ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় সেই বহুল আলোচিত মামলার আসামি মো. মজনুর (৩০) বিচার শুরু হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম কামরুনাহার তার বিরুদ্ধে চার্জগঠনের আদেশের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ।
শুনানিকালে মজনুকে আদালতে সরাসরি হাজির করা হয়নি। তাকে কারাগার থেকে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত দেখানো হয়। তাকে বিচারক ভার্চ্যুয়ালি অভিযোগ পাঠ করে শোনান। এ সময় আসামি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
মামলাটিতে গত ১৬ মার্চ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবু বক্কর সিদ্দিক ঢাকা সিএমএম আদালতে মো. মজনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সকল আদালত ছুটিতে থাকায় এ মামলারও কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
গত ৫ আগস্ট থেকে আদালতের কার্যকম শুরু হওয়ার পর সিএমএম আদালত চার্জশিট ওই ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য পাঠালে বিচারের তারিখ ঠিক করে ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় চলতি বছর ৯ জানুয়ারি আসামি মজনুর সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড শেষে গত ১৬ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেন এবং ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে আছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, গত ৫ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ফুটপাত দিয়ে ৪০/৫০ গজ সামনে আর্মি গলফ ক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে ভুক্তভোগী (২১) পৌঁছালে আসামি মজনু পেছন থেকে ধরে ফুটপাতে ফেলে গলা চেপে ধরে। ভুক্তভোগী চিৎকার করতে গেলে আসামি তাকে কিল-ঘুষি মেরে ভয়ভীতি দেখালে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এরপর মজনু ভুক্তভোগীকে অচেতন অবস্থায়ই ধর্ষণ করেন। মজনু অভ্যাসগতভাবে একজন ধর্ষণকারী। তিনি প্রতিবন্ধী, পাগল, ভ্রাম্যমাণ মহিলার সম্মতি ব্যতীত এই অনৈতিক কাজ করে আসছিলেন। তিনি ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় থাকেন। তার স্থায়ী কোনো বসবাসের জায়গা নেই।
এর আগে র্যাব-১, উত্তরা এর সিপিসি-১ এর চৌকশ দল গত ৮ জানুয়ারি মজনুকে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব পাশের পাকা রাস্তার ওপর থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তি মতে ভিকটিমের ব্যাগ, মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাংক এবং ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত একটি জিন্সের প্যান্ট ও একটি জ্যাকেট উদ্ধার পূর্বক জব্দ করে।
তারও আগে, গত ৬ জানুয়ারি ভুক্তভোগীর অধ্যক্ষ বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী তার বড় মেয়ে (২১)। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি থাকতেন রোকেয়া হলে। গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে রওনা হন। রাত ৭টার দিকে বাসটি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন কুর্মিটোলা বাস স্ট্যান্ডে থামে। তিনি বাস থেকে নেমে ফুটপাথ দিয়ে ৪০/৫০ গজ শেওড়ার দিকে হেঁটে আর্মি গলফক্লাব মাঠ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে পেছন দিক থেকে অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ বছর বয়সী একজন তাকে আক্রমণ করেন এবং পরে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করেন।
Leave a Reply