নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমন পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে এক সপ্তাহ আগের অবস্থানে পৌছেছে। মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় নতুন করে আরো ১০২ জনের দেহে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ২৩ জুলাই ১৩০ জন আক্রান্ত হবার কথা বলা হয়েছিল। এসময়ে ঢাকার দুটি হাসপাতালে পিরোজপুরের নেসারাবাদ এবং পটুয়াখালীর বাউফলের দুজন করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। এছাড়া শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে বরিশালের আরো দুজন মারা গেছেন। শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২৮৭ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৯৫ জনের দেহে করোনা ভাাইরাস সনাক্ত হয়েছে। করোনা সনাক্তের হার ৩৩%-এরও বেশী।
এনিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে করেনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা সরকারী হিসেবে সাড়ে ৫ হাজার অতিক্রম করে আরো ৭৭ জন যোগ হল। মৃত্যুর সংখ্যাটা ১০৯ বলা হলেও সে তালিকায় গত ২৪ ঘন্টায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত দুজনের হিসেব ধরা হয়নি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেবনুযায়ী এসময়ে আরো ১০৮ জন সহ সর্বমোট ৩ হাজার ৩১৪ জনের সুস্থ হয়ে ওঠার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসবনুযায়ী মঙ্গলবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশাল,বরগুনা ও ঝালকাঠীতে করেনা সংক্রমণ যথেষ্ঠ বেড়েছে। বরিশালে নতুন আক্রান্তের সংখ্যাটা পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টার ১৩ থেকে মঙ্গলবারে ৩০ জনে উন্নীত হয়েছে। ফলে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ২ হাজার ৩৫৬ জনে। মৃতের সংখ্যা ৪০। আর গত ২৪ ঘন্টায় নুতন ৫০ জন সহ ১ হাজার ৪৩২ জন সুস্থ হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেবে বলা হয়েছে। তবে এখনো বরিশাল জেলা ও মহানগরী করোনা সংক্রমণে দক্ষিণাঞ্চলের হটস্পট হিসেবে সর্বাধীক ঝুকিপূর্ণ অবস্থানেই রয়েছে। গত ৪ জুলাই এ মাসের সর্বোচ্চ সংক্রমন হয় বরিশাল জেলায়, ৬২ জন। আর ২৬ জুলাই সর্বনি¤œসংক্রমন ছিল ৮। কিন্তু এর পরের দুদিনই তা আবার ক্রমশ বাড়ছে। ঝালকাঠীর পরিস্থিতি আরো খারাপ। জেলাটিতে আগের দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা একজন থাকলেও গত ২৪ ঘন্টায় তা ২২-এ উন্নীত হয়েছে। জেলায় এপর্যন্ত মাট ৪৫৮ আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ১২ জন।
আর স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেবনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ২৬ জন সহ মোট সুস্থ হয়েছেন ২৫৭। বরগুনাতেও গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের আট থেকে ১০ জনে উন্নীত হয়েছে। জেলাটিতে মোট আক্রান্ত ৫৯৫ হলেও মারা গেছেন ১৩ জন। ২৪ ঘন্টায় ৭ জন সহ মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যাটা ৩৩৭।
অপরদিকে পটুয়াখালীতে এসময়ে আক্রান্তর সংখ্যা আগের দিনের ১৭-এর স্থলে ১৪ জনে হ্রাস পেলেও জেলার বাউফলের এক রোগী ঢাকার একটি সরকারী হাসপাতালে মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলাটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২৯-এ উন্নীত হল। আক্রান্তের সংখ্যাও সরকারী হিসেবে হাজার ছুই ছুই-৯৯৬। পিরোজপুরে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের ২৭ থেকে ২১-এ হ্রাস পেলেও জেলাটির নোসারাবাদের একজন করোনা রোগী ঢাকার হাসপাতালে মারা গেছেন। ফলে জেলাটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাড়াল ১০।
সরকারী হিসেবে আক্রান্ত ৬৬২। ভোলাতেও আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের ৮ থেকে মঙ্গলবার ৫ জনে হ্রাস পেয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের সদ্য স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে দ্বিতীয় দিনে ২১ জনের নমুনা পরিক্ষায় এ পাঁচজন রোগীর দেহে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। ফলে জেলাটিতে সরকারী হিসবে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ শতে পৌছল, মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ১৪ জন সহ জেলাটিতে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩৬২ বলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
অপরদিকে শের এ বাংলা মেডিকেল হলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে সোমবার বিকেল থেকে সন্ধার মধ্যে দুজনের মৃত্যু ঘটেছে। এরমধ্যে বরিশালের শায়েস্তাবাদের ৫০ বছর বয়স্ক একজন করোনা পজেটিভ নিয়ে মৃত্যু বরন করলেও আইসোলেশন ওয়ার্ডে মৃত্যুবরনকারী ৯০ বছরের এক বৃদ্ধের নমুনা পরিক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়নি। এনিয়ে হাসপাতালটির এদুটি ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ১ হাজার ১৫৭ জনের মধ্যে ১৬৩ জনের মৃত্যু হল।
হাসাতালটির আইসালেশন ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ৬জন রোগী ভর্তি হলেও এসময়ে ছাড়া পেয়েছেন ১০জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩৬জন। অপরদিকে করোনা ওয়ার্ডে ৪ জন নতুন রোগী ভর্তি করা হলেও ছাড়া পেয়েছেন ৫ জন। চিকিৎসাধীন ৩০ জন। হাসপাতালটিতে ভর্তিকৃতদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৩ জনের দেহে করোনা পজেটিভ ফল মিলেছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply