স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোট গ্রহনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের সহিংসতা ততই বাড়ছে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে। গত কয়েক দিন ধরেই প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর হামলা ও মারধর করছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয় ওই দুই আসনের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারনা ও বাসা বাড়িতে চালানো হচ্ছে হামলা। পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে বরিশাল জেলার ৬ আসনের মধ্যে এ দুই আসন উত্তপ্ত ও আলোচিত দুটি নির্বাচনী আসনে পরিনত হয়েছে। তথ্য সুত্রে চলতি সপ্তাহে এ দুই আসনে বিএনপির অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছে। একাধিকবার এ দুই আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারনা চালাতে পারছে না। তারপরও নির্বাচন কমিশন তথা প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে তাদের কোন সহযোগীতা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে বরিশাল-১ আসনের গৌরনদী উপজেলার বিএনপি মনোণীত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাসভবনে গিয়ে রাতভর হামলা ও ব্যাপক ভাংচুর করে এবং তাদের মারধর করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই দিন সন্ধ্যায় বরিশাল-২ আসনের উজিরপুরে বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে আ’লীগ নেতাকর্মীরা। এর আগে বরিশাল-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর গাড়িবহরে হামলা চালায় আ’লীগ সন্ত্রাসীরা। সোমবার দুপুর পৌঁনে ১টার দিকে ওই আসনের উজিরপুর উপজেলার ডাবেরকূল বাজার সংলগ্ন চৌরাস্তা এলাকায় হামলার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধের চেস্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার দুপুর ২টার দিকে ওই আসনের বিএনপি প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুু তিনটি মাইক্রোবাস ও ২০/২৫টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তার নির্বাচনী কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে একদল শ্বসস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায়। সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু অভিযোগ করে বলেন, সোমবার বিকালে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে বরাকোঠা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: ফিরোজের বাড়িতে পূর্বনির্ধারিত উঠান বৈঠক কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ডাবেরকুল বাজার চৌরাস্তায় পৌঁছলে বরাকোঠা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মো: শহিদুল ইসলাম মৃধার (৪০) নেতৃত্বে ছাত্র ও যুবলীগের ৫০/৬০ জন চিহ্নিত ক্যাডাররা তার গাড়িবহরে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তার গাড়িসহ ৩টি মাইক্রোবাস এবং ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। হামলায় বড়াকোঠা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন, ছাত্রদলকর্মী হানিফ মল্লিক, তাইজুল ইসলাম, বিএনপি কর্মী রনি সরদার, মুন্না হাওলাদার, নিয়াজ খান, জাকির হোসেন, আরিফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেনসহ বিএনপি’র ২০ জনেরও বেশি নেতাকর্মী আহত হয় বলে দাবি করেন তিনি। গুরুতর আহত সাত জনকে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিসহ অন্যান্যদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করা হয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগ কর্মীরা সকাল ১১টায় ওই এলাকায় তার দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করে বলে তিনি জানান। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, বিএনপি প্রার্থীর ওপর হামলার কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে প্রতিপক্ষের আতংকে প্রচারনা শুরুর কয়েক দিন পর নির্বাচনী এলাকায় যান বরিশাল ১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম জহির উদ্দিন স্বপন। তারপরও তিনিসহ তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গৌরনদীর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি। সেখানে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন প্রতিদিন রাতে আ’লীগের সন্ত্রাসীরা তার প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর বাসায় গিয়ে খুজছে আর তাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও স্বজনদের মারধর করা হচ্ছে। এমনকি দিন দুপুরেও পথে ঘাটে যেখানেই তার কর্মী সমর্থকদের পাচ্ছে সেখানে বসেই তাদের উপর হামলা ও মারধর করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গৌরনদী কলেজের সাবেক ভিপি পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর হমানন মুকুল. সাবেক সেক্রেটারি জহির সাজ্জাদ হান্নান. সাবেক যুবদলে কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য রফিকুল ইসলাম কাজল. আগৈঝাড়া বিএনপির নেতা সরোয়ার মিয়া. বশির আহম্মেদ পান্না মোল্ল¬া. সাবেক কমিশনার ফরিদ মিয়া. সাবেক জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু, সাবেক ভিপি জাকির হোসেন রাজাসহ বেশ কয়েকজন নেতাদের বাড়ীতে রাতের আধাঁরে কাপুরুষের মত হামলা চালিয়েছেন। এসময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর কর ও তান্ডলিলা চালায়। তাদের তান্ডবে গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরে। বাড়ীঘরের নারী-পুরুষ শিশু সন্তানদের নিয়ে আত্মরক্ষায় দিগবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ততই তাদের তান্ডব লীলা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক কথায় নির্বাচনী এলাকায় পথসভা করা তো দূরের কথা হ্যান্ড বিল লিফলেট বিতরনেরও সুযোগ বা পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। তিনি থানায় জিডি ও সব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন তবে পুলিশের পক্ষ থেকে পদক্ষেপের কিছু দেখেন নি।