তৌহিদ হোসেন উজ্জ্বল, বাউফল ॥ ভারিবর্ষণ আর অমাবস্যা লাগোয়া অতিজোয়ারে প্লাবিত চর ও নি¤œাঞ্চল থেকে পানি কমে যাওয়ায় আমন চাষে ধুম পড়েছে। সাগরের লঘুচাপের প্রভাবে ২০ হাজার হেক্টর জমির আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে ক্ষতির মুখে পড়ে পটুয়াখালীর বাউফলের কৃষক-কৃষাণী। পানি নামতে থাকায় শঙ্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টায় এখন ব্যস্ত তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এবছর প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমির আমনের বীজতলা তৈরীর লক্ষমাত্রা নির্ধারিত হয়। এতে রয়েছে ১৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর স্থানীয় জাতের এবং ১৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজতলার জন্য ২২ হেক্টর স্থানীয় এবং ১১শ’ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজতলা। পানিতে ডুবে পেঁপেসহ ৫ কোটি টাকার শাক-সবজির ক্ষতি হলেও অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর চর ও নি¤œাঞ্চল থেকে পানি নেমে যাওয়ায় আমনের বীজতলার এই ক্ষতি সামন্য ১ পার্সেন্টে নামবে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করছে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেস্টায় চাঙা হচ্ছে কৃষক। আমন রোপনের কাজে এখন ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন তারা।
সরেজমিন উপজেলার মূলভূখন্ড বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপের চরমিয়াজান ভান্ডারিবাজার এলাকায় অর্ধশতাধিক কৃষি শ্রমিককে বীজতলা থেকে আমন ধানের চারা তুলে নিতে দেখা যায়। এ সময় কৃষক শাহআলম হাওলাদার, আব্দুল আলী, ছালাম, রত্তনসহ কয়েকজন প্রান্তিক কৃষক ও ওইসব কৃষিশ্রমিকরা জানায়, এর আগে অতি বৃষ্টিরমতো কয়েক দফায় দুর্যোগের কারণে আমনের বীজতলা বিনস্ট হয়। সরকারি ভর্তূকি মিলিয়ে বিএডিসির নির্ধারিত ডিলারের বিভিন্ন খরচের কারসাজিতে ২৯০ টাকার ১০ কেজির প্রতি প্যাকেটের আমনের বীজ ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় কিনতে হয়েছে কৃষকের। শেষের দিকে এসে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকাতেও বীজধান না পাওয়ায় অনেকেই নিজস্ব পদ্ধতিতে রাখা বীজে ধান বুনেন বীজতলায়। সর্বশেষ জোয়ারের পানি আর ভারি বর্ষণে মাঠঘাট আর বীজতলা ৩-৪ ফুট উচ্চতার পানিতে ভেসে যাওয়ায় আবারো ক্ষতির মুখে পড়ে চর ও নি¤œাঞ্চলের কৃষক। চর আর নদী পাড়ের বেড়িবাঁধের বাহির থেকে পানি নেমে যেতে থাকায় নি¤œাঞ্চলের বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হলেও শঙ্কা কমেছে কৃষকের। বড়ডালিমা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গির মৃধা বলেন, ‘আমন মৌসুমে এই বছর দফায় দফায় নামছে বিপর্যয়। বিষ্টি-জোয়াইর্যা পাইনতে নীচু জমিনের বীচলা ক্ষ্যাত পইচক্যা গ্যাছে। এমন বিপদে সরকারী সাহায্য পাইলে কিষ্যকগো উপুকার অইতে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জামান বলেন, ‘সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণ আর অতিজোয়ারের পানিতে তলিয়ে পটুয়াখালীর বাউফলে পেঁপেসহ ৫ কোটি টাকা গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে। সামন্য ক্ষতি ও কিছু পরিমান আংশিক ক্ষতি হয়েছে আমনের বীজতলার। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় বীজতলার এই ক্ষতির পরিমান কমে ১ পার্সেন্টে নামবে। উপজেলার চরাঞ্চরের কৃষক-কৃষাণী এখন আমন চারা রোপনের কাজে ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন।’
Leave a Reply