ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠিতে সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে বেগবান করতে এবং সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় ৩০টি সংগঠনে অনুদানের জন্য ৬লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়। কার্যক্রম নেই, কাগজকলমে কার্যক্রম ও নাম সর্বস্ব এমন অনেক সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুদান নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে এড়িয়ে পুরো টাকা আত্মসাতের জন্য তাকে না জানিয়েই সাধারণ সম্পাদক নতুন রেজুলিউশন করে একাধিকবার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে। এবছরের অনুদান থেকেও টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করলে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি স্বপন কুমার দাস।
স্বপন কুমার দাস জানান, “ধানসিঁড়ি অপেরা পার্টি (যাত্রাদল) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কয়েকবছর আগে। আমি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও দুলাল দাসকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সংগঠনের সব ধরনের কাগজপত্র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুলাল দাসের কাছেই রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২ বারে ৪০হাজার টাকা সরকারি অনুদান পাই। আরেকবার বিশেষ বরাদ্দ থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পাই। আমরা গতবছরের ২৫ জানুয়ারি একটি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করি। একটি যাত্রাপালা অনুষ্ঠান আয়োজন হিসেবে দুলাল দাসকে ৭০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। যাত্রাপালা সম্পন্ন হলে তিনি জমা থাকা বাকি টাকার জন্য দাবি করেন। ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসেব চাইলে তিনি ক্ষেপে যান। পরের বছর থেকে অন্য একজনকে সভাপতি সাজিয়ে নতুন রেজুলিউশন করে ২ বার সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেছে। ধানসিঁড়ি অপেরা পার্টির অনুকূলে যে বরাদ্দ হয়েছে তাও জানতাম না। এবছরও দেখি একইভাবে বরাদ্দ নিয়েছে, তাই ওই বরাদ্দের অনুদান না তুলতে পারে সে ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছি।” এছাড়াও কিশলয় খেলাঘর আসর, ঝালকাঠি থিয়েটার ও শিশু থিয়েটার, জীবনানন্দ সংগীত ও সংস্কৃতি শিক্ষালয়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সংগঠনের অনুকূলে সরকারি অনুদান বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করে দুলাল দাস।
ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি রফিকুল ইসলাম স্বপন জানান, “২০১৩ সালে আমরা শিল্পকলা নির্বাচনের সময় জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করছিলাম। তখন জোটের নাম দেয়া হয় “সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট”। ওই কমিটিতে আব্দুল মালেক সভাপতি ও দুলাল দাস সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব ছিলো আমার। পরে নির্বাচন বন্ধ না হলেও আমাদের জোট কমিটি হিসেবেই থেকে যায়। সভাপতি আব্দুল মালেক আমেরিকায় সন্তানদের কাছে চলে গেলে যেমন খুশি তেমন সাজন নীতিতে সংগঠনকে চালাতে থাকে দুলাল দাস। আমি এর প্রতিবাদ করলে পরের রেজুলিউশন থেকেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমার নাম বাদ পড়ে যায়। তিনি একাই সংগঠনের কর্তা হিসেবে পরবর্তী অনুদানগুলো উত্তোলন করে আত্মসাত করছে। ”
ঝালকাঠি থিয়েটারের নাট্যকর্মী রিয়াজ খান অশ্রু জানান, “২০০০ সাল থেকে ঝালকাঠি থিয়েটারের পরিচালনায় ধানসিঁড়ি মহিলা ক্লাব চত্বরে পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যায় নাট্যানুষ্ঠান করতাম। আমাদের নাটক প্রাণবন্ত ছিলো বলে সবাই আগ্রহ করেই দেখতো। ঝালকাঠি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দুলাল দাস’র নাট্যকর্মীদের অবহেলা, পরমতসহিষ্ণু না থাকা, একক স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ২০১১ সালের পর থেকে তিনি আর কোন নাটক মঞ্চস্থ করতে পারেন নি।” ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন খান জানান, “দুলাল দাস একাই ৫টি সংগঠন পরিচালনা করছে। যার শুধুমাত্র ১টির (কিশলয় খেলাঘর আসর) কার্যক্রম সক্রিয় আছে। বাকি ৪টিই বিচিত্রভাবে চলছে। এসব সংগঠন নিয়ে দ্বিমুখী আচরণ, অর্থ আত্মসাত, সহকর্মীদের উপেক্ষা করাসহ অনেক অনিয়ম তার।”
দুলাল দাস’র ব্যবহৃত ০১৭১৮৫০৫৮৩৬ নম্বরে কল দিলে তার মেয়ে রিসিভ করে জানান বাবা বাসার বাইরে আছেন। এসময় পাশ থেকে দুলাল দাস’র কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিলো। অপরদিকে ঝালকাঠির অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষে নিজস্বভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মাণ বা ভাড়া বাসায় সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব হওয়ায় কাগজ-কলমেই জানান দেয়া হচ্ছে কার্যক্রমের। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিরা বছরের পর বছর আত্মসাত করছে বলে অভিযোগ প্রকৃত সাংস্কৃতিক সেবীদের। জেলা প্রশাসনকে অনুদানপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বাস্তবে তদারকি করে অনুদান হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন প্রকৃত সাংস্কৃতিক সেবীরা। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে থেকে ঝালকাঠি জেলার ৩০টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে ৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা এবং অনুদানের মঞ্জুরির অর্থ সরকারের পক্ষে প্রদান করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এই মঞ্জুরি পাচ্ছে আঃ গণি বয়াতি শিল্প সংঘ ২০ হাজার টাকা, কবিতাচক্র ঝালকাঠি ২৫ হাজার টাকা, ঝালকাঠি শিল্পী পরিষদ ৩০ হাজার টাকা, প্রতীক নাট্যগোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, ঝালকাঠি থিয়েটার ও শিশু থিয়েটার ৩০ হাজার টাকা, মিতু সেতু সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও পাঠাগার ২০ হাজার টাকা, ধানসিঁড়ি অপেরা ২০ হাজার টাকা, সোনার বাংলা বাউল সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, সুর সাগর সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, প্রতিভা সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ ২০ হাজার টাকা, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, কিশোর থিয়েটার ২০ হাজার টাকা, রূপসী বাংলা সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, নৃত্য মেলা ২০ হাজার টাকা, সুগন্ধা বাউল শিল্পী ২০ হাজার টাকা, কিশলয় খেলাঘর আসর ২০ হাজার টাকা, কবি জীবনানন্দ সংগীত পরিষদ ২০ হাজার টাকা, উত্তরণ সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, কলতান সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ ২০ হাজার টাকা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ২০ হাজার টাকা, আবুল হাসেম সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, সপ্তগ্রাম সমন্বিত বাউল কল্যাণ সংস্থা ২০ হাজার টাকা, প্রবাহমান বাংলার গ্রাম ২০ হাজার টাকা, সালমা শিল্পী গোষ্ঠী ২০ হাজার টাকা, সাইডো সংগীত একাডেমী ২০ হাজার টাকা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ২০ হাজার টাকা।
Leave a Reply