করোনার আবহে বেড়াতে যাওয়ার কথা বেমালুম ভুলতে বসেছেন প্রায়! তবে এই অবস্থা একসময় কেটে যাবে। পরিস্থিতি শুধু একবার স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা। ব্যস! তারপর আর আটকায় কে! তবে জেনে রাখুন এই করোনার কালবেলাতেই বিশ্বের প্রথম সোনায় মোড়া হোটেলের দরজা খুলে গেল। হ্যাঁ! অবাক হওয়ার মতো ঘটনা হলেও সত্যিই তাই। সোনায় মোড়া টয়লেটের খবর শুনেছেন, সোনার তৈরি আরো কত শত জিনিসের নাম শুনেছেন। এবার সোনায় মোড়া হোটেল (World’s First Gold Plated Hotel)। আর ঝাঁ চকচকে সেই সোনার হোটেলটি তৈরি করা হয়েছে ভিয়েতনামে। কী ভাবছেন? কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? আর এই সঙ্কটজনক অবস্থার একটু উন্নতি হলেই ঢুঁ মারতে যাবেন অত্যাশ্চর্য সেই হোটেলে?
তাহলে বিশ্বের প্রথম সোনায় মোড়া পাঁচতারা হোটেল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নিন।
ডলস হানোই গোল্ডেন লেক
ভিয়েতনামের রাজধানী হানোইতে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সর্বপ্রথম সোনার প্লেটে নির্মিত হোটেল। ২০০৯ সাল থেকে এই হোটেলের কাজ শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে, চলতি বছরের শেষ দিকেই পুরোপুরি নির্মিত হয়ে যাবে তাক লাগানো এই হোটেল। তবে জেনে রাখা ভালো, এই হোটেল ফাইভ স্টারেরও বেশি। এটি একটি সিক্স স্টার অর্থাৎ ছয় তারা হোটেল। হানোইয়ের এই সুন্দর সোনার প্লেটে তৈরি হোটেলের নাম রাখা হয়েছে ‘ডলস হানোই গোল্ডেন লেক’ (Dolce Hanoi Golden Lake)।
সোনায় সোহাগা
এই হোটেল তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। হোটেলের ইন্টিরিয়ার এবং এক্সটিরিয়ার দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে ২৪ ক্যারেটের সোনা। তবে সোনার পাতে পুরো হোটেল নির্মিত হলে কী হবে, হোটেলের টয়লেট সিট থেকে শুরু করে লবি, ইনফিনিটি পুল, রুম এমনকী বাথরুমের শাওয়ারের মাথাটিও সোনা দিয়েই তৈরি করা হয়েছে। হোটেলে কোনো গেস্ট কফি খেতে চাইলে, তাকে সোনার কাপেই কফি পরিবেশন করা হবে।
অভাবনীয় এই হোটেল কারা তৈরি করলেন
ভিয়েতনামের রাজধানী হানোইয়ের এখন অন্যতম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্ধর্ষ এই সোনায় মোড়া হোটেল। হোটেলের কাজ পুরোপুরি ভাবে শেষ হতে এখনো বেশ কিছু দিন বাকি রয়েছে। কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই পর্যটকেরা হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। হানোইয়ের বা দিন জেলার গিয়াং ভো লেকের এক্কেবারে ধারেই তৈরি হয়েছে এই হোটেল। ভিয়েতনামের প্রসিদ্ধ হোয়া বিন গ্রুপই তৈরি করেছে ‘ডলস হানোই গোল্ডেন লেক’। হোটেলটির ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব সামলাচ্ছে আমেরিকান সংস্থা উইনধাম হোটেল গ্রুপ।
হোটেলের আরো টুকিটাকি
হোটেলটির অন্দরে ও বাইরেও ৫০০০ বর্গমিটারের সেরামিক টাইলস বসানো রয়েছে। এই ধরনের টাইলস নির্মিত হয় সম্পূর্ণ সোনা দিয়েই। সোনার পাতে মোড়া এই হোটেলে রয়েছে মোট ২৫টি তলা। আর ইমিউনিটি পুলটি রয়েছে এক্কেবারে রুফটপে। তবে এহেন হোটেলের ঘরগুলো যেমন সোনায় মোড়া, তেমনই আবার বাথরুম থেকে পুল সবই সোনার প্লেটে তৈরি। কাপ থেকে শুরু করে খাবার-দাবারও এই হোটেলে সোনার পাত্রেই পরিবেশন করা হয়। তবে তার থেকেও চিত্তাকর্ষক বিষয়টি হলো হোটেলের যাবতীয় সব আসবাবপত্রই সোনায় তৈরি করা হয়েছে।
এক রাতের খরচ
সোনার হোটেল! ভাবছেন, রাত কাটানোর খরচাও হবে সোনার থেকেও দামি। আসলে তা কিন্তু নয়। ‘ডলস হানোই গোল্ডেন লেক’ হোটেলে রুম ভাড়া শুরু হচ্ছে ২৫০ মার্কিন ডলার থেকে। অর্থাৎ ভারতীয় মূল্যে ট্যাঁকের কড়ি খসাতে হবে ২১ হাজার টাকার সামান্য বেশি। এই মূল্য বিরাট হলেও, জেনে রাখা ভালো অনেক দেশে এমন অনেক হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি থাকতে গেলে এর থেকেও কিছু বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়। তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে, আপনি চাইলেই এই হোটেলে অ্যাপার্টমেন্টও ভাড়া করতে পারবেন। তবে সেই অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করার খরচ অনেকটাই। সেক্ষেত্রে খরচা হবে ৬৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রার মূল্যে যা সাড়ে ৫ লাখ টাকার একটু বেশি।
হোটেলের নির্মাতারা কী বলছেন
শুধু ধনীরাই নয়। সাধারণ ছাপোষা মধ্যবিত্তরাও ঘুরে যাক এই হোটেলে। এমন কথাই বলছেন হোটেলের নির্মাতা থেকে শুরু করে খোদ হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই এমনকী সশরীরেও মানুষ চেক ইন করুক এই হোটেলে। হোটেলের নির্মাতা সংস্থা হোয়া বিন গ্রুপের চেয়ারম্যান এনগ্যুয়েন হু ডুয়োং বলছেন, “আমাদের গ্রুপেরই একটি ফ্যাক্টরি রয়েছে যেখানে আমরা খুব সস্তায় নানা ধরনের সোনার জিনিসপত্র বানাই। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে সোনায় মোড়া এই হোটেলে থাকার খরচ কম।” তবে করোনা আবহে যে, তাদের ব্যবসা রীতিমতো ধাক্কা খেয়েছে, সে কথাটাও স্বীকার করে নিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। যদিও এই সংকটজনক পরিস্থিতি একবার চলে গেলে আবার যে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ‘ডলস হানোই গোল্ডেন লেক’ (Dolce Hanoi Golden Lake) কর্তৃপক্ষ।
সূত্র : এই সময়
Leave a Reply