আগামী বৃহস্পতিবার তথা ১৬ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতার অংশ হিসেবে এতদিন ধরে বিএনপির স্বাভাবিক দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকে। অবশ্য করোনা সঙ্কটকালে গরিব মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন সভা করলেও মূলত কমিটি গঠন-পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে বিএনপির। তবে ব্যতিক্রম হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মনোনয়নের ক্ষেত্রে। এখন বৃহস্পতিবার থেকে করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কমিটি গঠন বা পুনর্গঠন শুরু করবে বিএনপি। এভাবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরবে দলটি। করোনার আগে মেয়াদোত্তীর্ণ যেসব কমিটি প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে ছিল কিন্তু লকডাউনের কারণে তা ঘোষণা হয়নি মূলত সেসব ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমেই সীমিত কার্যক্রম শুরু হবে। এদিকে দলের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে এবং সাংগঠনিক কমিটি গঠন-পুনর্গঠন বিষয়ে তথ্য জানতে প্রতি সপ্তাহে দলের জেলাপর্যায়ের নেতাদের সাথে ভার্চুয়াল মতবিনিময় করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সাথেও বৈঠক করছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন তিনি। এ পর্যন্ত বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে ২৬টির আহ্বায়ক কমিটি এবং ১০টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ। দু-একটির আহ্বায়ক কমিটি বা কাউন্সিল হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বিএনপি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রেখেছে। বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ অতিমারীর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বা সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠনের স্থগিতাদেশ সর্বশেষ ১৫ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বা সাংগঠনিক গঠন ও পুনর্গঠন কার্যক্রম আগামী ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে পর্যায়ক্রমে সীমিত আকারে শুরু করা হবে।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি : প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপির গাজীপুর মহানগরীর কমিটি। কিন্তু হয় হয় করে আজো কমিটি গঠন হয়নি। ফলে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও পদপ্রত্যাশীদের মাঝে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ একাধিকবার আলোচনা করে গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু আজো কেন ঘোষণা হয়নি। তারা সাংগঠনিক গতিশীলতার জন্য অবিলম্বে গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার দাবি জানান।
স্থানীয় বিএনপি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুর মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক হলেন মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন। তারা দুজনেই বয়স্ক ও অসুস্থ। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) সাবেক মেয়র অধ্যাপক এ এ মান্নানও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এমতাবস্থায় গাজীপুর মহানগর বিএনপি এখন চলছে ভাবলেশহীন।
এদিকে গাজীপুর মহানগর বিএনপির কমিটির শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় আছেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, গাসিকের সাবেক মেয়র অধ্যাপক মান্নানের ছেলে এম মনজুরুল করিম রনি এবং বর্তমানে গাসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হান্নান মিয়া হান্নু। এদের মধ্যে সালাহউদ্দিন সরকার শ্রমিক দলের সভাপতি বা সেক্রেটারি হিসেবেও আলোচনায় আছেন। ফলে শেষোক্ত দুজনই এখন বেশি আলোচনায়।
জেলা নেতাদের সাথে বৈঠক : দলের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে এবং সাংগঠনিক কমিটি গঠন-পুনর্গঠন বিষয়ে তথ্য জানতে এবং তৃণমূলকে সক্রিয় রাখতে দলের জেলাপর্যায়ের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ বিভাগের বিএনপির জেলা ও মহানগর নেতৃবৃন্দের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন, মো: শরীফুল আলম, ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, আবু ওহাব আকন্দ ও অধ্যাপক আমজাদ আলী, জেলা দক্ষিণ বিএনপির ডা: মাহবুবুর রহমান লিটন, জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ আলম, উত্তর বিএনপির মোতাহার হোসেন তালুকদার, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির মাজহারুল হক, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির অধ্যাপক ডা: আনোয়ারুল হক ও ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, শেরপুর জেলা বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল, আব্দুল আউয়াল চৌধুরী এবং জামালপুর জেলা বিএনপির ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম।
জানতে চাইলে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হওয়া প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে জেলা ও মহানগরভিত্তিক বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি, সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও মতবিনিময় হয়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধৈর্যসহকারে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন এবং দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি ক্রমবর্ধমান করোনা পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আক্রান্ত জনগণকে সহযোগিতা এবং দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান। সেই সাথে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জনগণকে সচেতন করা, কর্মহীন অভাবী মানুষকে খাদ্যসহায়তা প্রদান, আক্রান্তদের চিকিৎসা সহযোগিতা, মৃতদের দাফন ও সৎকার করায় ধন্যবাদ জানান। জেলা নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করায় তারেক রহমানকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
Leave a Reply