মশক নিধন নিয়ে প্রায় প্রতিবছরই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনকে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মশা মারতে প্রায় তিনশ কোটি টাকার সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
পাশাপাশি গত ১ জুলাই থেকে টাকার বিনিময়ে বাসাবাড়ির মশা তাড়াতে একটি উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নির্দিষ্টি পরিমাণ টাকা জমা দিলে মিলবে এ সেবা।
তবে করপোরেশনের সেই উদ্যোগে সারা মেলেনি। গত প্রায় দেড় মাসে একজন নাগরিকও আবেদন করেননি সেবাটি নিতে। এ অবস্থায় মশক নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৬ আগস্ট থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ডিএসসিসি।
এ বিষয়ে সংস্থাটির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘মশা নিধনে করপোরেশনের সর্বত্র ব্যাপকহারে কাজ চলছে। ফগিংসহ নানা উদ্যোগ রয়েছে। এর পরও অপশনাল একটি সুযোগ রাখা হয়েছিল।
করপোরেশনের লোকজন দিয়ে বাসাবাড়ির মশক প্রজননস্থল ধ্বংস করতে চাইলে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে সেবাটি নিতে এখন পর্যন্ত কেউই আবেদন করেনি।
পাঁচ ক্যাটাগরিতে নগরবাসীর জন্য সেবাটি চালু করে ডিএসসিসি। আবেদন করে টাকা পরিশোধের পর ৩ কার্যদিবসের মধ্যেই সেবাগ্রহীতার বাড়িতে গিয়ে ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল এডিসের লার্ভা ধ্বংস করবেন সংস্থার লোকজন। আর সেই সেবা নিতে হলে তিন কাঠা পর্যন্ত এক ইউনিট বাড়ির ক্ষেত্রে (৫ তলা পর্যন্ত) ২ হাজার টাকা দিতে হবে।
এ ছাড়া তিন থেকে পাঁচ কাঠার ফ্ল্যাট বাড়ির (প্রতি ফ্লোর) আড়াই হাজার, পাঁচ থেকে ১০ কাঠা পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্ট ১০ তলা পর্যন্ত (প্রতি ফ্লোর) সাড়ে তিন হাজার, ১০ তলার ওপরে বেজমেন্টসহ পাঁচ হাজার এবং বাণিজ্যিক ভবনের জন্য ফি দিতে হবে আট হাজার টাকা।
অনলাইনের মাধ্যমে এই সেবা উদ্বোধনকালে ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘কারও বাসাবাড়িতে বা বেজম্যান্টে মশার লার্ভা বা লার্ভার বিস্তারক্ষেত্র রয়েছে কিনা, সেটা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব না।
এ ধরনের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যই বছরব্যাপী মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এখন থেকে ঢাকাবাসীর জন্য অনলাইনে আবেদনের ভিত্তিতে প্রজননস্থলে কীটনাশক ছিঁটানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, আবেদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকা পরিশোধ করে কোনো নাগরিক সেবা না নিলেও গতকাল পর্যন্ত ওয়েবসাইটে ২১২ নাগরিক এ সংক্রান্ত তথ্য দেখেছেন। তবে তারা কেউই চূড়ান্ত ধাপ অতিক্রম করে সেবার জন্য আবেদন করেননি। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে ১৬ আগস্ট থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ডিএসসিসি।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বছরব্যাপী সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পর্যালোচনা সভায় বলেন, ‘বছরব্যাপী মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সবার সহযোগিতায় আমরা সফলতা পাচ্ছি, ঢাকাবাসী সুফল পাচ্ছে। ফলে ঢাকা দক্ষিণে মশার প্রকোপ নেই বললেই চলে।
তার পরও ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও নির্মাণাধীন ভবনে এখনো ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল রয়ে গেছে। যেহেতু এ সময়টাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়, তাই আমাদের কর্মপরিকল্পনার শেষপন্থা আমরা এখন অবলম্বন করতে যাচ্ছি। আমরা ১৬ আগস্ট থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করব। এর মাধ্যমে যেসব সংস্থা ও নির্মাণাধীন ভবনে এখনো ডেঙ্গু মশার প্রজননের উৎসস্থল রয়ে গেছে, সেগুলোতে আমরা যেমন মশা নিধন করব, পাশাপাশি তাদের সচেতন করব।
এমনকি কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে, যাতে তারা এ ব্যাপারে আরও সচেতন হয় এবং নিজেরা স্বপ্রণোদিত হয়ে ডেঙ্গু মশা নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নেন এবং তাদের আর জরিমানা দিতে না হয়। তা হলে আমরা সম্পূর্ণরূপেই মশাবাহিত রোগ- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ইত্যাদি নির্মূল করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক যেসব জায়গায় বেশি প্রোকপ দেখা যাবে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুরুতে আমরা দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করব।’
Leave a Reply