বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন ও পরিকল্পিত নগর গড়ার লক্ষ্যে দাখিল করা সব নকশা (প্ল্যান) ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬-এর বদলে ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে বিসিসির প্রধান স্থপতি হৈমন্তী শুক্লা বসু স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বিসিসির গণসংযোগ শাখা এই তথ্য নিশ্চিত করে। এদিকে নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে বরিশাল মহানগর এলাকায় ভবন নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে দাবি করেছেন ভবন অনুমোদনের জন্য প্ল্যান দাখিলকারী জমির মালিকরা। অবশ্য কেউ কেউ এই নীতিমালায় কিছুটা সুবিধাও রয়েছে বলে মনে করছেন।
বিসিসির প্ল্যান শাখা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনের চারপাশে ৩ মিটারের কম জায়গা রাখলে হতো। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনের চারপাশে ৩ মিটারের কম জায়গা রাখলে হবে না অর্থাৎ ১০ ফিট জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক।
১৯৯৬ সালের নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী সাততলার পরে ভবন নির্মাণ করতে হলে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন ২০০৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী দশতলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক রয়েছে।
বিসিসির স্থপতি হৈমন্তী শুক্লা বসু দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার ২০০৮ সালের নির্মাণ বিধিমালা; বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অবশ্যই মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্মাণ বিধিমালায় ভোগান্তির কোনো বিষয় নেই; বরং এটি আধুনিক ও নিরাপদ নগর গড়ার ক্ষেত্রে যুগোপযোগী। তা ছাড়া ভবনের চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে ভবন মালিকেরই বেশি সুবিধা বলে জানান হৈমন্তী শুক্লা। বিসিসির প্ল্যান শাখায় চারতলা ভবনের জন্য আবেদনকারী ফরহাদ হোসেন বলেন, শহরে অনেকেই কম জমি ক্রয় করেন। তার মধ্যে চারপাশে ১০ ফিট জমি রাখতে গেলে বাড়ি নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। বিষয়টি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে আবারও ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিসিসিতে গত এক বছরে বাড়ি নির্মাণের ১২শ আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৬৩২টি প্ল্যান অনুমোদন দিয়েছে। যার মধ্যে চারতলা ভবনের অনুমোদন বেশি।
তবে চলতি বছর নতুন বিধিমালা অনুযায়ী পঞ্চাশটির মতো আবেদন জমা পড়েছে। সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে ভূমি ছাড়পত্র। তবে তা সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মাস্টার প্ল্যানের আওতায় যদি কোনো জমি থাকে অথবা আদালতে মামলা চলে কিংবা জমি নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকে সে ক্ষেত্রে ভূমির ছাড়পত্র প্ল্যানের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এমনকি জমি যদি সরকারি কোনো উন্নয়ন কর্মকা-ের অংশবিশেষ হয়, তখনো এই সনদ প্রয়োজন হবে। এই সনদ দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনে এখন পর্যন্ত কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি।
গত বছর বরিশাল নগরীতে সহস্রাধিক বাড়ি নির্মাণের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে অর্ধেকটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, পারস্পরিক বিরোধ, আদালতে মামলা ও অনুপযুক্ত প্ল্যানসহ বিভিন্ন কারণে অর্ধেক আবেদন গৃহীত হয়নি।
নগরীর একাধিক প্রাইভেট কনসালটেন্সি ফার্ম জানায়, বিসিসি থেকে সহজেই ভবন নির্মাণের জন্য প্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হয় না। যেসব প্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বেশ কয়েক বছর আগের আবেদন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, বরিশাল মহানগরকে মাস্টার প্ল্যানের আওতায় আনার জন্যই মূলত ভবন নির্মাণে ১৯৯৬ সালের নির্মাণ বিধিমালা পরিহার করে ২০০৮ অনুযায়ী নকশা প্রস্তুত করে দাখিল করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নতুন নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন হলে বরিশাল নগর হবে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ।
Leave a Reply