অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরে পরিণত হতে যাচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিশ্বের বড় বড় আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরের সব সুবিধা রাখা হবে সেখানে। দেশের প্রথম বিমানবন্দর হিসেবে থাকবে বিস্ফোরকদ্রব্য শনাক্তকরণ ব্যবস্থা। কেউ বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করলেই ধরা পড়ে যাবে। আবার বিভিন্ন পণ্যের ভেতরে কোনো ব্যক্তি বিস্ফোরকদ্রব্য কিংবা বোমা নিয়ে গেলেও তা জানতে পারবে কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের ব্যবস্থা প্রথমবারের মতো সিলেট বিমানবন্দরে স্থাপিত হবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রথম বিমানবন্দর হিসেবে ফাইভ লেভেল সিকিউরিটি সিস্টেমের আওতায় আসবে বিমানবন্দরটি। এ ছাড়াও অগ্নিনিরাপত্তাতেও বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রাখা হবে।
বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীনের বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (বিইউসিজি) সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের এ কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে গ্রাউন্ডওয়ার্ক শুরু করেছে। বিমানবন্দরটির সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রক্রিয়াও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
বিমান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক আমাদের সময়কে বলেন, আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের পর যে কোনো দিন প্রধানমন্ত্রী সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ পাবে; যেখানে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজে। ৩৩ মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকবে। থাকবে নতুন বোর্ডিং ব্রিজ, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং সিস্টেম, ফ্লাইট ইনফরমেশন ডিসপ্লে সিস্টেম, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথক সাবস্টেশন, অত্যাধুনিক ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম, বিশ্বমানের ইডিএস সিস্টেম, লিফট এক্সেলেটর, অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা সার্ভিলেন্স সিস্টেম, জেট-১ জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যাধুনিক ফুয়েল হাইড্রেন্ট সিস্টেম, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও কার্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভয়েস কন্ট্রোল কমিউনিকেশন্স সিস্টেম ও ভয়েস রেকর্ডিং রাডার সিস্টেম স্থাপন ব্যবস্থা।
সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ফুয়েলিং সিস্টেম থাকবে। এ জন্য সুবিশাল জেট-১ ফুয়েল ডিপো করা হচ্ছে। উড়োজাহাজের জেট-১ জ্বালানি সরবরাহের জন্য অত্যাধুনিক ফুয়েল হাইড্রেন্ট সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এতে সব উড়োজাহাজ খুব সহজে ও নিরাপদে বিমানবন্দর থেকে জ¦ালানি সংগ্রহ করতে পারবে। বিমানবন্দর টার্মিনাল ব্যবহারকারী যাত্রীদের নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। অন্যদিকে কার্গোতে বিশ্বমানের ইডিএস সিস্টেম ও আরএথ্রি এরিয়া সংযোজনের মাধ্যমে কার্গো স্ক্যানিং আরও সফল এবং ঝুঁকিমুক্ত করা যাবে।
সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, গতকাল বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপের (বিইউসিজি) সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। তারা কীভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এ ব্যাপারে আমাদের পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশন দিয়েছে। তাদের বলেছি, কার্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্বমানের কাজ দেখতে চাই। তিনি আরও বলেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ও কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের সঙ্গে এয়ারফিল্ড গ্রাউন্ড লাইট অ্যাপ্রোন স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবার মান বাড়বে। থাকবে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে ৬ লাখ যাত্রী ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ ধারণক্ষমতা বেড়ে ২০ লাখে উন্নীত হবে। থাকছে ৩৬টি চেকইন কাউ কাউন্টার, ৬টি এক্সেলেটর লিফট, ৯টি নরমাল লিফট, ৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ৩টি ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেমসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
Leave a Reply