রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় গৌরনদীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গৌরনদীতে এতিমখানা ও মাদ্রাসার দরিদ্র, অসহায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কারাবন্ধী ও রাজপথে সাহসী সৈনিকদের সম্মানে ইফতার দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায়, দখিনের খবর পত্রিকা অফিসের তালা ভেঙে কোটি টাকার লুণ্ঠিত মালামাল বাড়িওয়ালার পাঁচ তলা থেকে উদ্ধার, মামলা নিতে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা গলাচিপা উপজেলা প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন, সভাপতি হাফিজ, সম্পাদক রুবেল চোখের জলে বরিশাল প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী বাবুলকে চির বিদায় বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন কারামুক্ত উচ্চ আদালতে জামিন পেলেন বরিশাল মহানগর বিএনপির মীর জাহিদসহ পাঁচ নেতা তসলিম ও পিপলুর নেতৃত্বে বরিশাল জেলা উত্তর ও দক্ষিণ যুবদলের বরিশাল নগরীতে কালো পতাকা মিছিল হিউম্যান ফর হিউম্যানিটি ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গৌরনদীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ
পায়রার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আলোয় আলোকিত দক্ষিণবঙ্গ

পায়রার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আলোয় আলোকিত দক্ষিণবঙ্গ

কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে। কিন্তু গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছেনা তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ওই সঞ্চালন লাইন চালু না হয় তবে লোকসান গোনার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। অর্থাৎ এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র। পদ্মানদীর উত্তরপাড়ের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় ইতিমধ্যে এখান থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ হচ্ছে। জানতে চাইলে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ত) মো. রেজওয়ান ইকবাল খান জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে এখান থেকে উৎপাদিত ৬২২ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণবঙ্গের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে চালু করা হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে ঢাকার আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ওই লাইন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি জানান, পদ্মায় রিভার ক্লোসিং লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটি কমপ্লিট হলেই খুব দ্রুত সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যদি গোপালগঞ্জ টু ঢাকার আমিন বাজারের সঞ্চালন লাইন চালু না হয় সেক্ষেত্রে সরকারকে লোকসান গুনতে হতে পারে বলে আশংকা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে একটি ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ আর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত লোন (কিস্তি) পরিশোধ করতে কোন সমস্যা নাই বলেও জানান রেজওয়ান ইকবাল খান। তিনি আরও জানান, বেইজলোড পাওয়ার প্লান্ট হওয়ায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ না করতে পারলেও অর্থাৎ প্লান্ট বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি প্রেমেন্ট দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সেই হিসাবে একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ বাণিজ্যকভাবে সরবরাহ করে এবং ক্যাপাসিটি প্রেমেন্ট এই দুই মিলে বিদেশি লোনের কিস্তি শোধ করা সম্ভব। সরেজমিনে দেখা গেছে, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানকার দেশি-বিদেশি কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা দিনরাত সমানতলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে নির্দিষ্ট সময় উৎপাদন সক্ষম হতে পেরে উচ্ছ্বসিত এখানকার কর্মকর্তারা। কয়লাবাহী জাহাজ জেটিতে ভেড়ার পর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কয়লা লোড আনলোড হলেও ধাপে ধাপে তা মনিটিরং করছেন দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা। আবার সর্বোচ্চ চিমনি দিয়ে কয়লা পোড়ানোর পর যে ধোঁয়া বের হয় সে বিষয়ে তদারকিতে ব্যস্ত আছেন বেশ কয়েকজন। পানি শোধনাগারে দেখভাল করছেন পর্যায়ক্রমে শ্রমিক ও কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এখানে প্রতিদিন প্রায় ২৯ কোটি ৬লাখ লিটার পানি প্রয়োজন হয়। যার ৯৫ভাগ দ্বিতীয়বার শোধন করে কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। কথা হয় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী সাইম রহমানের সাথে। তিনি জানান, বিদেশি শ্রমিকসহ কর্মকর্তারা বাংলাদেশিদের সাথে আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। পায়রা ১৩২০ মেঘাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার খোরসেদুল আলম জানান, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন দরকার হচ্ছে ১৩হাজার টন কয়লা। যা ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে সরাসরি বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালে ভিড়ছে। কয়লা ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য এখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আছে শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। তিনি জানান, কয়লাবাহী জাহাজ সরাসরি টার্মিনালে ভিড়ানোর পর ওই জাহাজ থেকেই সরাসরি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কনভেয়ারের মাধ্যমে কোল্ডডোরে পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানেই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব প্রসেসিং। যে কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের কোন সুযোগ নাই এখানে। তবে স্থানীয়রাও এখন অবধি এখানকার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পায়নি বলে জানান। কথা হয় ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ তালুকদারের সাথে। তিনি জানান, যে রকম আশংকা ছিল সেরকম কিছুই না। স্থানীয়দের ধারণা ছিল বিদ্যুতের ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন হবে কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছেনা। তাছাড়া গত এক বছরে এখানকার কোন গাছপালার পাতার বর্ণ পর্যন্ত রদবদল হয়নি। আন্ধারমানিক নদীর তীরে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই নদীটি ইলিশের অভয়াশ্রম হিসাবে চিহ্নিত। কিন্তু গত একবছরে এই নদীতেও তাপবিদ্যুতের কোন প্রভাব এখন পর্যন্ত কোন জেলের নজরে আসেনি। আবুবকর মৃধা (৪৫) নামের এক জেলে বলেন, ‘২০ বচ্ছর ধইর‌্যা এই গাঙ্গে মাছ ধর্ই্যা সংসার চালাই। মোর নিজের জমিও গ্যাছে তাপে। ব্যাবাকে (সবাই) কইছে মাছ ধরা শ্যাষ। কারেন্ট বানাইরে এ্যাহানে আর মাছটাছ পামুনা। সব মইরা যাইবে। কিন্তু এ্যাহনও দ্যাহি সবঠিক আছে। মাছতো পাইতাছি আগের নাহান।’ ইলিশের অভয়াশ্রমে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রভাব বা পরিবেশের ওপর এর কোন প্রভাব পড়ছে বা পড়বে কী না তা এখনই বলা মুশকির বলে জানান দেশের জ্যেষ্ঠ ইলিশ গবেষক ডা. আনিসুর রহমান। তিনি জানান, এটি নিয়ে আমাদের ব্যাপক গবেষণা করতে হবে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান ফটকের বাইরে চায়ের দোকানদার গাজী সামসুর রহমান (৫০) বলেন, ‘এ্যাহানে যে কারেন্ট অয় হ্যাতো ট্যার পাইনা। ধোঁয়া মোয়া কুম্মে যায় হ্যাতো দ্যাহিনা।’ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) শাহ্ আব্দুল মওলা (হেলাল) জানান, এখান পর্যন্ত ৬৪টি জাহাজে প্রায় ১১লাখ টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০লাখ টন কয়লা পোড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, ৬৬০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন সাড়ে ৬হাজার টন কয়লা দরকার। তবে রাবনাবাদ চ্যানেলে নাব্যতার কারণে মাদারভ্যাসেল সরাসরি তাদের জেটিতে ভিড়তে না পারায় অনেকটা প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘গত বছর তাদের নিজস্ব ওয়েতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করায় মাত্র ৭টি মাদার ভ্যাসেল সরাসরি তাদের জেটিতে ভিড়তে পেরেছিল। যেগুলোর ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪৫ থেকে ৫০হাজার টন। এরপর ড্রেজিং না হওয়ায় ছোট ছোট ভ্যাসেরে করে ২০ থেকে ২৫হাজার টন কয়লা বহন করাতে হয়েছে। তবে বর্তমানে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করায় পূনরায় আশার আলো দেখছেন তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)-এর মধ্যে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি হয় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। পরে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। মূল কাজের পুরো তদারকি করছে চীনের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com