নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নাজিরপুর থানার ওসি ও শাখারীকাঠী ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ মদদে স্থানীয় শহর আলী গাজীর পুত্র নজরুল ও বাবুল গাজীর ভোগদখলীয় সাব কবালা দলিলকৃত সম্পত্তি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে বালু ভরাট করে দখল করে নেয় সাহাদত হোসেন শেখের পুত্র ভূমিদস্যু কামাল ও জামাল শেখ। নির্ভরযোগ্য একাধীক সুত্র জানায়, বিগত ১৮ এপ্রিল ড্রেজার বসিয়ে দিনের বেলায় বিরোধীয় ঐ সম্পত্তি বালু ভরাট শুরু করে ভূমিদস্যু কামাল ও জামাল শেখ। ঐদিনই থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উল্টো কামাল ও জামাল শেখকে বালু ভরাট করে সম্পত্তি দখলে সহায়তা করেন। ফলে নির্বঘেœ গত ২ দিন ধরে ঐ সম্পত্তিতে ভূমিদস্যুরা বালু ভরাট করে নজরুল গাজী গংদের সম্পত্তি জবর দখল করে। গতকাল শনিবার ঐ সম্পত্তিতে থাকা গছ কেটে ফেলার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে ওসি হাবিবুর রহমানের কাছে শুক্রবার বিকেলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসপি স্যারের কোন নির্দেশনা আমি পাই নাই। আর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখলের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পুরো বিষয়টিই তিনি রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যান।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার শাখারীকাঠী ইউনিয়নের হোগলাবুনিয়া গ্রামে বুড়িখালী মৌজার জেএল-২৮, ২৮৩ নং খতিয়ানের এসএ দাগ নং ৩১৬৮। জমির পরিমান ২০ শতাংশ। স্বাধীনের পর থেকেই এই সম্পত্তি স্থানীয় শহর আলী গাজী ও তার পরিবার ভোগ দখল করে আসছে। অদ্যাবধি তরা ঐ সম্পত্তি ভোখ দখল করছে। স্থানীয় সাহাদত হোসেন শেখের পুত্র ভূমিদস্যু কামাল ও জামাল শেখের ললুপ দৃষ্টি পরে এই সম্পত্তির উপর। তারা দীর্ঘদিন ধরে গাজী পরিবারের সম্পত্তি দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ভূক্তভোগী নজরুল গাজী জানায়, জমি দখল করতে বিভিন্ন সময় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বাড়ীতে এসে ভয়ভীতি দেখায়। এরপর নিরুপায় হয়ে বাবুল গাজীর ছেলে রবিউল ইসলাম পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে গত ২৫/০৩/২০১৮ ইং তারিখ ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য একটি আবেদন করেন। ঐদিনই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির নাজিরপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমানকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। আবেদনকারী তার আবেদনে উল্লেখ করেন, উল্লেখিত সম্পত্তিতে ঘর উত্তোলন করতে গেলে কামাল ও জামাল শেখ গংরা বাঁধা প্রদান করেন। দলবল নিয়ে গাছপালা কেটে নিতে চায়। সাব কবালা জমিতে ঘর উত্তোলন করতে চাইলে কামাল শেখ গংরা গাজী পরিবারের লোকজনকে মারধর করার হুমকী দেয়। যেভাবে হোক তারা সম্পত্তি দখলে নিতে পায়তারা চালায়। বাবুল গাজীর পুত্র রবিউল গাজী তার আবেদনে উল্লেখ করেন, খবর পেয়ে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ীতে আসলে তাকেও তারা মারধর করতে চায়। এরপর তিনি পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। বাবুল গাজী জানায়, আমার ছেলে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছে এই খবর পেয়ে কামাল ও জামাল শেখরা আমাদের উপর আরও ক্ষীপ্ত হয়। আমাদের মেরে ফেলারও হুমকী দেয়। তিনি বলেন, আমার ছেলে রবিউল নাজিরপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে তাকে ওসি বলে ‘ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া ভাল না’। ওসি পুলিশ সুপারের নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো ধমক দিয়ে আমার ছেলে রবিউলকে পাঠিয়ে দেয়। ভূক্তভোগী নজরুল গাজী জানায়, নাজিরপুর থানায় আমরা প্রতিকার না পেয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হই। আমি পিরোজপুর বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এসএ ৩১৬৮ নং দাগের উপর ১৪৪/১৪৫ ফৌঃ বাঃ বিঃ ধারায় গত ১১/০৪/২০১৮ ইং তারিখ মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি গ্রহন করে ওসি নাজিরপুর থানাকে নালিশী ভূমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু এবারও আদালতের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওসি হাবিবুর রহমান কামাল ও জামাল শেখ গংদের জমি দখল করতে সহায়তা করার অভিযোগ করেন। কামাল ও জামাল শেখ গংদের দ্বারা ওসি হাবিবুর রহমান প্রভাবিত হয়ে তাদের পক্ষালম্বন করায় গত ১৮/০৪/২০১৮ ইং তারিখ ড্রেজার বসিয়ে বিরোধীয় ঐ সম্পত্তি বালু ভরাট করে দখলে নিতে পায়তারা চালায়। আর এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ নামে সাইনবোর্ড। বাবুল গাজী জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান গাউস ও ওসি হাবিবুর রহমান ভূমিদস্যু কামাল ও জামাল শেখ গংরা যোগসাজস করে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ নামক সাইনবোর্ড লাগিয়ে আমাদের সম্পত্তি বালু ভরাট করে জবর দখল করার চেষ্টা চালায়। আমরা যাতে বাঁধা প্রদান করতে না পারি এজন্য ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন বাবুল গাজী। এব্যাপারে কামাল শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে শেল্টার দিচ্ছে নাজিরপুর থানার ওসি হাবিবুর রহমান ও ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান গাউস। তাদের পরামর্শেই আমি ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখল করার চেষ্টা করছি। ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ এর নামে জমি দান করেছেন কিনা জানতে চাইলে কামাল শেখ বলে আমি এখনও জমির মালিক হতে পারি নাই। কথা বলার এক পর্যায় তার পাশে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান গাউসকে ফোনটি ধরিয়ে দিয়ে বলে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলুন। এরপর চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পরিষদ’ এর নামে কামাল শেখরা কোন সম্পত্তি হস্তান্তর কিংবা দান করেন নাই। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালু ভরাট শেষ হইলে সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলা হবে। আপনি কোন দলের মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আমি সব দলের। আর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি আ’লীগের প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এরপর জমি দখল করে নিতে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করলেন এটা কি সঠিক কাজ করেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। একপর্যায় সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোন কেটে দেয়। ওসি হাবিবুর রহমান জানান, পুলিশ সুপার কিংবা আদালতের কোন নির্দেশনা আমার জানা নাই। বঙ্গবন্ধুর নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল শনিবার বিরোধীয় ঐ সম্পত্তিতে থাকা বেশ কিছু মুল্যবান গাছ কেটে ফেলার পায়তারা করে কামাল ও জামাল শেখরা।
এব্যাপারে পিরোজপুর জেলা পরিষদের সদস্য সুলতান খান জানায়, বিরোধীয সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয়ভাবে শালিশ বৈঠকের দিন তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। বৈঠকের আগেই কামাল শেখরা বঙ্গবন্ধু পরিষদ নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখলের পায়তারা সম্পুর্ণ বে-আইনী কাজ। তিনি বলেন, এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ভাল বলতে পারবেন। আর সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়টি আমি দেখছি বলে জানান।
Leave a Reply