জাতীয় সংসদের ৫টি আসনের উপনির্বাচনে একটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। পাবনা-৪ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে। ৩০ আগস্ট দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে তার নাম ঘোষণা করা হয়। ওইদিন অন্য চারটি আসনের প্রার্থীর নাম পর্যায়ক্রমে ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অন্য ৩টি আসনের প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। কিন্তু কৌশলগত কারণে তা প্রকাশ করতে সময় নিচ্ছে মনোনয়ন বোর্ড। ঢাকা-১৮ আসনে হাবীব হাসান, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় এবং নওগাঁ-৬ আসনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। আর ঢাকা-৫ আসনে কাকে নৌকার টিকিট দেওয়া হবে এ নিয়ে আরও ভাবছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
প্রার্থী চূড়ান্ত করার খবর প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট আসনগুলোয় অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রয়া দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ক্ষোভ-বিক্ষোভও চলছে। যাদের নাম গণমাধ্যমে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
আওয়ামী লীগের ঘোষণার আগে প্রার্থীর নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ এবং এ খবর দেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ক্ষোভ প্রকাশ- দুটোকেই দায়িত্বহীন আচরণ বলে মনে করছেন দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, সবাই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করবে আমরা এটা প্রত্যাশা করি। কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করলে সেটা দল সাংগঠনিকভাবে বিবেচনা করবে। দলে প্রতিযোগিতা থাকে। প্রতিযোগিতা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপনির্বাচন ইস্যুতে ক্ষোভের প্রথম প্রকাশ ঘটে ১ সেপ্টেম্বর। মনোনয়ন পাচ্ছেন না এমন খবরে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার আওয়ামী লীগ অফিসে বিক্ষোভ করেন। তিনি মনোনয়নের ব্যাখ্যা চাইতে তার দলবল নিয়ে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তার সঙ্গে আসা কর্মীরা ‘মনোনয়ন পাওয়া’ প্রার্থী হাবীব হাসানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের বিক্ষোভকালেই সেখানে আসেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রহমান ও ড. হাছান মাহমুদ। তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবীব হাসান কোনো মন্তব্য না করলেও তার সমর্থকদের ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। হাবীব হাসানের বাবাকে রাজাকার বলায় ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন কাউন্সিলর আমাদের সময়কে জানান, হাবীব হাসান ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা থেকে রাজনীতি শুরু করে বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আছেন। এ এলাকার স্থানীয় মানুষ হিসেবে তিনি সব সময় মানুষের পাশে ছিলেন, এখনো আছেন। তার বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য হতাশাজনক।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তানভীর শাকিল জয়ের মনোনয়নের খবরে অন্য দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী কিছু না বললেও তাদের ভক্ত ও অনুসারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। পাবনা-৪ আসনকে কেন্দ্র করে প্রয়াত এমপি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পরিবারের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের ৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। কোন্দল এড়াতে এবং এলাকার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবারের বাইরে গিয়ে নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সেখানে মতবিরোধ থাকলেও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন গিয়ে সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে নিয়ে সভা করছেন। সভায় সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি থাকবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
নওগা-৬ আসনের প্রয়াত এমপি ইসরাফিল আলমের স্ত্রীসহ ৩৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল মনোনয়ন পেতে পারেন এমন খবরে তার অনুসারীরা উচ্ছ্বসিত। অন্যদিকে অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।
জানা গেছে, হেলাল গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এ কারণে স্থানীয়ভাবে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রে সুপারিশও পাঠানো হয়েছিল। দল সেই সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, রাজশাহী বিভাগে ওই অর্থে কোন্দল নেই, এটা প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগের মতো এতবড় দলে প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্যরা কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভুল করবেন না বলে আশা এই সাংগঠনিক সম্পাদকের।
Leave a Reply