নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উত্তোলিত হয়নি জাতীয় পতাকা। সিঁড়িতে পড়ে রয়েছে তাস, বারান্দায় ময়লার স্তূপ, শ্রেণিকক্ষে ধুলোমাখা চেয়ার-টেবিল-বোর্ড। উপস্থিত নেই প্রধান শিক্ষক। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিভাবকরা। উপস্থিত শিক্ষকরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর দায় চাপিয়ে বলেছেন, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বরিশাল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নূরিয়া আইডিয়াল স্কুলের চিত্র এমন। করোনার সংক্রমণ রোধ করতে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দীর্ঘ ৫৪৮ দিন অন্যান্য স্কুলের মতো এই স্কুলটি বন্ধ থাকার পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে পারেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সরকার-নির্ধারিত রুটিন অনুসারে সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। রোববার পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান করানোর কথা। কিন্তু এই স্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেখা গেছে ক্লাস নিতে। সরেজমিনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, বিভিন্ন ক্লাস খুলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বসানোর ব্যবস্থা করছেন ফিজিক্যাল ইন্সট্রাকটর ও সহকারী শিক্ষক আফরোজা আক্তার। তিনি বলেন, আজ প্রথম দিন স্কুল খুলেছে, এ জন্য সব অভিভাবককে আসতে বলেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলব। আগামী দিনে যেভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে, সেটিও বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বিদ্যালয়ের দোতলায় মাত্র দুটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বসানো হয়েছে।
অপরিচ্ছন্ন আসন পরিষ্কার করে দিয়েছেন অভিভাবকরা। শিশুদের খেলাধুলার জন্য রাখা খেলনা। তাতে ময়লা পড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। টয়লেটের ট্যাপে নেই পানি। অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে টয়লেট। নাতিকে নিয়ে আসা অভিভাবক ধীরেন মজুমদার বলেন, ভালো লাগে এত দিন পরে স্কুলটি খুলেছে। কিন্তু খারাপ লাগছে স্কুলটিতে ময়লা-আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্নতা দেখে। ১৮ মাস পরে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এসে স্কুলকে এভাবে দেখব, তা আমি চাইনি। তার ওপর মারাত্মক অন্যায় করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে এমন পরিবেশ মেনে নেওয়া যায় না। স্কুলের পরিবেশের বিষয়ে আরেক অভিভাবক সন্তোষ মিস্ত্রী বলেন, স্কুলের পরিবেশ নোংরা করে রাখার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ দায়ী। তা ছাড়া আমি এসে স্ট্যান্ডে জাতীয় পতাকা না দেখে শিক্ষকদের বলেছিলাম। কিন্তু তারা তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। আমি মনে করি, এই স্কুল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছে পতাকা উত্তোলন না করে। তাদের উচিত ছিল বিদ্যালয় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পতাকা উত্তোলন করার। সিনিয়র শিক্ষিকা মাকসুদা আক্তার মিতা বলেন, প্রধান শিক্ষক আজ অনুপস্থিত আছেন। তিনি আমাকে এবং আরেকজন শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আমি অত্যন্ত দুঃখিত স্কুলের এমন নোংরা পরিবেশের জন্য। স্কুল খোলার আগে ম্যানেজিং কমিটি, স্কুলের শিক্ষকরা বসে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম খোলার পরে স্কুলটি কীভাবে পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ এসে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন এবং পাঠদানের অনুপযোগী দেখ মন খারাপ হলো। যাদের আমরা চারজনকে চার দিন দায়িত্ব দিয়েছিলাম স্কুল পরিচ্ছন্ন করার জন্য, তারা জানিয়েছে, স্কুলের দুটি কক্ষ পরিষ্কার করার পরে মটরটি নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য আর পরিষ্কার করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা অনেক আবেগ আপ্লুত দীর্ঘ ১৮ মাস পর শিক্ষার্থীদের কাছে পেয়ে, তাদের এত দিন পরে শিক্ষা দিতে পারব। আমরা শিক্ষার্থীদের অনেক মিস করতেছিলাম। এখন যেহেতু কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাছে পেয়েছি, এখন থেকে আমরা চেষ্টা করব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে, শিশুদের নিরাপদভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে। সহকারী শিক্ষক আফরোজা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের সবকিছুই তো এলোমেলো। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি, এটি আমাদের ভুল হয়েছে। হয়তো বাচ্চারা খেলতে গিয়ে স্ট্যান্ডটি ফেলে দিয়েছে। স্ট্যান্ড ঠিকভাবেই আছে কিন্তু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি জানালে এই শিক্ষক বলেন, আসলে আমরা অপ্রস্তুত ছিলাম ঘোষণার প্রথম দিনই স্কুলে ক্লাস নিতে পারব কি না, তা নিয়ে। যেহেতু পেরেছি পর্যায়ক্রমে তা সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, করোনার সংক্রমণ রোধে প্রায় দেড় বছর পরে আজ সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়।
Leave a Reply