কাজী সাঈদ ॥ বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে বিএনপির একক প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মাঠে রয়েছেন মহাজোটের ৪ প্রার্থী। কোন প্রার্থী প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করা এবং এখনো পর্যন্ত মহাজোটের কোন প্রার্থী নৌকার প্রার্থীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা না করায় ভোটের মাঠে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। বরিশাল ২ আসনে তাই মহাজোটের সকল প্রার্থীর প্রতিপক্ষ সর্বজনপ্রিয় বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি ও বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। এদিকে ভোটের মাঠের প্রচার প্রচারনার উত্তাপ রূপ নিয়েছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে হামলা-মামলা ও সংঘর্ষে। গত বেশ কয়েক দিন ধরেই এখানকার বিএনপি প্রার্থীর প্রচারনা ও সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহে আলমের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা। ফলে নির্বাচনী মাঠে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে এ আসনটিতে।
জানা গেছে, বরিশাল ২ আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন দেয়া হয় কাঙ্খিত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে। আর মহাজোটের পক্ষে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দেয়া হয় শাহে আলম কে। এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীক নিয়ে রয়েছেন নায়ক সোহেল রানা, মহাজোটের জাসদ (ইনু) এ্যাড. আনিসুজ্জামান, ওয়াকার্স পার্টির হাতুরী মার্কা নিয়ে মাঠে রয়েছেন জহিরুল ইসলাম টুটুল। এদেও মধ্যে ভোটের মাঠে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে ৩ প্রার্থীর মধ্যে। এদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের শাহে আলম, ধানের শীষের সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ও লাঙ্গল প্রতিকের নায়ক সোহেল রানা।
প্রার্থী মোট ৫ জন আর প্রতিদ্বন্দীতা নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে হলেও ভোটের মাঠের হিসেব নিকেশে এগিয়ে রেখেছে বিএনপির সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। বিএনপির সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু দীর্ঘদিন এ আসনের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারনে তার অবস্থান অন্যান্য প্রার্থীর তুলনায় বেশ শক্তিশালী। আর এর বেশীরভাগ কারনও হচ্ছে মহাজোটের ৪ প্রার্থী। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারন জনতা বলছে আওয়ামী লীগের ভোট ওই ৪ প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হবে। আর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী থাকায় এ প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তিতে ওই ধরনের কোন শংকা নেই। এছাড়া এখানের সকল প্রার্থীর চেয়ে তার রয়েছে আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা। তাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে তার জয় সুনিশ্চিত। এদিকে ভোটের মাঠে মহাজোট প্রার্থী শাহে আলমের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থী সান্টুর রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। রয়েছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর অভাব, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচারনসহ তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপর প্রতিনিয়ত হামলা ও মামলার অভিযোগ। অবশ্য ইতোমধ্যেই বরিশাল জেলার ৬টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সন্ত্রসী কর্তৃক সব চেয়ে বড় ধরনের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এ আসনটিতে। গত সোমবার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে একাধিক মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়াসহ অন্তত ৪০/৫০ জন নেতাকর্মীকে মারধর করে স্থানীয় আওয়মী সন্ত্রাসীরা। এছাড়া স্থিানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, প্রতিদিনই রাতে দলীয় নেতাকর্মীসহ তাদের বাড়িঘর ও স্বজনদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে প্রকাশ্যে স্বয়ং নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর উগ্র আচারন প্রতিফলিত হয়েছে। গত বুধবার বরিশাল নগরীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় টিলিভিশনের এক সিনিয়র সাংবাদিক কে দেখে নেয়া এবং চাকুরি কেড়ে নেয়ারও প্রকাশ্যে হুমকি দেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহে আলম। যা বরিশালের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের মধ্যে ওই প্রার্থী সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে এ আসনে এক দিকে যেমন তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে তেমনি বিএনপি সমর্থীত প্রার্থীর এগিয়ে থাকাটাও সবার হিসেবের মধ্যেই রয়েছে। এব্যাপারে ধানের শীষের প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু জানান, বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রয়েছে। থানা পুলিশ কিংবা নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। তিনি বলে গত বৃহস্পতিবার সৈয়দকাঠী এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখায়। এরকম ঘটনা প্রায় প্রতিদিন প্রতি এলাকাতেই ঘটছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।