নরসিংদী শহরসংলগ্ন মেঘনা নদীতে নৌভ্রমণে যাওয়া এক কিশোরকে শত শত লোকের সামনে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার বিকালে শহরের শেখ হাসিনা সেতুর নিচে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কিশোর অনিক (১৫) সদর উপজেলার কালাইগোবিন্দপুর এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ছেলে ও সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। শহিদুল্লাহ মিয়া সপরিবারে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া মহল্লায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে।
সদর উপজেলার চরাঞ্চলের সঙ্গে নরসিংদী শহরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে শেখ হাসিনা সেতুর মাধ্যমে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ঘুরতে যান এই সেতুতে। অনিককে যখন পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তখন শত শত মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও নিহত কিশোরের পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে শেখ হাসিনা সেতুর নিচে (চরাঞ্চল অংশে) পাশাপাশি দুটি নৌকায় দুই দল কিশোর-তরুণ অবস্থান করছিল। দুই নৌকাতেই সাউন্ডবক্সে উচ্চস্বরে গান বাজছিল। কিছুক্ষণ পরই বালু ছোড়াছুড়ি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে নৌকার পাটাতনের কাঠ দিয়ে ওই কিশোরের মাথায় আঘাত করা হলে সে পানিতে তলিয়ে যায়। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ সদর হাসপাতালে গিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ আমীরুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের
মর্গে ওই কিশোরের লাশ আনা হয়। বুধবার ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা।
এদিকে এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দুই পক্ষই লাঠি, বাঁশ ও নৌকার পাটাতনের কাঠ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। এ সময় এক কিশোরের মাথায় নৌকার পাটাতনের কাঠ দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ওই কিশোর নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় ঘটনাস্থল থেকে লোকজন সরে যেতে থাকেন। তবে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের ভিডিওটি এই ঘটনার কিনা তা যাচাই করে দেখছে পুলিশ।
নিহতের বাবা শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনিক প্রায়ই নানাবাড়ি অর্থাৎ কালাই গোবিন্দপুর যেত। মঙ্গলবার সকালেও সেখানে গিয়েছিল সে। ওই এলাকায় তার বয়সীরা নৌকাভ্রমণে গেছে খবর পেয়ে বিকাল পাঁচটার দিকে আরও তিনজনের সঙ্গে সেতুর নিচে যায় সে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার দত্ত চৌধুরী জানান, নৌকায় থাকা ও নদী থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তিন কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারা এ ঘটনার সাক্ষী হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানা অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply