আবার অস্থির হয়েছে দেশের পেঁয়াজের বাজার। চার দিনের ব্যবধানে এ নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে ৩০-৩৫ টাকা। গত বছরও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। ৩০-৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজের দাম আড়াইশ টাকা ওঠে। দেশব্যাপী টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ সরবরাহ করেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল পেঁয়াজের দাম। তবে এ বছর আগে থেকে সতর্ক থাকার পর বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত চার দিন আগে রাজধানীর বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ টাকা। গতকাল সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৭২ টাকায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আমদানি ও সরবরাহ বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার জরুরি ভিত্তিতে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, চিঠি পাওয়ার পর এনবিআর শুল্ক কমানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে এ ধরনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে
কৃষি মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন প্রয়োজন। সেটিও যেন সহজে দেওয়া হয় সে জন্য বাণিজ্য সচিব কৃষি মন্ত্রণালয়েও চিঠি পাঠিয়েছেন।
অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতে পেঁয়াজের মোকামগুলোয় দর বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত তিন দিনে পাইকারি আড়তে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারগুলোয় সব ধরনের পেঁয়াজ দ্বিগুণেরও বেশি দামে এখন বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ভারতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে সেখানে দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির এ সময়ে আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এতে আমাদের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে এক সপ্তাহ পরে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করবে বলে জানা গেছে।
আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ দিকে। নতুন পেঁয়াজ আসবে আরও চার মাস পর। এ সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজের ঘাটতি হলে গত বছরের মতো আবার অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হতে পারে। করোনা মহামারীর এ সময়ে বাজার স্বাভাবিক রাখতে আগেই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে এবং আমদানিও স্বাভাবিক। পেঁয়াজের সংকট বা মূল্য বৃদ্ধির কোনো সঙ্গত কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুদ বা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে সরকার আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনাকালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে পেঁয়াজের মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে আরও বলা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হয়েছে। সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অবিলম্বে খোলা বাজারে ট্রাকসেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় শুরু করবে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় পর্যালোচনা করা হয়। পেঁয়াজের মজুদ, আমদানি ও সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়।
Leave a Reply