কক্সবাজারের টেকনাফে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিন গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের এই ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় সাক্ষী করা হয়েছিল। সোমবার রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ। তারা তিনজনই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় তাদের মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছিল।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ জানিয়েছেন, তারা এই ঘটনার মামলায় পুলিশের করা সাক্ষী ছিল। হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে র্যাব ওই তিনজনকে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে হাজির করে সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় বলে কক্সবাজার আদালত পুলিশের পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ জানান। তিনি বলেন, মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিচারক বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন রেখেছেন।
র্যাব সূত্র জানায়, সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে নানান মিথ্যা নাটক সাজায় পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে এ ঘটনায় মাদক, সরকারি কাজে বাধাদানসহ নানা অভিযোগে টেকনাফ ও রামু থানায় পৃথক তিনটি মামলা করে পুলিশ। মামলার ৩ সাক্ষী ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর পরামর্শে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং ও সন্দেহভাজন ডাকাত হিসেবে সিনহাকে নিয়ে অপপ্রচার করে। তবে স্থানীয়রা জানান, ওই রাতে আসলে মসজিদ থেকে কোনো মাইকিং করা হয়নি। এটি ওই তিনজনের অপপ্রচার। তাদের এসব নির্দেশনা দিতে একেকজনকে ১৫/১৬ বার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দেন ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের দুই শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ। ওই সময় তার গাড়িতে সিফাত ছিলেন।
সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থনায় দুটি মামলা করে পুলিশ, যাতে সিনহা এবং তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আসামি করা হয়। আর তারা যেখানে থেকে কাজ করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়া যায় অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় আরেকটি মামলা করা হয়।
পুলিশের করা এই তিন মামলার পর গত ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয় জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় আত্মসমর্পণ করে এখন কারাগারে আছেন ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য। তাদের এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি র্যাব।
এদিকে আদালতের নির্দেশে চারটি মামলায়ই এখন তদন্ত করছে র্যাব। এরই মধ্যে পুলিশের তিন মামলায় গ্রেপ্তার সিফাত ও শিপ্রাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
Leave a Reply