নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নিজেদের উদ্যোগে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন ৬০ বছরের অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে দাফন করলেন উজিরপুর থানা পুলিশ সদস্যরা। আর করোনা আতঙ্কে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী মুসলিম ওই ব্যক্তির মরদেহের দাফনের জন্য যখন কেউ কোথাও জমি দিচ্ছিলো না, তখন সুশান্ত হালদার নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বিনাশর্তে দিলেন কবরের জমি। রোববার (২৬ এপ্রিল) সকালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় এলাকায় হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের সহযোগিতায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে পীরেরপাড় এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ধারী ৬০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয়রা। হঠাৎ করেই শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাস্তার পাশে মৃত্যু হয় তার। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা আতঙ্কে কেউ তার মরদেহের কাছে এগিয়ে যায়নি। পরে খবরটি পুলিশের কাছে পৌঁছালে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ওই মরদেহ উদ্ধার করতে যান।
তিনি জানান, মরদেহের অবস্থান থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে গাড়ি রেখে দিয়ে পায়ে হেটে যেতে হয়েছে বাকি পথটুকু। এরপর সেখানে গিয়ে যতটা সম্ভব নিরাপদ থেকে মরদেহ উদ্ধার করতে করতে রাত ১০টা পার হয়। কিন্তু ওখান থেকে মরদেহ উপজেলাতে নিয়ে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ওখানে দাফন দেয়ার মতো কেউ জায়গাও দিচ্ছিলো না। পরে স্থানীয় সুশান্ত হালদার নামে এক হিন্দু ব্যক্তি দাফনের জন্য জায়গা দিতে রাজি হন। কিন্তু রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় দাফন আর তখনই করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
জিয়াউল আহসান বলেন, পরে রোববার সকালে নিজেদের টাকায় কাফনের কাপড় কিনলাম। আর ৩ হাজার টাকায় তিনজন লোক ঠিক করলাম কবর খোঁড়ার জন্য। পাশাপাশি করোনা সংক্রান্ত মরদেহের দাফন ও জানাযার জন্য নির্ধারিত টিমকে খবর দিলাম। উজিরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর বাবুল সরদারের নেতৃত্বে ৪ জনের টিম এসে আমাদের পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় জানাযা পড়ে দাফন কাজ সম্পন্ন করে।
ওসি জানান, ৬০ বছরের ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি। মৃত্যুর খবর ও মরদেহ উদ্ধারে বিলম্ব হওয়ার কারণে করোনা ভাইরাস সনাক্তে নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি। তবে দাফন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে।
Leave a Reply