কারাগারে খালেদা জিয়া বিধিতে উল্লিখিত সুবিধার চেয়ে বেশি ভোগ করছেন বলে মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা সরকারের নেই। গতকাল বুধবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যখন একটা আদালত কাউকে শাস্তি দেন এবং সে কারাগারে যায়, তার সাথে সাথে কারাগারের যে জেলকোড বলা হয়, সেই আইনটা প্রযোজ্য হয়ে যায়। জেলকোডে যা আছে তার চেয়ে বেশি কিন্তু উনি এখনই পাচ্ছেন। এবং সেক্ষেত্রে জেলকোডের ব্যত্যয় ঘটানোর বা আইনের ব্যত্যয় ঘটানোর কোনো কারণ এখনো উদ্ভব হয় নাই। সেজন্য আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করার ক্ষমতা সরকারের নেই। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সহকারী জজদের ৩৭তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আইনমন্ত্রী। জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের দ- নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। চার মাসের বেশি কারাবন্দি খালেদা জিয়া গত ৫ জুন কিছুক্ষণের জন্য অচেতন হয়ে পড়েন। তার ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। খালেদা জিয়াকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা। এই দাবি বিএনপির পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে অনেক দিন ধরে। তবে কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চায় সরকার। ওই দিন তার কী হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে শারীরিক পরীক্ষার জন্য এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে খালেদাকে আনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে বিএনপি নেত্রীর আপত্তিতে তা আর হয়নি। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে না এলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তাতে নারাজ বিএনপি নেতারা বলছেন, অন্য কোথাও নয় ‘রোগীর আস্থা বিবেচনায় নিয়ে’ তাদের নেত্রীকে ইউনাইটেড হাসপাতালেই ভর্তি করতে হবে। বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে আইনি বাধা আছে কি-না, এমন প্রশ্নের উত্তরে গতকাল বুধবার কথা কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আপিল বিভাগের বিচারক ‘সঙ্কট’ এবং নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আপিল বিভাগে বিচারক ‘সঙ্কট’ আছে বলে তিনি মনে করেন না। তবে ‘শিগগিরই’ বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। আপিল বিভাগে এর আগে সাতজন বিচারক ছিল, বহু বছর পাঁচজন বিচারক দিয়ে আপিল বিভাগ চলেছে। আপনারা বলতে পারেন, তার থেকে এখন মামলা বেড়েছে। সেটা কথাটা ঠিক। বিজ্ঞ বিচারপতি যারা আছেন, তারা বহুদিন যাবত চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মামলার সংখ্যা কিন্তু কমে আসছে। সেক্ষেত্রে একেবারে সঙ্কট আছে, সেটায় আমি দ্বিমত পোষণ করি। কিন্তু তারপরেও আমার মনে হয়, আপিল বিভাগে খুব শিগগিরই বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে ও সহজে’ বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সহকারী জজদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, আপনাদের বিচারক হয়ে ওঠার পেছনে এদেশের গরীব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অবদান রয়েছে। আর আপনাদের কর্মক্ষেত্রই হল বিচারপ্রার্থী এসব মানুষের শেষ ভরসাস্থল। তাই বিচারিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এসব সাধারণ জনগণ বিচার বিভাগকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন কিংবা তাদের চোখে ন্যায়বিচারের ধারণাই বা কেমন, সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে আপনাদের কাজ করতে হবে। মোট কথা বিচারপ্রার্থী জনগণের অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে ও সহজে ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণে আপনাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। নিছক গতানুগতিক বা দায়সারা ভাব পরিহার করে কর্মক্ষেত্রে আপনাদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সহকারী জজদের উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনাদের বিন্দুমাত্র লোভ কিংবা অসততার কারণে বিচার বিভাগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে যাতে কোনো হতাশা বা বিরূপ ধারণার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে চার মাস মেয়াদী ওই প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও বক্তব্য দেন।
Leave a Reply