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা হবে এবং এই বাধ যেন আর না ভাঙে সে জন্য স্থায়ী সমাধানের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও জানান, বৈশ্বিক আবহাওয়ার কারণেই পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য জেলার সকল বাঁধ আরও এক মিটার উঁচু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
Leave a Reply