করোনার কারণে দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর ১৭ আগস্ট থেকে সীমিত আকারে খুলছে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে থাকছে বেশকিছু নির্দেশনা। এরপরও পর্যটনশিল্প খুলে দেওয়ার খবরে খুশি হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক, কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্মময় ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে ৫ মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলো। জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে এসব পর্যটন স্পট, ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস, ৩ শতাধিক রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থবিরতা নেমে আসে পুরো পর্যটন শিল্পে। এই সময়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স।
জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট করোণা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির জুম কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসে। কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদসহ কমিটির অন্য সদস্যদের উপস্থিতিতে আগামী ১৭ আগস্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুধু কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল রেস্টুরেন্টসহ এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রাথমিকভাবে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেমন- এ সময়ে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি এবং কমিটি অনুমোদিত গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। গাইডলাইন বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে এবং তা বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য কমিটি গঠন করা হবে। কক্সবাজারে আসা পর্যটকসহ সকলকে বিধিনিষেধ নিজ দায়িত্বে জেনে নিয়ে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। গাইডলাইন অনুসরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কক্সবাজারের স্থানীয় নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলাফেরা করতে হবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে পর্যটনশিল্প বৃহত্তর পরিসরে খুলে দেওয় বা পুনরায় বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে বিধিনিষেধের মাঝেও পর্যটন কেন্দ্র খুলছে এমন খবরে খুশি এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও হোটেল ওশান প্যারাডাইস এর চেয়ারম্যান লায়ন এম এন করিম বলেন, ৫ মাস ধরে হোটেল বন্ধ থাকলেও ব্যাংকের ঋণের কিস্তি বন্ধ থাকেনি। প্রতি মাসে টাকা দিতে হয়েছে। আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছি। তাই যেভাবে হোক পর্যটনশিল্প খুলছে এই খবরে আমরা খুশি।
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ৫ মাসে কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, এ পর্যটন জোনে কাজ করেন এমন লক্ষাধিক শ্রমিক গত ৫ মাস ধরে বেকার হয়ে আছেন। হোটেল মালিকরা ঈদের সময়ও তাদের কোনো বেতন-ভাতা দেননি। তাই এখন পর্যটনশিল্প খোলার খবরে কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, আমরা চাই যে কোনোভাবে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হোক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ব্যবসা করতে চাই।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতে পর্যটকনামা নিষিদ্ধ রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা পেলে আমরা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা যাতে সৈকতে নামতে পারেন এবং কক্সবাজারে আসতে পারেন সেই ব্যবস্থা করব।
Leave a Reply