স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতির পক্ষে তিনি দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে দাবির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি ডা. রাজু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক ডা. নাহিদ হাসান। এসময় তারা বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে। কিছু হলেই রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের ওপর হামলা করছে। এ পর্যন্ত ১৭টির মতো হামলা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর কোনটির সুষ্ঠু বিচার হয়নি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ শাকিলের স্ত্রী খাদিজার (২২) মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি করা হয়। তিনি ছিলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও অ্যাকলামশিয়া রোগে আক্রান্ত। তার প্রেসার খুবই বেশি ও অচেতন থাকায় জরুরি অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে রোগীটি অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা আমাদের চিকিৎসকদের ওপর হমালা চালায় এবং তিন চিকিৎসকে জখম করে। এ ছাড়া অপারেশন থিয়েটারের আশপাশে বেশ ভাঙচুর করে। এই হামলার ঘটনায় স্বজনদের বিচার, সরকারি ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের ক্ষতিপূরণ চাই দিতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবিও জানান তারা। তিন দফা দারির কথা উল্লেখ করে বলেন, হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পুলিশের টিম থাকবে। চিকিৎসা অবহেলা হলে রোগী বা স্বজনরা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিবে। তারা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন। তাছাড়া চিকিৎসকরা অভিযুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিএমডিসি ব্যবস্থা নিবেন। এ আন্দোলন শুধু ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। তারা ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে রোগীর সেবা নিয়মিত দিয়ে যাবেন। আর দাবি না মানা পর্যন্ত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষনা দেন তারা। এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে হাসপাতালের মধ্যখানের গেট বন্ধ রেখে শুধু জরুরি বিভাগের গেট খোলা রেখে রোগী ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আবদুল কাদির বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। রোগীর স্বজনদের দাবি ছিলো সময় মতো রোগীর অপারেশন করা হয়নি। কিন্তু ওই রোগীর প্রেসার খুবই বেশি ছিলো। এমন রোগীর অপারেশন করা যায় না। তাই রোগী মুমূর্ষু থাকায় মারা গেছেন। কিন্তু স্বজনরা চিকৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কোতয়ালি থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টার্নদের নিয়ে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেস্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, কনস্টেবল শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, তার স্ত্রী ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তাকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। খাদিজার অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে গেলেও চিকিৎসকরা তেমন কোনো খেয়াল নেননি। পরে তারা সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিতে বলে। তিনি বলেন, অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। সেখানে কর্তব্যরত সেবিকারা লুডু খেলছিলেন। তাদের ঘটনা জানালে তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেন। তৃতীয় তলায় গাইনি ওয়ার্ডে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অপারেশেন থিয়েটারে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তারা সিনিয়র চিকিৎসক ছাড়া যেতে পারবেন না বলে জানান। এসময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের মারধর করে বলে অভিযোগ করেন শাকিল।
Leave a Reply