নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উচ্চতা জটিলতায় বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতরের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, সেতুটি নির্মাণ হলে বড় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বড় নৌযান চলাচল বন্ধ হলে এ নৌ পথের হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। বারবার উচ্চতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হলেও প্রয়োজনের চেয়ে কম উচ্চতার নকশাতেই সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীতে আবার আপত্তি জানানো হলে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে গোমা সেতু নির্মাণে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বাকেরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও পটুয়াখালীর বাউফল, দুমকি এবং দশমিনা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি নদীর দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি, চরাদি, দুধল, কবাই, গারুরিয়া নলুয়া ও ফরিদপুর ইউনিয়ন। একই প্রান্তে আছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালীর দুমকী, বাউফল ও দশমিনা উপজেলা। এসব এলাকার মানুষের স্কুল-কলেজ, হাট বা স্থানীয় বাজারে যাতায়াত, এমনকি বরিশাল বিভাগীয় শহর যাতায়াত করতে বাধা হচ্ছে খরস্রোতা রাঙ্গামাটি নদী। নৌকায় যাতায়াত করতে হয় তাদের ঝুঁকি নিয়ে। কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ সহজতর করতে গোমা সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছিল। উচ্চতা জটিলতা নিরসন করে দ্রুত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছিল বাকেরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও পটুখালীর বাউফল, দুমকি এবং দশমিনা উপজেলার লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন অধিদফতর (বিআইডব্লিউটিএ) পরবর্তী করণীয় কি হবে তা নির্ধারণ করতে নানা উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্মাণাধীন গোমা সেতু পরিদর্শন করেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মো. মহিদুল ইসলাম। এসময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশাল জোনের বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা তাদের সঙ্গে ছিলেন। বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ঢাকায় গিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন দেবেন। ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুটি নির্মাণ করছে সড়ক জনপথ বিভাগ (সওজ)।
বরিশাল সওজ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর সড়ক ও সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দফতর থেকে মতামত চাওয়া হলে বিআইডব্লিউটি জানিয়েছিল, সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৬২ মিটার উচ্চতা রেখে সেতু নির্মিত হলে তাদের আপত্তি নেই। এরপর সওজ বিভাগ দরপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২০১৮ সালের দিকে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর পর বিআইডব্লিউটিএ পুনরায় সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তুলে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য সওজকে অনুরোধ করে। এমনকি ২০১৫ সালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক সওজ বিভাগে পাঠানো অনাপত্তিপত্রও ওই সময়ে বাতিল করা হয়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌ-পথের গুরুত্ব ও পায়রা বন্দরের কার্যক্রম চালু হওয়ায় রাঙ্গামাটি নদীর ওই নৌ-পথ ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। এ কারণে গোমা সেতুর উচ্চতা সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় কমপক্ষে ১২ দশমিক ০৫ মিটার করার প্রস্তাব দেয় বিআইডব্লিউটিএ। সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা বলেন, গোমা সেতুর নির্মাণ কাজ ৬৫ ভাগ শেষ হয়েছে। তাই সেতুটির উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হলে পিলারসমূহ ও এবাটমেন্ট ভেঙে পুনঃনির্মাণ করতে হবে। যা মূল অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিকর। তাই এখন আর উচ্চতা বৃদ্ধির সুযোগ নেই। সেতু নির্মাণ কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ঢাকায় গিয়ে যে মতামত দেবেন সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সওজের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলেছে, নির্মাণাধীন গোমা সেতু থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পা-ব নদীর ওপর নির্মিত পেয়ারপুর সেতুর চেয়ে ৩ মিটার বেশি উঁচু করে নির্মিত হচ্ছে গোমা সেতু। তাই গোমা সেতুর উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এখন অযৌক্তিক। এ কারণে উচ্চতা বৃদ্ধির সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়।
বিআইডব্লিউটিএ এর নৌপথ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের দক্ষিণ ব-দ্বীপ অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক এসএম আজগর আলী বলেন, রাঙ্গামাটির নৌপথ সচল রাখতে গোমা সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ০৫ মিটার করার প্রস্তবনা দিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ পুরাতন নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ করতে চাচ্ছেন। এভাবে সেতু নির্মাণ করা হলে নৌপথটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির নৌপথের উচ্চতায়। কিন্তু নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। সেতুটির উচ্চতা বাড়ানো না হলে গুরুত্বপূর্ণ এ নৌপথ দিয়ে দূরপাল্লার, বিশেষ করে ঢাকাগামী লঞ্চ ও বড় বড় মালবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে পাশ হয়। ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৫৮ কোটি টাকা। এরই মধ্যে সেতুর ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।’
Leave a Reply