লুৎফুল হাসান রানা, কলাপাড়া ॥ করোনাভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে সরকারের নির্দেশনায় ঘরে থাকা কর্মহীন ও দিন আনে দিন খাওয়া মানুষের মাঝে সরকারের দেয়া ত্রান সামগ্রী বিতরনে দুস্থদের নিয়ে চলছে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। মহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ/ ফেইসবুকের মাধ্যমে। ত্রান সামগ্রী বিতরনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা না মেনে দুস্থদের ক্যামেরার দিকে তাক করিয়ে ৫/১০ জন মিলে ত্রান দিচ্ছেন একজনকে। একজনকে একটি সাবান, টিস্যু দিতে দেখা গেছে ১০জনকে। ছবি তোলা থেকে দুস্থদের বাদ দেয়নি সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি কিংবা জনপ্রতিনিধি কেউই। এমনকি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন’র কর্মীদের বিরুদ্ধে দুস্থ মানুষের হাতে ত্রান সামগ্রী দিয়ে ছবি তোলার পর আবার ফিরিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে কলাপাড়ায়। যদিও এনিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ল্ড কনসার্ন’র দায়িত্বশীল সূত্র বলছে তাদের ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্যের বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষরা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা সীমিত পরিসরে ৫টি ইউনিয়নে তাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত ১৫০০জন দুস্থ পরিবারকে ত্রান দিয়েছেন। শহর থেকে তৃনমূল পর্যন্ত দেখা গেছে ছবি তোলা ছাড়া ত্রান দেয়া হচ্ছেনা দুস্থদের। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে যে দুস্থদের ঘরে ত্রান পৌঁছে দেয়া যেন মুখ্য নয়, ত্রান বিতরনের ছবি তোলাই যেন মুখ্য উদ্দ্যেশ্য।
স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র ও জনসংখ্যা বিভাগের তথ্য মতে, কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করে। এদের মধ্যে শতকরা ২৪ ভাগে মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে। এদের মধ্যে প্রান্তিক জেলে, কৃষক, দিনমজুর, ঠেলা গাড়ী-ভ্যান শ্রমিক, রিক্সা শ্রমিক, অটো শ্রমিক, বাস-ট্রাক শ্রমিক, মৎস্য শ্রমিক, ধোপা, নাপিত, মুচি, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ইটভাটা শ্রমিক, স্বমিল শ্রমিক, কাঠ মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী, হেলপার, মাটি কাটা শ্রমিক, ভিক্ষুক সহ নানান পেশার অন্তত: ৫০ হাজার মানুষ রয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমন এড়াতে লাগাতার ঘরে বসে থাকায় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এসন পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ায় সরকার দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে তাদের খাদ্য সহায়তার জন্য ত্রান সামগ্রী বিতরন করছে। আর এ বিতরন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন। এছাড়াও সামাজিক সংগঠন সহ ব্যক্তি উদ্দোগেও কিছু ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হচ্ছে। ৫০ হাজার দরিদ্র মানুষের মধ্যে ২/৪ হাজার দরিদ্র মানুষ ত্রান সুবিধা পেয়েছে। এছাড়া কিছু মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত শ্রেনীর মানুষ যারা লাইনেও দাড়াতে পারছেন না আবার হাত পাততেও পারছেনা তারা পড়েছেন মহাসংকটে। খেয়ে না খেয়ে এখন সকলের একটাই জিজ্ঞাসা কবে শেষ হবে এ লক ডাউন ও কোয়ারেন্টাইন ? সকলের বিশ্বাস একটাই , আলো একদিন আসবেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ বলেন, কলাপাড়ায় দুস্থ মানুষের সহায়তার জন্য এ পর্যন্ত ১৫১ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৫২০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৯৪, ৫৬০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রান সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি সমাজিক সংগঠন এবং স্থানীয় সাংসদ সহ দু’একজন ব্যক্তি উদ্দোগে করোনা পরিস্থিতিতে দুস্থদের ত্রান সহায়তা দিয়েছে। ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দীন তালুকদার’র অভিযোগ করে বলেন, তার প্রতিপক্ষ টিসিবি’র ডিলার হওয়ায় পরিষদকে না জানিয়ে তিনি তার অনুসারীদের মাঝে টিসিবি’র পন্য সামগ্রী বিক্রী করেছেন। যাতে ইউনিয়নের সিংহভাগ দুস্থ মানুষ টিসিবি’র সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। এনজিও ওয়ার্ল্ড কনসার্ন এর স্থানীয় প্রতিনিধি মি: রাজিব বলেন, আমরা ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। যা দিয়ে নীলগঞ্জ, মহিপুর, লতাচাপলি, বালিয়াতলী ও মিঠাগঞ্জ ৫টি ইউনিয়নে আমাদের তালিকাভুক্ত ১৫০০ দুস্থ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন গুলোতে আমাদের আত্মসহায়ক দল ও ওয়ার্ড দুর্যোগ কমিটির দুস্থ সদস্যরা এ সহায়তা পেয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো: শহিদুল হক বলেন, ত্রান হাতে দিয়ে ছবি তোলার পর ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি ওয়ার্ল্ড কনসার্ন এনজিও প্রতিনিধিকে বিষয়টি ডেকে জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তাদের ত্রান বিতরনের মাষ্টার রোল দেখে তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply