মালয়েশিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক সহ¯্রাধিক অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিককে বৈধ করে ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার প্রস্তাব দেশটির কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মালয়েশিয়ার শ্রমমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে দেখা করে এমন প্রস্তাব দেন। তবে তার দেয়া প্রস্তাবটি তারা আমলে নিলেও গতকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। বুধবার মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, তারা আমার দেয়া প্রস্তাবকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এরআগে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পুরো পৃথিবীর অর্থনীতি থমকে যাচ্ছে। এর ফলে অনেক দেশ থেকেই বাংলাদেশীদের ফেরত চলে আসতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু মালয়েশিয়া। এখানে থাকা প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের মধ্য থেকে তারা একজন শ্রমিককেও দেশে ফেরত পাঠাননি। কারণ আমাদের হাইকমিশনার স্যার বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে সেভাবেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন। শুধু তাই নয়, যেসব কোম্পানি অর্থনৈতিক সঙ্কটে বন্ধ হয়ে গেছে, ওই কোম্পানির বেকার শ্রমিককেও দেশে ফেরত না পাঠিয়ে অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। যার কারণে কোনো শ্রমিককে এখনো দেশে ফেরত যেতে হয়নি।
গতকাল মালয়েশিয়ার বুকিং বিনতান থেকে জনৈক বাংলাদেশী নয়া দিগন্তকে নাম না জানানোর শর্তে বলেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘লকডাউনের ভেতরেই অভিবাসন পুলিশ কুয়ালালামপুরের সিটি ওয়ান প্লাজায় অভিযান চালায়। এ সময় বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিককে পুলিশ হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। এরমধ্যে সজিব নামে একজন বাংলাদেশী ধরা পড়েছে। যে আমার আত্মীয়। বর্তমানে বুকিত জলিল নামক ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক আছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাকে টিকিট কেটে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আমাদের বাংলাদেশের হাইকমিশনার এদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকদের বৈধ করার প্রস্তাব দেন। এরপরই আর তাকে দেশে না পাঠিয়ে অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। কিন্তু এদেশের সরকার হাইকশিনারের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধতার বিষয়টি শুধু ঝুলে গেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরায় রায়হান কবির নামে এক বাংলাদেশীর সাক্ষাৎকার দেয়ার কারণে।
উল্লেখ্য, আলজাজিরা টেলিভিশনে মালয়েশিয়ায় লকডাউনের ভেতরে পুলিশের অভিযানে বাংলাদেশীসহ অন্যদের হ্যান্ডক্যাফ পরিয়ে আটক করে নেয়া সংক্রান্ত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়। এরপরই মালয়েশিয়া সরকার প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করে। এরপরই প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেয়া বাংলাদেশী যুবক রায়হান কবিরের ভিসা বাতিল করে তাকে দ্রুত অভিবাসন পুলিশের কাছে আত্মসর্মপণ করতে তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে নাম, ঠিকানা ও ছবি দেয়া হয়। এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ নাগরিক হিসাবে রায়হান কবিরকে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানানো হলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত অভিবাসন পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের (শ্রম উইং) দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আসলে এ বিষয়গুলো খুবই স্পর্শকাতর। আমাদের যেকোনো বিষয়ে কথা বলার আগে চিন্তাভাবনা করে বলাই ভালো। ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ অন্য দেশের ওয়ার্কাররা এখানে আছে না ? আমরা কেনো আগ বাড়িযে কথা বলতে যাবো?
Leave a Reply