নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর চাঁদমারী, চরকাউয়া, বেলতলা ও পুরনো ফেরিঘাট এলাকার খেয়াঘাট গুলো থেকে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ খেয়া পারাপার করে। করোনা সংক্রমণ রুখতে গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল এসব খেয়া পারাপার। কিন্তু বর্তমানে লকডাউন (অবরুদ্ধ) অবস্থা শিথিল থাকায় এসব খেয়াঘাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। যে কারণে এসব খেয়াঘাটগুলো থেকে জেলাজুড়ে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
এসব তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বরিশালের সচেতন নাগরিক সমাজ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন থেকে এসব ব্যাপারে আরো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে গত দুদিন (রোববার ও সোমবার) এসব খেয়াঘাটে গিয়ে মানুষের সচেতনতাহীন ভিড়ভাট্টার সত্যতা পাওয়া যায়। খেয়াপারাপারে ব্যবহৃত ট্রলার (ইঞ্জিন চালিত নৌকা) গুলোর যাত্রীদের মাঝে লক্ষ্য করা যায় নি সামাজিক দূরত্বের কোন চিত্রা। প্রতিটি খেয়াতেই গাদাগাদি করে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। যাত্রীদের বেশিরভাগই করোনা জীবাণু প্রতিরোধক কোনো সুরক্ষা সামগ্রী (হ্যান্ড গ্লাভস,মাস্ক ইত্যাদি) ব্যবহার করে না। অনেকের মুখের মাস্ক থাকে পকেটে কিংবা হাতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরকাউয়া খেয়াঘাটে যাত্রী পারাপারের সঙ্গে জড়িত এক ট্রলার চালক জানান, নদীর ওপারের প্রচুর মানুষের কর্মক্ষেত্র বরিশাল শহরে। লকডাউন শিথিল করায় পেটের তাগিদে তাদেরকে খেয়া পারাপার করে শহরে আসতেই হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসা ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে অনেক লোকই শহরে আসা যাওয়া করে। কিন্তু গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে করোনা বিষয়ক সচেতনতা ও সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব থাকায় তারা সাবধানতা অবলম্বন করে চলাচল করতে পারছে না।
তিনি বলেন,‘ বরিশাল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে করোনা পরিস্থিতি শুরুর দিকে কিছুদিন খেয়া পারাপার বন্ধ ছিল। কিন্তু তখনও গোপনে চলাচল করেছে মানুষজন। উপার্জন বন্ধ হবার উপক্রম হওয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি জানা সত্ত্বেও ট্রলার চালকেরা ও মাঝি- মল্লারা স্বাভাবিক ভাবেই খেয়া পারাপার ও দূরবর্তী এলাকা গুলোতে ভাড়ায় ট্রলার চালানোর কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন,‘ গত ৭ এপ্রিল বরিশাল র্যাব-৮ এর পক্ষ থেকে খেয়াঘাট গুলোর ইজারাদার, ট্রলার চালক ও যাত্রীদের সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে তেমন জোরদার কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান হয় নি। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে যাত্রী সাধারণ এবং খেয়া পারাপারের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা আরেকটু সচেতন হতো’।
বরিশাল বিভাগে একমাত্র করোনা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেখানকার চিকিৎসক ডা. শিরীন সাবিহা তন্বী বলেন,‘আমরা কেউই চাই না বরিশালের আর একজন মানুষও করোনায় আক্রান্ত হোক। কিন্তু খেয়াঘাট গুলোর সাধারণ মানুষদের মাঝে করোনার ব্যাপারে সচেতনতা কম। তাদের একজনও যদি করোনা জীবাণু বহন করেন তবে তাঁর মাধ্যমে হাজারো মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তাই এই জায়গাগুলোতে জরুরী ভাবে প্রশাসনের নজরদারি দরকার’।
খেয়াঘাট গুলোর ব্যাপারে এখন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান। তিনি জানান, খেয়াঘাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি না মানার ব্যাপারটি উদ্বেগ ও দুঃখজনক। সাধারণ মানুষেরা সচেতন হলে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই জনস্বার্থে এখন থেকে নগরীর খেয়াঘাট গুলোতে বিশেষ তদারকি রাখবে পুলিশ প্রশাসন।
তিনি বলেন,‘ এখন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে খেয়াঘাট গুলোতে করোনা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
Leave a Reply