নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ করোনা জীবাণুর সংক্রমণ বিবেচনায় বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭ টিকে ’রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বুধবার জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। যার মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি রোগী এই মহানগরীর। এমন পরিস্থিতিতে পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) সূত্রে জানা যায় শীঘ্রই লকডাউন (অবরুদ্ধ) হচ্ছে বরিশাল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তবতা পাওয়া যায় নি। সচেতন মহল থেকে কার্যকর লকডাউনের দাবি উঠলেও তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মহলের সমন্বয়হীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিসিসি সূত্রে জানা গিয়েছিল বরিশালের ‘রেড জোন’ হওয়া এলাকার মধ্যে প্রথমে নগরীর ১২ ও ২৪ নং ওয়ার্ডকে লকডাউন করা হবে। এই এলাকা দুটিতে লকডাউন শুরুর সম্ভাব্য দিন ছিল গতকাল রোববার। গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় প্রশাসন, চিকিৎসক সমাজ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ লকডাউন কার্যকর করতে হলে সরকারী যেসকল দপ্তরের সমন্বয় প্রয়োজন সেসব দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে বিসিসি মেয়রের এক অনলাইন সভায় এসব বিষয় আলোচিত হয়। সে সভায় সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রেড জোনকৃত সকল এলাকা লকডাউন করা হবে।
কিন্তু লকডাউন শুরু করার কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু বলা হচ্ছে সামনেই যেকোনো দিন থেকে নগরীতে লকডাউনের ঘোষণা আসবে। আর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েও কার্যকর না করার ব্যাপারটি জনমনে লকডাউন নিয়ে প্রশাসনের লুকোচুরি খেলার মতো প্রতিফলিত হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের সচেতন মহল থেকে লকডাউনের ব্যাপারে এমন লুকোচুরিতে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। তারা চায় কার্যকর লকডাউনের মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি প্রফেসর শাহ শাজেদা বেগম বলেন, লকডাউন নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যা শুরু করেছে তাতে ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে’ এমন চিত্রের অবতারণা হয়েছে। লকডাউন কার্যকর করতে বিভিন্ন পর্যায়ে যাদের অংশগ্রহণ দরকার (জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইত্যাদি) তাদের নিজেদের মধ্যেই সমন্বয়হীনতার কারণে প্রতিদিন আশংকাজনক হারে এখানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন, যদি দ্রুত বরিশালে লকডাউন কার্যকর না করা যায় তবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে আশা করছি। আর লকডাউন কার্যকর করতে কি করা উচিত সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের সংগঠক ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী।
তিনি জানান, লকডাউনের সময়টাতে দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া এবং করোনার পরীক্ষা সংখ্যা বাড়ানো কার্যকর লকডাউনের মূল শর্ত। লোকজনকে একটা জায়গার মধ্যে আটকে দিলাম কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয় সেবার সংস্থান করলাম না সেটা করা যাবে না। এছাড়া বরিশালে করোনা চিকিৎসার মান বৃদ্ধির জন্য আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি বৃদ্ধি না করা গেলে লকডাউন করেও তেমন লাভ হবে না বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তবে যাদের হাতে লকডাউন কার্যকর করার দায়িত্ব তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সঠিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। বরিশাল জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গঠিত সরকারি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কবে লকডাউন করা হবে সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই লকডাউনের কার্যক্রম শুরু করা হবে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানালেন, তার কাছে লকডাউন শুরু করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা বা তথ্য নেই। কিন্তু সিটি করপোরেশনের আওতাধীন দুটি ওয়ার্ড যদি লকডাউন করার পদক্ষেপ নেয়া হয় তবে এই কর্মকর্তার সেটা জানবার কথা।
Leave a Reply