কুয়াকাটা প্রতিবেদক ॥ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পর্যটন স্পট গঙ্গামতি সৈকত এখন কেবলই গাছের ধ্বংস স্তুপ। সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ। ঢেউয়ের তান্ডবে উপড়ে গেছে অশংখ্য ঝাউ গাছ। সৈকতের বনাঞ্চলে অনেক গাছ এখন মরতে শুরু করেছে। গাছের মুলে বালু জমে ও লবন পানিতে বিবর্ন হয়ে গেছে গাছের কান্ড ও পাতা। আম্ফানের দীর্ঘ সময় চলা ঝড়ো বাতাসে গাছ গুলোর এমন দশা হয়েছে। এ কারনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এ বনাঞ্চল সংলগ্ন পরিবার গুলো। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে গঙ্গামতির সৈকতের অবস্থান। সবুজ প্রকৃতিতে ঘেরা ঠিক যেন ছবির মতো সাজানো গোছানো ছিল। যেন প্রকৃতির সবুজ দেয়াল। আম্ফানের ঝড়ের তান্ডবে সেই প্রকৃতির সবুজ দেয়াল এখন বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়টি গাছ উচঁ হয়ে দাড়িয়ে আছে তাও মরতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আম্ফান দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঝড়ো বাতাস ও সামুদ্রিক লবন পানির স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে গাছের শ্বাস মূল শোষন করায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর ঘুর্ণিঝড় ও সমুদ্রের প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বনাঞ্চল। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। সেই দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়েছিল বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল। বনের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন্য প্রাণীর ক্ষতি হয়েছে অনেক। গঙ্গামতির বনাঞ্চল সংলগ্ন বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, এলাকা রক্ষায় দেয়াল হিসেবে কাজ করেছে সৈকত লাগোয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল, ম্যানগ্রোভ বন ও সবুজ বেষ্টনী। এখন সেই বন নেই।
একই এলাকার মোস্তফা বেপারী বলেন, আম্ফানের ঝড়ো বাতাসের তোড়ে সমুদ্র ঘেষা গাছগুলো যেন মুড়িয়ে দিয়েছে। ঘূর্নিঝড় সিডর, আইলা, নারগিস, মোহাসেনসহ বড় বড় ঝড়কে মোকাবেলা করেছে এ বনাঞ্চল। বনাঞ্চল ছিলো বলেই ধুলাসার ও লতাচপলী ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার রক্ষা পেয়েছে। জেলে হানিফ ফরাজি বলেন, গত ৫/৬ বছর ধরে এ বন বিলীন হতে চলেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে আম্ফানের ঝড়ো হাওয়ায়। সৈকত সংলগ্ন বাগানে বিভিন্ন প্রজাতিার গাছ উপড়ে গেছে। পরিবেশবাদরা বলেছেন, বন ও বনের গাছ পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রতিবছর ঘুর্ণিঝড়ের কবলে যেভাবে বন ও সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস হচ্ছে এর ফলে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে মানুষের উপর। মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার আবুল কালম আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বনের ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply