সময়ের প্রয়োজনে অনেক রীতিতে পরিবর্তন এলেও আদালতে কালো কোট বা গাউন পরিধানের রীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে হাইকোর্টে বিচারপতি এবং আইনজীবীদের কালো কোট বা গাউন পরার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আপাতত শিথিল করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিস থেকে এ মর্মে একটি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে করে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে বিচারপতি এবং আইনজীবীরা টার্নড-আপ সাদা কলার এবং সাদা ব্যান্ডসহ সাদা শার্ট ও প্যান্ট/শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরিধান করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, কালো কোট না পরার বিষয়টি সাময়িক সময়ের সময়ের জন্য শিথিল করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়টিতে পোশাক পরিচ্ছদসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য বারবার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইনজীবী এবং বিচারপতিরা সাদা শার্টের উপর যে কালো কোট পরিধান করেন সেটি প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে- এমন চিন্তা থেকে কালো কোট পরিধান করার বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।
আইনজীবী ও বিচারপতিরা কেন কালো কোট পরেন?
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ব্রিটিশ শাসনের উত্তরাধিকার সূত্রে চলে এসেছে।
সময়ের প্রয়োজনে অনেক রীতিতে পরিবর্তন এলেও আদালতে কালো কোট বা গাউন পরিধানের রীতিতে কোন পরিবর্তন আসেনি।
১৬৮৫ সালে ইংল্যান্ডে রাজা দ্বিতীয় চার্লস মারা যাওয়ার পর শোকের প্রকাশের জন্য আদালতে আইনজীবী এবং বিচারপতিরা কালো কোট গাউন পরা শুরু হয়।
সেই থেকে গত প্রায় ৩৩৫ বছর যাবত কালো কোট পরিধান করার রেওয়াজ চালু আছে।
শত-শত বছর যাবত এই পোশাক কেন প্রচলিত আছে কিংবা এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি কেন- তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো ধারণা আইন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সেই প্রথা ব্রিটেন তাদের উপনিবেশগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
অধ্যাপক রহমান বলেন, কালো রঙের সাথে ন্যায়বিচারের কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে কালো পোশাক পরিধানের মাধ্যমে আইনজীবীরা নিজেদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করে।
তিনি বলেন, কালো কোট পরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনে রয়েছে। যে কোনো আইনজীবী চাইলেই তার নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরে আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন না।
‘এ আইন পরিবর্তন না করলে কালো কোট পরিধান করে আদালতে যাওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর যদি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ইচ্ছেমতো পোশাক পরে আদালতে যাওয়া যাবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, কালো কোর্ট-সাদা শার্ট এবং গাউন পরিধানের মাধ্যমে আদালত প্রাঙ্গণ এবং কক্ষে আইনজীবী এবং বিচারপতিদের অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে চেনা যায়।
‘আদালত কক্ষে বাদী-বিবাদীসহ অনেকেই আসেন। সাদা শার্ট এবং কালো কোটের মাধ্যমে আইনজীবীদের অন্যদের চেয়ে পৃথক করা করা যায়,’ বলেন মনজিল মোরশেদ।
অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে কালো পোশাক আরামদায়ক নয়। গরমের সময় কালো কোট পরে আদালতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে আইনজীবী এবং বিচারপতিদের অসুবিধা হয়।
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, একটি স্বাধীন দেশে আদালতের পোশাক ঔপনিবেশিক আমলের রীতি দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়।
তবে আইনজীবী মনজিল মোরশেদ আইনজীবীদের কালো কোট পরিধান করার প্রথার পক্ষে। তিনি মনে করেন এটি থাকা উচিৎ।
তিনি মনে করেন, আবহাওয়ার সাথে কালো কোটের সম্পর্ক নেই।
‘গরমের বিষয়টি আগে ছিল। এখন তো আদালতগুলো এসি হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় ফ্যান আছে। কোট, টাই, গাউন- এগুলো আমাদের ঐতিহ্য হিসেবে আছে এবং এটা আইডেন্টিফিকেশন হিসেবে আছে।’
মোরশেদ বলেন, বাংলাদেশের মতো আবহাওয়ার অনেকে দেশেরই আইনজীবীরা কালো পরিধান করেন।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply