বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “বরিশালে সেচ সঙ্কটে ৩৭টি বোরো ব্লকের জমি তিন বছর অনাবাদি” থাকার খবর সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের মাধ্যমে জানতে পেরে সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অবশেষে তারা প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ খাল খননের জন্য বৃহত একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। সেমতে অতিসম্প্রতি “৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়)” প্রকল্পের আওতায় খাল খনন কাজ শুরু করা হয়। শনিবার সকালে পাউবো’র অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলার পালরদী নদীর সংযোগস্থল আমানতগঞ্জ খালের মুখ থেকে ভুরঘাটা হয়ে গৌরনদীর মেদাকুল ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত শশিকর পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার খাল খননের কাজ শুরু করা হয়। ছয় কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে খাল পুনঃখননের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গত এক মাস ধরে মাদারীপুর জেলার প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার মোঃ সাহাবুদ্দিন মোল্লার অধীনে খালের বিভিন্ন অংশে খনন কাজ চলমান রয়েছে। সরেজমিনে ভুরঘাটা এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ কামাল ফকির বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালের পানির ওপর প্রায় দু’শতাধিক বোরো ব্লকের হাজার-হাজার হেক্টর জমি নির্ভরশীল। তিনি আরও বলেন, খাল কাটার পর থেকে কোনদিনই পুনঃখনন করা হয়নি। ফলে একসময়ের খরাস্রোতা খালটি পলিজমে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পানির অভাবে বোরো ব্লকগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল এসব ব্লকের আওতাধীন কয়েক হাজার চাষী পরিবার চরম খাদ্য সংকটে পরেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান সরকারের মহতি উদ্যোগে খালটি পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যতটুকু খাল পুনঃখনন করা হয়েছে তাতেই এখন এলাকাবাসী মরা খালে যৌবণ ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছেন। আমানতগঞ্জ থেকে মেদাকুল ভায়া ভুরঘাটার ১০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের অংশে মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে ক্রয় করে নেয়া সাব ঠিকাদার এইচএম মহসিন বলেন, খালের ভুরঘাটা ব্রিজের পশ্চিম অংশে ভুরঘাটা, বাদুরতলা, সালথা মৌজার প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশে খাল খনন করা যাচ্ছেনা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই অংশে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের রিভার সাইড ও কান্ট্রি সাইডে সমিতি কর্তৃক বনায়ন করা হয়েছে। যেকারণে গাছের জন্য ওই অংশে খনন কাজে ব্যবহৃত এস্কাভেটর ব্যবহার ও খালের পাড়ে খননকৃত মাটিও রাখা যাচ্ছেনা। ফলে একমাত্র গাছের জন্য ওই অংশে খাল খনন কাজ বন্ধ হয়ে আছে। পাউবো’র বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর গত ৩ জানুয়ারি মাদারীপুর পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহার দেয়া একটি অফিসিয়াল পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, খাল পুনঃখননের পর উল্লিখিত অংশে বৃক্ষরোপন করা হবে, তাই জনগুরুত্বপূর্ণ খাল পুনঃখননের জন্য গাছ অপসারন অতীব জরুরি। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠির আলোকে পাউবো’র বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ গত ৭ জানুয়ারি অপর একটি পত্রে আড়াই কিলোমিটার অংশের বন্ধ হয়ে যাওয়া খাল পুনঃখননের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ছোট ছোট গাছগুলো অপসারনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে অফিসিয়ালভাবে চিঠি প্রেরণ করেন। সূত্রমতে, বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চরম উদাসিনতার কারণে গত দেড় মাসেও খালের পাড়ের গাছগুলো অপসারন করা হয়নি। ফলে উল্লিখিত আড়াই কিলোমিটার অংশের খাল পুনঃখননের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বন বিভাগ থেকে এসব গাছ অপসারন করে দেয়া না হলে উল্লিখিত আড়াই কিলোমিটার অংশে খাল পুনঃখনন করা সম্ভব হবেনা। পাশাপাশি বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণে খাল পুনঃখননের জন্য সরকারের নেয়া মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়া উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, যেহেতু খাল পুনঃখননের পর উল্লিখিত অংশে পুনঃরায় বৃক্ষরোপন করে দেয়া হবে, সেহেতু এখানে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কোন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের নেয়া উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জরুরি ভিত্তিত্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply