নিজস্ব প্রতিবেদক:
বরিশাল আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে পত্রিকা অফিসের তালা ভেঙ্গে ৬ বছরের সংরক্ষিত পত্রিকা, স্বর্ণালংকার, গুরুত্বপূর্ণ দলিলসহ প্রায় কোটি টাকার মালামাল চুরি ও লুটপাট করে তা আত্মসাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অব্যাহত হুমকির কারণে ভুক্তভোগী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক কাজী মো. জাহাঙ্গীর এমন আশংকা জানিয়ে পূর্বেই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। চতুর বাড়িওয়ালা অভিযোগ ও মামলার বিষয়টি জানতে পেরে নিজেকে রক্ষায় পুলিশ কমিশনার বরাবর পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালামাল উদ্ধার সহ সত্যতা পেলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নিতে পুলিশ গড়িমসি করছে। বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান, তার ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেনসহ ভাড়া করা কিছু লোকজন নিয়ে অফিসের তালা ভেঙে ভিতরে থাকা প্রায় কোটি টাকার মালামাল চুরি লুটপাট সহ আত্মসাৎ এবং অফিসের তালা ফেলে দিয়ে বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান তালাবদ্ধ করে রাখার কারণে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে। বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান বলছে সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ থানা পুলিশ ম্যানেজ করে নিয়েছি ভাড়াটিয়া কাজী জাহাঙ্গীর আগের ঘটনায়ও কিছু করতে পারে নাই এবারের ঘটনায়ও আমার কিছুই করতে পারবে না।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের স্থানীয় দৈনিক দখিনের খবর পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নগরীর হাসপাতাল রোডস্থ (অমৃত লাল দে সড়ক) হালিমা মঞ্জিলের ৩য় তলার ৪টি কক্ষ পাঁচ বছর মেয়াদে অগ্রিম দুই লাখ টাকা ও মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমানের সাথে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একটি ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র করেন। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভাড়া নেয়া অংশ বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও শুরুতে বাড়িওয়ালা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে ভাড়া অংশের সামনে ও পিছনে দুটি দরজা লাগিয়ে দায়সারাভাবে ভাড়াটিয়া অংশ বুঝিয়ে দেন। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে আরও প্রায় এক বছর সময় নেন বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান। ফলে জানালা দিয়ে ভিতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে ও বিলম্বে ভাড়াটিয়া অংশের কাজ সম্পন্ন করায় ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরের প্রায় ১২-১৫ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়। এদিকে ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমান জনৈক আইনজীবীর সাক্ষর জাল জালিয়াতি করে পত্রিকার সম্পাদক কাজী মো. জাহাঙ্গীরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান এবং প্রতিনিয়ত বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। এমন পরিস্থিতিতে পত্রিকার সম্পাদক কাজী মো. জাহাঙ্গীর ব্রেইন স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারেননি তিনি। এ ঘটনায় সম্পাদক কাজী মো. জাহাঙ্গীর ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিলে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু থানা পুলিশের কাছে থাকা সেই অভিযোগ আজ অবধি ফাইল বন্দি অবস্থায় পড়ে থাকে। বাড়ীওয়ালা কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে অফিস বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান ও তার ছেলে এবং ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা মিলে মূল দরজার তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে এবং আরও দুইটি দরজার তালা ভেঙে সম্পাদকের রুমে প্রবেশ করে তার টেবিলের ড্রয়ার ভেঙ্গে নগদ অর্থ, সম্পাদকের ব্যবহৃত স্বর্ণালংকার, মূল্যবান অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র লুটপাট চুরি ও ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এরপর পত্রিকায় কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসে তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে সম্পাদক কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরকে অবহিত করেন। এরপর সম্পাদক কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। থানা পুলিশের কথা অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক আদালতে এইচআরসি আইনে ০১/২০২৩ মোকদ্দমা দায়ের করেন।
এদিকে আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী রাতের আধারে বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমান, ছেলে দেলোয়ার হোসেন সহ ভাড়াটিয়া লোকজন মিলে পূর্বের ন্যায় অফিসের তালা ভেঙে ৬০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ৬ বছরের সংরক্ষিত পত্রিকা, প্রায় ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের প্রিন্টার ১ টি, কম্পিউটার ৩টি যার আনুমানিক মূল্য ১,৬০,০০০/- এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা, এইচপি কোরআইফাইভ ব্রান্ডের ল্যাপটপ ১ টি যার মূল্য ৫৫ হাজার টাকা (উল্লেখিত মালামালের কাগজপত্রসহ), ক্রোকারিজ মালামাল, অফিসের ভাড়ার রশিদসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, আসবাবপত্র ও ফার্নিচার সব মিলিয়ে প্রায় ৭৫/৮০ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি লুটপাট ডাকাতি করে নেয় এবং অধিকাংশ মালামাল একই ভবনের পাঁচ তলায় তালাবদ্ধ করে রেখে ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর ২০ মাসের বাড়ি ভাড়া ১৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখে ভাড়াটিয়া ঘরের কক্ষগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গিয়েছে, কাজী জাহাঙ্গীর এখন আর ভাড়াটিয়া নেই ঘর অন্য লোকের কাছে ভাড়া দিয়েছি উল্লেখ করে আদালতে মামলা খারিজের আবেদন করেন আব্দুর রহমান।
পত্রিকার প্রকাশক ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর অফিসে গিয়ে মূল দরজায় নতুন তালা দেখে পত্রিকা অফিসে থাকা মালামাল চুরি ডাকাতি ও লুটপাট করেছে এমন আশংকা প্রকাশ করে ইংরেজী ১/২/২০২৪ তারিখ পুলিশ কমিশনার বরাবর বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিলে বাড়িওয়ালা এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরে তিনিও পুলিশ কমিশনার বরাবর পাল্টা ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ দেন। এই অভিযোগেও বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান উল্লেখ করেন যে ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর ২০ মাসের ভাড়া ও ১৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখিয়া কক্ষগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেছে।
এদিকে ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরের অভিযোগ তদন্তের জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার সীমা খানম এএসআই রুমাকে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে পাঠায়। এ বিষয়ে এএসআই রুমা জানায়, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দৈনিক দখিনের খবর পত্রিকা অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে খুলে দেয়ার জন্য বাড়ীওয়ালাকে বলেন। বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান ও তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন তালা খুলে দেয়। এসময় মালামাল দেখতে না পেয়ে বাড়ীওয়ালাকে পত্রিকা অফিসের মালামাল কোথায় আছে জিজ্ঞেস করেন। এএসআই রুমা বলেন, প্রথমে বাড়ীওয়ালা ও তার ছেলে দেলোয়ার অস্বীকার করে বলেন যে মালামালসহ দীর্ঘ ২০ মাস আগেই ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গেছে। তার কোনো মালামাল এখানে নাই। এরপর এএসআই রুমা চুরি মামলা দায়ের হবে বললে বাড়ীওয়ালা অকপটে স্বীকার করেন যে মালামাল তার ভবনের পাঁচ তলায় রেখে দিয়েছেন। তাৎক্ষণিক এএসআই রুমা খানম ভবনের পাঁচ তলায় রাখা মালামালের স্থির ও ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। এসময় এএসআই রুমা খানমের সাথে ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন দৈনিক দখিনের খবর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার কাজী মোঃ আবু যাঈদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
দখিনের খবর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক কাজী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ২০২২ সালের ঘটনা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশকে জানালে তাদের কথা মতো থানায় এজাহার দিলেও থানা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তের দ্বারা অবৈধভাবে লাভবান হয়ে কোনরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রক আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারী শুনানী হলেও এখনো আদালত রায় দেননি এবং আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আমার পত্রিকার গত ৬ বছরের প্রকাশিত সংখ্যা, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ক্রোকারিজ মালামাল, ফার্নিচার, আসবাবপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমান, তার ছেলে দেলোয়ার হোসেন সহ ও ভাড়া করা লোকজন মিলে আমার পত্রিকা অফিসে থাকা ৭৫/৮০ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি ডাকাতি ও লুটপাট করে বাড়িওয়ালা তার নিজ ভবনের পাঁচ তলায় রেখে উল্টো আমার বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন আমি ২০ মাসের বাড়ি ভাড়া ও ১৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখিয়া কক্ষগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে এসেছি। আমার প্রশ্ন যদি মালামাল নিয়ে পালিয়েই আসি তাহলে পাঁচ তলা থেকে আমার মালামাল পুলিশ উদ্ধার করলো কিভাবে? আমি থানায় প্রতিকার না পেলে আদালতে মামলা দায়ের করবো। আবার আমার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে বাড়ীওয়ালা উল্লেখ করেন যে আমি পালিয়ে আসার পর অন্যত্র ভাড়া দিয়েছেন আমি তার ভাড়াটিয়া নই। অথচ পুলিশের কাছে বলেছে মেয়ের বিয়ে এই জন্য মালামাল সরিয়ে পাঁচ তলায় রেখেছে। আমি একজন পত্রিকার মালিক হয়ে পুলিশের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত তাহলে বুঝতে হবে ডালমে কুচ কালা হ্যায়।
সহকারী পুলিশ কমিশনার সীমা খানম বলেন, বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান তার মেয়ের বিয়ের কারণে অফিসে থাকা মালামাল সরিয়ে পাঁচ তলায় নিয়ে রাখা হয়েছে। চাইলে ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর মালামাল নিয়ে যেতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়ীওয়ালা আব্দুর রহমান যা কিছু করেছে তা সম্পুর্ন বেআইনীভাবে করেছে। আমি ২/১ দিনের মধ্যে যতটুকু পেয়েছি তার একটি রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবো।
অভিযুক্ত বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, পুলিশ কমিশনার সহকারী পুলিশ কমিশনারকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন আমি তাকে ম্যানেজ করে নিয়েছি। পুলিশ কমিশনার বরাবর ২৫/০২/২০২৪ তারিখ কাজী জাহাঙ্গীরের অভিযোগ সম্পর্কে বলেন পত্রিকা অফিসের মালামাল পুলিশ আমার বাসা থেকে উদ্ধার করার পর আমার অভিযোগের তদন্ত স্থগিত রেখেছি। তবে যেহেতু আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বাদী কাজী মো. জাহাঙ্গীর। আদালত যে রায় দিবেন তিনি তা মেনে নেবেন। তবে পুলিশ কমিশনার বরাবর ভাড়াটিয়া কাজী মোঃ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছেন তাহলে আপনার বাসায় অফিসের মালামাল আসলো কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাড়িওয়ালা আব্দুর রহমান বলেন সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ থানা পুলিশকে আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি কাজী জাহাঙ্গীর আমার কিছুই করতে পারবে না।
Leave a Reply