গৌরনদী প্রতিবেদক ॥ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বাসষ্টান্ড সংযোগ সড়ক থেকে নলগোড়া সড়কে খানাখন্দে পরিণত হয়ে বর্ষায় জলাশয় রুপান্তরিত হয়েছে। এতে জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া দূর্ঘটনা লেগেই আছে। গত এক মাসে দেড় শতাধিক দূর্ঘটনায় কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী যাত্রীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৯৮-৯৯ইং অর্থ বছরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাবুগঞ্জের আগরপুর হয়ে সরিকলের নলগোড়া পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়কটি পাঁকা করে। এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য ২০০১ সালে বরিশাল হইতে নলগোড়া পর্যন্ত লোকাল বাস চলাচল শুরু করে। ২০০৪- ২০০৫ অর্থ বছরে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি বরিশাল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে সড়কটিতে বড় ধরনের কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। তবে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানান, ২০১৫- ২০১৬ অর্থ বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার হয়। প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামেমাত্র কাজ করায় সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের ১৭ কিলোমিটারই খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের কারণে বাস সহ যান চলাচল অনুপোযোগী হয়ে গেছে। চন্দ্রহার, সাকোকাঠী, পালপাড়া, শাহজিরা, বটতলাসহ ১৫টি স্থানে বড় বড় গর্ত হয়ে জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। চন্দ্রহার বাজারের পশ্চিম পাশে সেতুর গোড়া থেকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটর জায়গায় বহু আগেই পিচ পাথরসহ ইটের খোয়ার ম্যাকাডাম উঠে গিয়ে কাঁচা সড়কে পরিনত হয়েছে।
সাকোকাঠী বাসষ্টান্ডের দুই পাশে রয়েছে শতাধিক গর্ত। পালপাড়া ও ঋৃষিপাড়া এলাকার দুই পাশ ভেঙ্গে গিয়ে কার্পেটিং হারিয়ে গেছে। সড়কের মাঝখান উচুঁ হয়ে দুই পাশ গভীর গর্তের কারণে বিপদজনক হয়ে উঠেছে। এ সময় এলাকাবাসি জানান, বছরের পর বছর সড়কটির এ বেহাল দশা হলেও সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেই। সড়কটির খানাখন্দ, গর্তে ভরপুর, মাঝে মাঝে মনে হয় জলাশয়। এ সড়কে চলাচলকারী অধিকাংশ যানবাহন দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বরিশাল হতে মিয়ারচর নলগোড়া লোকাল বাস চলাচল।
শরিকল গ্রামের তৈয়ব আলী, হোসনাবাদ গ্রামের বাবুল হোসেন, হরহর গ্রামের সহকারী শিক্ষিকা মায়া রানী শিকদার, সরিকল বাজারের ইমাম হোসেন, আগুরপুর গ্রামের মাহতাব উদ্দিন জানান, প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর, শরিকল ও নলচিড়া ইউনিয়ন এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ গৌরনদী উপজেলা ও বরিশাল জেলা সদরে যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া ওই অঞ্চলের সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন এ সড়কে আসা যাওয়া করে থাকে। তাদের যাতায়াতের মাধ্যম হচ্ছে লোকাল বাস, মাহেন্দ্রা, অটোটেম্পু, ইজিবাইক ও ভ্যান গাড়ি। সড়কটির খানাখন্দের কারনে অত্যাধিক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এতে যাত্রীদের দূর্ভোগ বহুগুনে বেড়ে গেছে। ট্রাক চলাচল বন্ধ হওয়ায় সরিকল, আগরপুর, মিয়ারচর, সাকোকাঠীসহ বিভন্ন বাজারে ব্যসায়ীরা তাদের মালামাল পরিবহন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। সড়কের দুরাবস্থার কারণে মাল পরিবহনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে সাকোকাঠী গ্রামের বিলকিস বেগম (৪০) বলেন, ‘সড়ক নয় যেন জলাশয়ে মরন ফাঁদ, এ সড়কে যাতায়াত করলেই অসুস্থ্য হয়ে পড়তে হয় । গর্ভবতি নারীরা এ সড়কে যাতায়াত করলে পেটের সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে যায়। এ দুরাবস্থা দেখার যেন কেউ নেই’।
আগরপুর গ্রামের তানজিদ হোসেন, সরিকল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজন বরিশালটাইমসকে জানান, বছরের পর বছর একটি সড়কের বেহাল দশা থাকলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। এ সড়কে গত এক মাসে শতাধিক দূর্ঘটনায় কমপক্ষে দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক একাধিক চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিশালটাইমসকে জানান, গত ২ থেকে ৩ বছর আগে বরিশাল এলজিইডি সড়কটি সংস্কারের প্রায় ২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রভাবশালী ঠিকাদার নামেমাত্র কাজ করে সংস্কারের টাকা আত্মসাত করেছে। ফলে সড়কের দুরাবস্থা রয়েই গেছে। সড়কের মধ্যে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পুরো সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা জনসাধারণের পায়ে হেঁটে চলাচলই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই সড়কে গত এক মাসে দেড় শতাধিক দূর্ঘটনায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
এলাকাবাসী, যান চালকসহ ভূক্তভোগীরা জরুরী ভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি সংস্কার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানান। বাটাজোর-শরিকল সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
Leave a Reply