পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান খুনের ঘটনার ১০ দিনের মাথায় রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনের মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যার কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও লুট করা কিছু নগদ টাকা।
গতকাল শনিবার রাতে মঠবাড়িয়া থানায় এক আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে জানিয়েছেন পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম। তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের মৃত তোজাম্বর আলীর ছেলে অলি বিশ্বাস(৩৮) ও কাওসার বেপারির ছেলে রাকিব বেপারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৩০ জুলাই রাতে ধানীসাফা গ্রামের অটোচালক মো. আয়নাল হকের ভাড়া বাসায় টাকা ও স্বর্ণ লুটের উদ্দেশ্যে একই গ্রামের অলি বিশ্বাস ও তার তিন সহযোগী মুখোশ পরে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে। তারা ঘরের মালামাল তছনছ করার সময় ওই গৃহকর্তা মো. আয়নাল হক চার দুর্বৃত্তকে চিনে ফেলে। টাকা-পয়সা নিয়ে গিয়ে তাকে না মারার জন্য অনুরোধ করে আয়নাল। পরে ওই চার ঘাতক মিলে আয়নাল ও তার স্ত্রী খুকুকে হাত বেঁধে গলায় কাপড় পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং তাদের হাত-পা বাঁধা লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে।
ঘর থেকে দুর্বৃত্তরা বের হয়ে আসার সময় ওই দম্পতির তিন বছরের শিশু কন্যা আশফিয়া কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন ৩১ জুলাই পুলিশ তিনজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম আরও জানান, আয়নাল স্থানীয় সাফা বন্দর কৃষি ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে ঘাতক অলি দেখে ফেলে। এ ছাড়াও আয়নালের স্ত্রী খুকুমনি প্রতিবেশীর ঘরে রাখা কিছু স্বর্ণালংকার সম্প্রতি ঘরে নিয়ে আসার বিষয়টিও অলি জানতে পারে। ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করার জন্যই গত ৩০ জুলাই গভীর রাতে আয়নালের ভাড়া বাড়িতে অলি ও রাকিবসহ চারজন প্রবেশ করে এ লুট ও হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
এ তিন খুনের ঘটনা তদন্ত শুরু করে নামে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর চার সংস্থা সিআইডি, পিবিআই, র্যাব ও ডিবি। ঘটনার ১০ দিনের মাথায় তদন্তে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনী।
পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল ইসলাম এর নেতৃত্বে গতকাল শনিবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত অলির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লুট ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও লুটের টাকা উদ্ধারের জন্য অলির গ্রামের বাড়িতে তাকে নিয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।
অলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুইটি লোহার পাইপ, একটি রামদা ও লুণ্ঠিত কিছু অর্থ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার অপর এক সহযোগী রাকিব বেপারিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে তারা দুজনই এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুজ্জামান মিল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অলি বিশ্বাস ও রাকিব বেপারি হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এ কিলিং মিশনে চারজন অংশ নেয়। অপর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। নিহত গৃহকর্তা দুর্বৃত্তদের চিনে ফেলায় চারজন মিলে পালাক্রমে তিনজনকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে।
পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, তদন্তের স্বার্থে বাকি দুই সহযোগীর নাম এ মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
Leave a Reply