চলচ্চিত্র নিয়ে ভালো কোনো খবর অনেক বছর যাবৎই নেই। যেসব খবর প্রকাশ পায় তার কোনোটিই চলচ্চিত্র উন্নয়নের কাজে নয়। তাই মিডিয়াপাড়ার অনেকেই বলেন, চলচ্চিত্রপাড়ায় প্রতিদিন নাটক হচ্ছে! নতুন নাটকের নাম, শিল্পী বয়কট। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খানকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন বয়কটের পর শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৯ জুলাই মানববন্ধন করেন সমিতির সদস্যপদ হারানো শিল্পীরা।
অন্যদিকে বয়কটের প্রতিবাদে সেদিন সন্ধ্যায় ছিল শিল্পী সমিতির সংবাদ সম্মেলন। তারা জানান, সাত দিনের মধ্যে বয়কট প্রত্যাহার করা না হলে কর্মবিরতিতে যাবে শিল্পী সমিতি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সমিতি থেকে লাভ কী? যার সদুত্তর নেই কারও কাছে। করোনাকালীন এই দুর্যোগের মধ্যে হঠাৎ করেই শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে মানববন্ধন এবং পদত্যাগ দেশের চলচ্চিত্রশিল্পী ও শিল্পীদের সমিতির জন্য একটি অপমান ও অসম্মানের ব্যাপার বলে মনে করছেন অনেকে।
আবার অনেকে বলছেন, এটা নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করা উচিত। কিংবদন্তি নায়ক আলমগীর বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। আমার কাজ শিল্পচর্চা করা। শিল্পী কখনো এর বাইরে যেতে পারে না। এসব কর্মসূচি, সভা, সমাবেশ শিল্পীর কাজ নয়। কোনো পরিস্থিতিতেই আমি অস্থিরতাকে প্রশ্রয় দিতে পারি না। এটা নেহাতই চলচ্চিত্রশিল্পকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। শিগগিরই এসব ভুলে এক হয়ে কাজ করা উচিত, যাতে এই শিল্প আবার সতেজ হয়ে ওঠে।’
চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষে মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, চলচ্চিত্রের শৃঙ্খলা ও নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য এ বছরের শুরুতে চলচ্চিত্রের সব সংগঠন একত্রিত হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। চলচ্চিত্রের সব সমিতি এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও শিল্পী সমিতি শুধু ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বিরোধিতা করে। আমরা তাদের বোঝানোর জন্য কয়েকবার মিটিং করি। শিল্পী সমিতির উপদেষ্টা কমিটিতে আছেন এমন সিনিয়র শিল্পীদের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা এর বিরোধিতা করে।’
এসব বিষয়ে কথা বলতে একদমই রাজি নন শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। তিনি বলেন, দেখুন করোনার কারণে এখন চলচ্চিত্রের অবস্থা খুবই খারাপ। সবাই আমরা আছি অস্থির অবস্থায়। সবার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত কী করলে এর সঙ্গে জড়িত সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। দুই ঈদ যেতে চলল নতুন ছবি নেই। অনেকেই অনেক কষ্টে আছে। এর মধ্যে এসব নিয়ে কথা না বলি।’
চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘করোনার কারণে সত্যিই চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়। আমরাও অনেকেই দূরে আছি এফডিসি থেকে। গণমাধ্যমে দেখেছি শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে চলচ্চিত্রের সব সংগঠন মিলে বয়কট করেছে। সেদিন দেখলাম শিল্পীরা পদত্যাগ চাচ্ছে এই দুই শিল্পী নেতার। এটা হতাশার বিষয় আমাদের জন্য। এর আগে যখন ১৮৪ জন শিল্পীকে বাতিল করা হলো তখন আমি নিজেও কমিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছিলাম। তাই আমি এর সাক্ষী। এদের অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা কয়েকজন যখন ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলতে চাইলাম তখন এই দুজনের (সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান) সঙ্গে অনেক বাদানুবাদ হয়েছিল। আমাদের বলতে দেওয়া হয়নি কোনো কথা। স্পষ্ট দেখছিলাম সবাইকে অন্ধকারে রেখে কেউ কেউ স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব কারণেই কিন্তু আমি আর পরে তাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাইনি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা এমনিতেই ধ্বংসপ্রায়। তার ওপর এই করোনার আঘাতে একেবারেই ভেঙে পড়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে যে খরচ হচ্ছে তা উঠিয়ে আনা এখনকার প্রেক্ষাপটে অসম্ভব। তাই কীভাবে নির্মাণ ব্যয় কমানো সম্ভব সেটা নিয়ে কাজ করছিলাম। কিছু সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম। তখন শিল্পী সমিতির নির্বাচন চলছিল বলে তারা আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে যোগ দেননি। কিন্তু ফারুক, আলমগীর, কবরী, সোহেল রানার মতো সিনিয়র শিল্পীরা আমাদের সিদ্ধান্তগুলোকে সম্মান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু বর্তমান শিল্পী সমিতি সেটা মানতে চায়নি। সবাইকে সবকিছু মানতে হবে, তেমন কোনো কথা নেই। তারা আমাদের সঙ্গে কোথাও বসে আলোচনা করলেই তো সব সমাধান হয়ে যেত। তারা তা না করে নিজেদের মতো করে নানা পদক্ষেপ নেয়। যা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের পরিপন্থী। আমি চাই এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হোক।’
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এ বিষয়ে বলেন, ‘চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নতুনভাবে বলার কিছুই নেই। মানুষ কাজ করতে পারছে না, উপার্জন করতে পারছে না। সেই জায়গায় যদি এমন দলাদলি হয় তা হলে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
চলচ্চিত্রের এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিল্পীর সদস্যপদ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়েছেন। তার কৃতকর্মের জন্য তাকে ১৮ সংগঠন চলচ্চিত্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। আমি চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে এই শিল্প মাধ্যমের সার্বিক উন্নয়নে উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।’
প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘চলচ্চিত্রের স্বার্থবিরোধী কাজ করার জন্য জায়েদ খানের প্রযোজক সমিতির পদটি বাদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ জায়েদের সঙ্গে কাজ করবেন না।’
আলমগীর
আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। আমার কাজ শিল্পচর্চা করা। শিল্পী কখনো এর বাইরে যেতে পারে না। এসব কর্মসূচি, সভা, সমাবেশ শিল্পীর কাজ নয়।
মুশফিকুর রহমান গুলজার
চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিকে সব সমিতি সাধুবাদ জানালেও শিল্পী সমিতি শুধু ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বিরোধিতা করে।
শাকিব খান
করোনার কারণে আমরা আছি অস্থির অবস্থায়। আমাদের চিন্তা করা উচিত কী করলে এর সঙ্গে জড়িত সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
রিয়াজ
সবাইকে অন্ধকারে রেখে কেউ কেউ স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব কারণেই কিন্তু আমি আর পরে তাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাইনি।
সোহানুর রহমান সোহান
তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ নেয়, যা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের পরিপন্থী। আমি চাই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হোক।
ইলিয়াস কাঞ্চন
মানুষ কাজ করতে পারছে না, উপার্জন করতে পারছে না। সেই জায়গায় যদি এমন দলাদলি হয় তা হলে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়।
খোরশেদ আলম খসরু
‘জায়েদ খানের প্রযোজক সমিতির পদটি বাদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ জায়েদের সঙ্গে কাজ করবেন না।’
Leave a Reply