নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শেষ হয়েছে সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ২৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে উঠে যায় ২ মাসের এই নিষেধাজ্ঞা। একই সাথে শুরু হয়েছে ইলিশের প্রধান মৌসুম। আগামী অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত থাকছে না কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা। ফলে ইলিশ শিকার মৌসুম বজায় থাকছে এই দীর্ঘ আড়াই মাস। ইতিমধ্যে নদ-নদী এবং সাগর মোহনায় ইলিশ আহরণে নেমে পড়েছেন জেলেরা। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে বিভাগে প্রায় ৩ লাখ জেলে রয়েছেন। চলতি মৌসুমে এই বিপুল সংখ্যক মৎস্যজীবী ইলিশ আহরণে ব্যস্ত সময় পার করবেন। এদিকে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়বে- এমন আশা জেলে এবং সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, গত ২০ মে থেকে শুরু হয় সাগরে সবধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। এই ২ মাসে জাটকা আহরণেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। এরই মধ্যে শুরু হয় বর্ষা মৌসুম। সাধারণত বর্ষাকালকেই ইলিশের প্রধান মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া গত সোমবার ছিল অমাবশ্যা। এর প্রভাবে নদ-নদীগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। আর এসব কারণেই জালে ব্যাপক সংখ্যক ইলিশ ধরা পড়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে জুলাই’র প্রথম থেকেই। তখন থেকেই মৎস্য মোকামে ইলিশের আমদানি ঘটতে শুরু করে। বরিশালের পোর্ট রোডের আড়তদারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জুলাই এর প্রথম থেকেই সেখানে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ মণ ইলিশের আমদানি ঘটছে।
গতকাল পোর্ট রোড ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ত সময় পার করছেন সেখানের আড়তদার এবং ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা শেষে কিছু কিছু ট্রলারও ফিরছে ঘাটে। সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত সাগর মোহনা থেকেই মাছ ধরা শেষে ফিরছে ফিশিং বোটগুলো। নদীর মাছও কিছু আছে। বিশেষ করে সোমবার (২০ জুলাই) থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরপরই মাছ ধরা পড়ছে জালে। দেশের ২য় বৃহত্তম ইলিশ মোকাম পাথরঘাটায়। সেখানের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার আহমদ উল্লাহ জানান, গত ১ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৯১ দশমিক ৭২৪ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে সেখানে।
এদিকে এবার ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে তেমন জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। করোনা মোকাবেলায় তাদের ব্যস্ত থাকার সুযোগে নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করে মৎস্য আহরণ করেছেন জেলেরা। তবে বিষয়টি ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রজনন মৌসুম, ডিম পাড়ার সময় এবং জাটকা নিধনরোধে বছরের বিভিন্ন সময় কয়েক ধাপে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদকাল দাঁড়ায় ৮ মাস পর্যন্ত। অন্যান্য বছরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে ব্যাপক ভূমিকা ছিল প্রশাসনের, যার সুফলও মিলেছে হাতেনাতে। বিগত দুটি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে আহরিত হয়েছে ২ লাখ ২৬৭ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। এবছরও সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভবপর হবে বলে আশা মৎস্য অধিদপ্তরের।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষাকালে নদ-নদীতে স্বাভাবিকভাবেই পানি বৃদ্ধি পায়। আর এসময়টায় নতুন পানির খোঁজে সাগর থেকে নদীতে চলে আসে ইলিশ। তখনই জেলেদের জালে ধরা পড়ে এই রূপালি সম্পদ। আর এ কারণে বর্ষাকালকে ইলিশের প্রধান মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েক বছর যাবত নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে বিলম্বে। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরু থেকেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নদ-নদী এবং সাগরের মোহনায় ইলিশ ধরার উপযুক্ত সময় এখনই। এ বছরও বিগত বছরের মতই ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply