ভোলা প্রতিনিধি : খাদ্য ও পানি সংকটে ভোলার চরাঞ্চলগুলোতে মারা যাচ্ছে শত শত মহিষ। প্রতিদিন এভাবে মহিষের মৃত্যুর খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মালিকরা।
ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ছোট বড় মিলিয়ে পঁচিশটি চরে প্রায় চৌদ্দ হাজারের অধিক মহিষ রয়েছে এবং বাংলাদেশের আট ভাগের দুই ভাগ মহিষ রয়েছে ভোলায়। মহিষের মৃত্যুর জন্য মালিকরা দুটি সমস্যাকে দায়ী করেছেন। প্রথমত, তীব্র খাবার সংকট, দ্বিতীয়ত বিশুদ্ধ পানি সমস্যা।
সরেজমিনে জানা যায়, অগ্রহায়ন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত এসব চরে জোয়ারভাটার পানি ওঠে না। তাই নতুন ঘাসও জন্মায় না। যা জন্মায় তা মহিষের পায়ে পায়ে পিষ্ট হয়ে নষ্ট হয়। এখন চরাঞ্চলগুলোতে ঘাসের মূল ছাড়া কিছুই নেই। তাই মহিষের দল কিছু খাওয়ার চেষ্টা করলে মুখের ভেতর মাটি চলে আসে। খাবারের স্বল্পতার সঙ্গে যখন মাটি খেয়ে ফেলা হয় তখন তা পেটে ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। সাথে নতুন মাত্রা যোগ করে নদীর বর্তমানের লবণাক্ত পানি। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শাবক মহিষ। কারণ তারা প্রথমত মায়ের দুধের স্বল্পতার সঙ্গে কাঁচা ঘাস ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ে সবার আগে আক্রান্ত হয় ডায়রিয়ায়।
ভোলা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘সরেজমিনে মৃত মহিষের শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। ব্যাকটেরিয়াজনিত কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। কোস্ট ট্রাস্ট, ব্রাক, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ও হিড বাংলাদেশ আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। সবার মতেই এখন কিছু সমস্যা আমরা শনাক্ত করেছি। অগ্রহায়ন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য পুকুর খনন করতে হবে। ঘাসের জন্য প্রাণি পুষ্টি উন্নয়ন ও প্রযুক্তির আওতায় লালমোহন ও চরফ্যাশনে একটি উন্নত প্রজাতির ঘাস উৎপাদনের জন্য প্রজেক্ট চালু রয়েছে। তবে মহিষ মালিকরা আমাদেরকে জমি প্রদান করে তাহলে ঘাস উৎপাদনের জন্য একটি প্রজেক্ট চালু করতে পারি।
ভোলা মাঝের চরের মহিষ বাতান মালিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আমদের সারা বছর কোনো না কোনো সমস্যায় লেগেই রয়েছে।সরকারি বেসরকারিভাবে নামমাত্র সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। চরগুলো ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চিকিৎসক পেতে অনেক সমস্যা হয়। আশপাশে পুকুর না থাকায় শীতে লোনা পানি খাওয়াতে হয়। বর্ষায় টিলা না থাকায় পানিতে ভেসে যায় অনেক মহিষ। সরকারিভাবে যদি এ চার মাসের জন্য কাঁচা ঘাসের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা উপকৃত হতাম।
বাংলাদেশের পঁচাশি হাজার মহিষের মধ্যে ভোলায় রয়েছে চৌদ্দ হাজার। ভোলার জনপ্রিয় মিষ্টি ও দধির একমাত্র উপকরণ দুধের শতভাগ যোগান হয়ে থাকে এ চর থেকে। ভোলার শত বছরের ঐতিহ্য আজ হারাবার পথে। বর্ষায় ইলিশ ও শীতে মহিষ যখন ভোলার জলদস্যুদের টার্গেট, ঠিক তখনই বিভিন্ন সমস্যায় কয়েক মাসে শত শত মহিষ মারা যাওয়ায় আতঙ্কে আছে মহিষ বাতান মলিকরা। প্রাণিসম্পদসহ জনপ্রশাসনের সমন্বিত প্রয়াস ছাড়া কোনো দিনই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে জানান স্থানীয় মালিকরা।
Leave a Reply