নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদ এবং করোনাকে পুঁজি করে নগরীতে যাত্রীসেবার নামে ছোট যানগুলোতে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। অভ্যন্তরীণ প্রতিটি রুটে যাত্রীদের জিম্মি করে পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে চালকরা। প্রকাশ্যে যাত্রী হয়রানির এমন ঘটনা ঘটতে থাকলেও নীরব ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
জানাগেছে, ‘করোনাভাইরাসের শুরুতে বরিশাল জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। এর পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। তার মধ্যেও বরিশাল নগরীতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলাচল করে থ্রি-হুইলার মাহেন্দ্র, সিএনজি এবং ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। সামাজিক দূরত্ব বজায় দূরের কথা বরং অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই চলাচল করে যানবাহনগুলো। এর ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের পাশাপাশি আদায় করা হয় অতিরিক্ত ভাড়া। রূপাতলী থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত ১০টাকার ভাড়া বাড়িয়ে ২০ টাকা আদায় করা হয়। মাঝে পথে যেখানেই নামুক দিতে হয় ১০ টাকা। করোনার অজুহাত তুলে এমন ভাড়া আদায় করলেও প্রশাসন ছিল নির্বিকার।
এদিকে লকডাউন শেষে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হলেও কমেনি ওইসব ছোট যানের ভাড়া। বরং গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এনে যাত্রীদের কাছ থেকে পূর্বের বর্ধিত ভাড়াই হাতিয়ে নেয় ওইসব শ্রমিকরা। তার মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ে ঈদ উল আযহা। সেই অজুহাতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বর্ধিত ভাড়া আদায়ের হিড়িক পড়েছে। রূপাতলী থেকে লঞ্চঘাট, লঞ্চঘাট থেকে নথুল্লাবাদ, রূপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ, চৌমাথা থেকে সদর রোড ও মেডিকেলসহ প্রতিটি রুটেই জনপ্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আবার ভোর রাতে লঞ্চ থেকে নামা যাত্রীদের বেলায় ভাড়া আদায়ের নামে গলা কাটার অভিযোগতো রয়েছেই। নগরীর সদর রোড এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ইতিপূর্বে সদর রোড কাকলীর মোড় থেকে চৌমাথা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হতো ১০ টাকা এখন সেখানে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে কখনো করোনা আবার কখনো ঈদের অজুহাত তুলছে।
তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে প্রতিটি মানুষেরই দুর্দিন কাটে। তার মধ্যে ছোট যানগুলোতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অমানবিক। দিনের পর দিন অটো, মাহেন্দ্র এবং সিএনজি চালকদের এমন জুলুম চলে আসলেও প্রশাসন কোন কালেই প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। বরং তাদের নীরব ভূমিকার কারণে ভাড়া নিয়ে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে যাত্রীদের।
রূপাতলীর বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম নামের যাত্রী বলেন, ‘নি¤œ আয়ের মানুষ হওয়ায় আমাদের নিয়মিত ছোট যানেই চলাচল করতে হয়। এ কারণে ওইসব যানের চালকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। তারা করোনার কথা বলে ভাড়া বৃদ্ধি করলেও করোনা থেকে সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা করেনি। বরং ঝুঁকি নিয়ে অধিক যাত্রী তুলছে ছোট যানবাহনে। কিছু বলতে গেলেই লাঞ্ছনামূলক কথা বলে। কোন কোন সময় যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়েও দেয় তারা। বাংলাবাজারের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, চাকরির সুবাদে প্রতিদিনই আমাকে বাংলাবাজার থেকে লঞ্চঘাট আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। করোনার পূর্বে ৫টা ভাড়া নিলেও বর্তমানে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত রাখছে। এ নিয়ে বহুবার চালকদের সাথে কথা কাটাকাটিও হয়েছে। কিন্তু ওরা কোনভাবেই ছাড় দিতে রাজি না। বরং ছোট যানের চালকরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই যাত্রীদের জিম্মি করছে। প্রশাসন কেন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় না সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই যাত্রী। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতির জন্য হলেও ছোট যানবাহনে যাত্রীদের জিম্মি দশা থেকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন মাহেন্দ্র, সিএনজি, অটোটেম্পু এবং ইজিবাইক যাত্রীরা
Leave a Reply