স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত কিছু সিনিয়র নার্সের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে গাফিলতি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো ও সেবার মান ক্ষুন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একটি প্রভাবশালী চক্র হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও ওয়ার্ড ইনচার্জ বণ্টন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে আসছে, যার ফলে রোগীসেবায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ (স্বানাপ) নামে একটি সংগঠনের নেতৃস্থানীয় কিছু নার্স— সংগঠনের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ,
সাধারণ সম্পাদক শুভ্রা রানী নাথ সহ হামিদা বেগম, মিতালী কর্মকার, মিতা রানী, শাহিনা সুলতানা, কামরুন্নাহার ও হুমায়ূন কবির (খাজা) সহ আরো কয়েকজন—দীর্ঘদিন যাবৎ হাসপাতালের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখে আসছেন।
অভিযোগ রয়েছে, তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে একাধিক সুবিধা আদায় করলেও বাস্তবে তাদের কর্মদক্ষতা ও সেবার মান নিয়ে রয়েছে ব্যাপক প্রশ্ন। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড গুলোতে দায়িত্ব পাওয়ার পরও তাদের অনেকের নিয়মিত উপস্থিতি বা দায়িত্ব পালনের নজির খুব কম।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ৭ই আগস্ট আন্দোলনের সময় ওই নার্সদের কিছু সদস্য শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে “শান্তি মিছিল” করেন, যখন আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছিল। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তখনও কেউ মুখ খুলতে সাহস করেননি।
একাধিক সূত্র জানায়, এই নার্সদের একটি অংশ আওয়ামী পেশাজীবি সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে কর্মস্থলে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এসেছে। এমনকি সেবার সময় তারা নেতাদের রুমে, মাঠে বা বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) জাকির হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। সূত্র জানায়, তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, নার্স মিতালী কর্মকারের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এর প্রভাবে অনেক অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, জাকির হোসেন কর্মীদের ভয় দেখিয়ে প্রভাব খাটাতেন এবং টাকার বিনিময়ে নার্সদের ওয়ার্ড ইনচার্জ হিসেবে নিয়োগ দিতেন। এখনো তিনি অফিসে বহাল থাকলেও অনেকেই তাকে ‘রাজনৈতিক ভয় হিসেবে বিবেচনা করেন। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করছেন। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি স্বরূপ বলে মনে করছেন জনসাধারন।
একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই নার্সদের রাজনৈতিক ছত্রছায়া এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, দীর্ঘদিন কেউ তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনি। এখন সময় এসেছে স্বচ্ছ তদন্ত ও সেবা পুনরুদ্ধারের।”
সচেতন মহল মনে করছেন, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত না হলে স্বাস্থ্যখাতের শুদ্ধি সম্ভব নয় বলে তারা মত প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, জুলাই আগস্ট এর আন্দোলনের পর ফ্যাসিবাদী নার্সদের বিভিন্ন হাসপাতালে শাস্তি ও বদলি করা হলেও জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে কোন শাস্তি ও বদলি করা হয়নি।
Leave a Reply