গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার কৃষ্ণচন্দ্র দাসকে হিন্দু নিবন্ধক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পরিমল ঘোষ। তাকে নিয়োগ না দিয়ে গড়িমসি করতে থাকেন তিনি। এ নিয়ে পরিমলকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিলেন কৃষ্ণ চন্দ্র। কিন্তু পরিমল টাকা ফেরত না দিয়ে কৃষ্ণ চন্দ্রকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় পরিমল ও তার সহযোগীদের সঙ্গে মদ্যপান করতেন কৃষ্ণচন্দ্র। মদ্যপানের সুযোগ নিয়ে পরিমল ঘোষ ও তার চার সহযোগী কৃষ্ণকে মাথায় আঘাত করে পুকুরে ফেলে হত্যা করেন। এ ঘটনার সাড়ে ছয় বছর পর তদন্ত শেষ করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিমলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে।
গত ৮ জুলাই আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আহসানুজ্জামান। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে চার্জশিট এখনো আমলে নেননি আদালত। এর আগে ১০ পুলিশ কর্মকর্তা এ মামলাটি তদন্ত করেছেন। আহসানুজ্জামান এ মামলার ১১তম তদন্ত কর্মকর্তা। গত ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনসুরপুরের একটি পুকুর থেকে কৃষ্ণ চন্দ্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগের দিন ৩১ জানুয়ারি রাতে তিনি খুন হন। মামলার চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন ধ্রুবজিৎ ঘোষ, দিলিপ চন্দ্র দাস, আশরাফুজ্জামান ওরফে খসরু, রঞ্জিত চন্দ্র দাস, উত্তম চন্দ্র দাস ও দিলিপ চন্দ্র দাস।
মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আহসানুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, তদন্ত শেষ করে কালীগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর পরিমল ঘোষ ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তিনি। তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি পরিমল ঘোষ এখন জামিনে আছেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র করে তাকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে।
এদিকে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিদের সঙ্গে কৃষ্ণ চন্দ্র মুনসুরপুরের অশি^নীকুমারের পুকুর ঘাটে একসঙ্গে মদ্যপান করতেন এবং আড্ডা দিতেন। ঘটনার দিন রাতে তারা একসঙ্গে মদ্যপান করেন। মদ্যপানের পর তারা সেখানে আনন্দ-উল্লাসও করেন। একপর্যায়ে আসামিদের সঙ্গে কৃষ্ণের ঝগড়া হয়। এ সময় আসামিরা কৃষ্ণকে মারধর করেন। পরে কৃষ্ণের মাথায় আঘাত করে এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে আসামিরা। পরে লাশ পুকুরে ফেলে দেয়। নিবন্ধক নিয়োগের নাম করে কৃষ্ণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পরিমল ঘোষ। এ টাকার জন্য পরিমলকে চাপ দেওয়ার কারণে কৃষ্ণকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে মদ্যপানের সুযোগ নিয়ে সহযোগীদের নিয়ে কৃষ্ণকে হত্যা করেন তিনি।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিদের মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে এবং আসামিরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছেন। আসামি ধ্রুবজিৎ ঘোষ এবং উত্তম চন্দ্র দাস দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা অন্য আসামিদের ওপর কৌশলে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছেন জবানবন্দিতে। মামলার সার্বিক তদন্তে এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা গেছে, পরিমল ঘোষ এবং তার সহযোগীরা কৃষ্ণকে হত্যা করেছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
Leave a Reply