শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় গৌরনদীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে এতিমখানা ও মাদ্রাসার দরিদ্র, অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কারাবন্ধী ও রাজপথে সাহসী সৈনিকদের সম্মানে ইফতার দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায়, দখিনের খবর পত্রিকা অফিসের তালা ভেঙে কোটি টাকার লুণ্ঠিত মালামাল বাড়িওয়ালার পাঁচ তলা থেকে উদ্ধার, মামলা নিতে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা গলাচিপা উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সভাপতি হাফিজ, সম্পাদক রুবেল চোখের জলে বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী বাবুলকে চির বিদায় বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন কারামুক্ত উচ্চ আদালতে জামিন পেলেন বরিশাল মহানগর বিএনপির মীর জাহিদসহ পাঁচ নেতা তসলিম ও পিপলুর নেতৃত্বে বরিশাল জেলা উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের বরিশাল নগরীতে কালো পতাকা মিছিল হিউম্যান ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গৌরনদীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ
নিম্নমানের বিটুমিনে বেহাল সড়ক, পড়ছে লাশ হচ্ছে আর্থিক ক্ষতি

নিম্নমানের বিটুমিনে বেহাল সড়ক, পড়ছে লাশ হচ্ছে আর্থিক ক্ষতি

দখিনের খবর ডেস্ক ॥ আমদানি করা নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে নির্মাণ করা সড়কের দশা হয়ে যাচ্ছে বেহাল। আর সেই সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। এছাড়াও প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বমোট সড়ক পথের দৈর্ঘ ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯৩ কি.মি। এর মধ্যে জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২০৭ কিলোমিটার, জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৯০৬ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৪৮৩ কিলোমিটার। এসব সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিটুমিন। কিন্তু আমদানিনির্ভর বিটুমিন এমনিতেই নিম্নমানের। মরার উপর খাড়ার ঘা হয় যখন আমদানির পর সেই বিটুমিনে আবার বিভিন্নভাবে ভেজাল মিশিয়ে সড়কে ব্যবহার করা হয়। ফলে সড়কের আয়ুষ্কাল কমে যায় অর্ধেকেরও বেশি। সামান্য বৃষ্টির পানিতেই সড়ক থেকে বিটুমিন উঠে যায় বলে দাবি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সঠিকভাবে কাজ করে না। ফলে মানসম্মত সড়ক আমরা পাচ্ছি না। সড়ক নিয়ে কথা বললে অনেকে আমার ওপর ক্ষেপে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় বিশ্বের অনেক আধুনিক দেশের তুলনায় অনেক বেশি। সরকার প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের জন্য। এতো টাকা ব্যয় করার পরও আমরা মানসম্মত সড়ক পাচ্ছি না। সড়কের বেহাল চিত্র জাতির সামনে প্রকাশ পায় না। যারা দায়িত্বরত তারা সঠিকভাবে কাজ করছেন না। মোজাম্মেল আরও বলেন, সড়কে বিটুমিন যে পরিমাণ ব্যবহার করার কথা, তা করা হয় না। প্রতি কিলোমিটারে ১৭০ ড্রাম ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহৃত হয় ১১০ ড্রাম। সেটুকুও আবার মানহীন। বিদেশ থেকে ভেজাল বিটুমিন আসছে। এর পাশাপাশি পোড়া মবিল, কেরোসিন মিশিয়ে এটা হাল্কা করে গুণাগুণ নষ্ট করা হয়। ফলে বৃষ্টির পানিতেই বিটুমিন উঠে যাচ্ছে। কেউ একটা বিষয় মাথায় রাখছে না যে সড়কের দুর্ভোগ সবার ওপরেই পড়ে, সে ধনী হোক বা গরিব। সড়কের বেহাল দশার পাশাপাশি নিম্নমানের বিটুমিনে দেশের আরও নানামুখী ক্ষতি হয়। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর এসব সড়ক দুর্ঘটনায় ঝড়ে যাচ্ছে তাজা প্রাণ, হচ্ছে সম্পদ বিনষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি। নিরাপদ সড়ক নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা সবসময় যে চালকের কারণে হয় তা কিন্তু নয়। অনেক সময় সড়কের অবস্থাই এতটা খারাপ থাকে যে ঘটনা চালকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় আর দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙা সড়ক, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা এসব কারণে এমনটা হতে পারে। চলন্ত রাস্তায় হঠাৎ খারাপ রাস্তা চলে এলে বা কোনো গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল বছরেই করোনা মহামারির থেকে বেশি মানুষ মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। ২০২০ সালে দেশে অন্তত ছয় হাজার ৬৮৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় আট হাজার ৬০০ জন। দুর্ঘটনার প্রায় ২৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে সংঘটিত হয়েছে। এক হিসেব অনুযায়ী, দেশের অন্তত ৪০ থেকে ৪৫টি জেলার ও জেলা সংযোগকারী মহাসড়কে ত্রুটি রয়েছে। কোথাও খানাখন্দ থেকে বিশাল গর্ত আবার কোথাও কোথাও দেবে যাওয়ায় সড়কে গাড়ি চালালে মনে হয় যেন ‘ডিস্কো ড্যান্স’ বা ‘রোলার কোস্টার’। বিশেষ করে বর্ষা এলেই প্রতিবছর এসব সড়ক নতুন করে সংস্কার করতে হয়। ফলে একদিকে যেমন বিটুমিন আমদানিতে অপচয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা তেমনি আভ্যন্তরীণ খরচে প্রতিবছরই অপচয় হচ্ছে বিপুল অংকের সরকারি অর্থ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয় নতুন রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার বাবদ। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা থেকে জুগিন্দা পোড়া পাড়া সড়কের বিটুমিন উঠে গেছে। ফলে এই ৫ কিলোমিটার সড়কে তৈরি হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত খানাখন্দ। গাংনী উপজেলার বামুন্দি থেকে কাজীপুর সড়কের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ১০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থানের বিটুমিন উঠে গিয়ে বের হয়ে আছে ইটের খোয়া ও পাথর। পাকা সড়কটিতে এখন যান চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা নাপিতেরচর সড়ক নিম্নমানের। সড়কটিতে একদিকে কাজ চলছে, অন্যদিকে সড়কে ব্যবহার করা মানহীন বিটুমিন উঠে আসছে। নাপিতের চর থেকে নিলক্ষীয়া পর্যন্ত সড়কে বড় বড় গর্ত। পাঁচটি স্থানে বৃষ্টির সময় পানি জমে পুকুর হয়ে যায়। এই সড়কে প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত, দুই হাজার যানবাহন চলাচল করে। বকশিগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাকা হয়ে আট কিলোমিটার। তিন কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্ত রয়েছে। মানুষ যাতায়াত করতে পারে না। বকশিগঞ্জের সাজিমারা গ্রামের নওশেদ বলেন, তিন কিলোমিটার রাস্তার জন্য দুর্ভোগ হচ্ছে। নির্মাণের দুই মাসের মধ্যে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। রাস্তার মান এতোটাই খারাপ যে, পায়ের মধ্যে পাথর উঠে আসে। পিচ নয়, মনে হয় পোড়া মবিল দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল বলেছেন, সড়কটি দ্রুত মেরামত করা হবে। একই অবস্থা নীলফামারী জেলার গ্রামীণ পাকা সড়কের। সৈয়দপুরের আদানি মোড় থেকে দৌলুয়া চৌধুরী পাড়া পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কে যান চলাচল দূরের কথা মানুষজন চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। অথচ এই সড়ক দিয়ে দৈনিক পাঁচ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। অনেক সময় গাড়ি উল্টে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। সড়কটি নির্মাণের পরে মেরামত হয়নি। সড়কের বিটুমিন উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য গ্রামবাসীর আবদার দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হোক। এর পাশাপাশি ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার চলাচল সীমিত করা প্রয়োজন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক খাগড়াছড়ি থেকে পানছড়ি উপজেলা পর্যন্ত। ২৭ কিলোমিটার সড়কে অনেক পর্যটকও চলাচল করে। এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে গেছে। বিটুমিন উঠে গেছে অনেক আগেই। পানি জমে থাকে অনেক সময়। যাতায়াত করতে গিয়ে মানুষজন দুর্ভোগে পড়ছেন। যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন দুর্ভোগে পড়ছে। শুধু জান ও আর্থিক ক্ষতিই না বরং নিম্নমানের বিটুমিনে নির্মিত সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহনের মতো সম্পদও। বাস, ট্রাকের মতো যানবাহন থেকে শুরু করে দামি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ও পেশায় ব্যবসায়ী ইমন খান বলেন, অনেকদিনের কষ্টে টাকা পয়সা জমিয়ে মাস দুয়েক আগে একটি গাড়ি কিনেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন বিশাল এক গর্তে গাড়ির সামনের চাকা পড়ে যায়। আমাদের দেশে বিদেশ থেকে আমদানি করা গাড়ি আসে যেগুলো সেখানকার রাস্তা অনুযায়ী বানানো হয়। এগুলোতে ‘গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স’ কম থাকায় এমনিতেই এসব গাড়ি স্বাভাবিক সড়কেই কোনো স্পিডব্রেকারে বা সড়ক এবড়োথেবড়ো হলে গাড়ির নিচের অংশ লেগে যায়। তো সেই গর্তে পড়ার পর আমার গাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে তা ঠিক করতে নতুন গাড়িতে ৫০ হাজার টাকার বেশি কাজ করাতে হয়েছে। আমরা কর দেই, সেই করে রাস্তা হয়। আমার করের টাকায় রাস্তায় যদি এমন গর্ত থাকে আর সেটিতে আমারই ক্ষতি হয় তাহলে কর দিয়ে লাভ কী? যোগাযোগ ও বিটুমিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ককে টেকসই করতে হলে হয় উন্নতমানের বিটুমিন আমদানি নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য বিটুমিন আমদানির পর সেগুলো খালাসের আগে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) কর্তৃক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আর নয়তো দেশে গুণগত মানের বিটুমিন উৎপাদন করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com