করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা হবে না। এর পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অক্টোবর ও নভেম্বর সামনে রেখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যে পাঠ পরিকল্পনা করেছে এর ভিত্তিতে প্রতিটি স্কুল ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। অতএব আমরা পিইসি পরীক্ষা নিচ্ছি না, এ বছর স্কুলগুলো বার্ষিক পরীক্ষা নেব।
বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হলে তাতে এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে, আমরা তাদের দায়িত্ব দেব। শিক্ষকরা যেভাবে প্রশ্ন করবেন সেভাবেই হবে, স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এই সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি আরও বলেন, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) তিনটি বিকল্প পাঠ পরিকল্পনা করতে বলেছিলাম। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের জন্য তিনটি পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছিল।
যেহেতু সেপ্টেম্বরে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি তাই সেপ্টেম্বরকে বিকল্প হিসেবে ধরছি না। অক্টোবর ও নভেম্বর সামনে রেখে যে পাঠ পরিকল্পনা করেছি সেটা সামনে রেখে, সেটার ভিত্তিতে প্রতিটি স্কুল ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেবে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কীভাবে স্কুল খোলা যায়, সেই নীতিমালা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে আমরা এটা জারি করব। স্কুল ফের খুললে কী কী করতে হবে সেটা ওই নীতিমালার মধ্যে বলা আছে। প্রতিটি স্কুলকে বলেছি নিজেদের মতো করে রি-ওপেনিং প্ল্যান করতে। কারণ একেক স্কুলের ছাত্রসংখ্যা একেক রকম। এসব বিবেচনায় নিয়ে তারা পরিকল্পনা করবেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একসঙ্গে বসে নেবে জানিয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেব কবে স্কুল খুলতে পারব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ারও চিন্তা করা হচ্ছে। তবে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
২০০৯ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরুর পর থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এই পরীক্ষায় বসতে হতো অন্য বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে এই পরীক্ষার আয়োজন করে আসছিল। আর এই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতেই প্রাথমিক শেষ করা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছিল। এবার কেন্দ্রীয়ভাবে এ পরীক্ষা হবে না বলে বৃত্তিও দেওয়া হবে না। গত বছরও প্রাথমিক সমাপনীর ফলের ভিত্তিতে ৮২ হাজার ৫০০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এবার ২৯ লাখ শিক্ষার্থীর পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
অভিভাবক ফোরামের অভিনন্দন
পিইসি বাতিল করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। গতকাল সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক বছর ধরে এ সংগঠন পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের জন্য বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সমাবেশসহ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। অবশেষে করোনা ভাইরাসের কারণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সরকার এ বছর পিইসি পরীক্ষা বাতিল করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। নেতৃবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, একইভাবে এ বছর জেএসসি পরীক্ষাও বাতিল করার ঘোষণা দেবে সরকার।
Leave a Reply