নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উজানে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে বরিশাল সদরের ৬টি স্থানে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলেও সাময়িক নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। নদীতে সব হারিয়ে দিশেহারা বরিশাল সদরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তাদের অনেকেই বসবাস করছেন অন্যের জমিতে কিংবা সরকারি রাস্তার পাশে। এখনও নদী তীরবর্তী মানুষ রয়েছেন চরম আতংকে। বিশেষ করে সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়িতে কীর্তনখোলার ব্যাপক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে এলজিইডি’র পাকা রাস্তার একাংশ। এখন চারন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বসত ভিটা ও লাইব্রেরী নদী গর্ভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে এবং স্থায়ী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের আশ্বাস দিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আপদকালীন এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণ জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ।
বরিশাল সদরের বেলতলা, চরবাড়িয়া, লামছড়ি, আটহাজার ও হবিনগর ৫টি পয়েন্টে কীর্তনখোলা এবং আড়িয়ালখাঁ নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ইছাগুড়া কালীগঞ্জ বাজার। লামছড়িতে কীর্তনখোলার ভাঙনে এলজিইডি’র অন্তত দেড়শ’ ফুট পাকা রাস্তা বিলীন হয়েছে। এখন চারন দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বসত ভিটা ও তার নামে প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের বাড়িঘর-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি হুমকিতে রয়েছে। এখানে এর আগে জিওব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও একটি চরের কারণে ঢেউ আছড়ে পড়ে ভাঙনে লামছড়ি। এখন তারা ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বেলতলা, চড়বাড়িয়া, আটহাজার এবং হবিনগর এলাকায়ও কীর্তনখোলার গর্ভে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে সহায় সম্পদ।
এদিকে আড়িয়ালখাঁ নদীর ভাঙনে বিপর্যস্ত সদরের ইছাগুড়া কালীগঞ্জ বাজার। সাম্প্রতিক সময়ে নদী ভাঙনে সর্বহারা হয়েছে শত শত পরিবার। এখন তারা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে-সরকারি রাস্তার পাশে। চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এখনও নদী তীরবর্তী মানুষের দিনকাটে আতংকে। তারা ভাঙনে রোধে দ্রুত স্থায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। ঈদের বন্ধে সদর আসনের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাথে কথা বলেন তিনি। এ সময় নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিমন্ত্রী দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মধু। পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, বরিশাল সদরের ৬টি পয়েন্টে নদী ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। কয়েকটি জায়গায় ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলে আপদকালীন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিছু জায়গায় চর কেটে নদীর অপর পাশের ভাঙন প্রতিরোধ করতে হবে। ভাঙনের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে কীর্তনখোলা নদীর অনেক জায়গায় বাঁক কেটে সোজা করতে হবে। একই সাথে ৬টি স্থানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলেন প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ।
Leave a Reply