নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দূর্গা সাগর দীঘিতে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন নতুন নানা উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসক। বরিশাল জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত দূর্গা সাগর দীঘিতে বর্তমানে হরিণ , পানিতে রাজ হাঁস , ফুলের বাগান, নৌকা ভ্রমণ, মৎস্য শিকার সহ দীঘির সংস্কার ও নতুন আরো নানাবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন বরিশাল জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক এস. এম. অজিয়র রহমান।
করোনা ভাইরাসের কারনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বরিশাল জেলা প্রশাসকের আদেশক্রমে দীঘি এলাকায় সবোর্চ্চ ২ ঘন্টা অবস্থান ও সবোর্চ্চ ৫০ জন প্রবেশ করা সহ ১১ টি শর্তসাপেক্ষে গত মাসের ৭ আগষ্ট থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দূর্গা সাগর। দূর্গা সাগর দীঘিতে পর্যটকের মধ্যে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার দেশি-বিদেশি মানুষ রয়েছেন। তবে পর্যটকদের জন্য আবাসন ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও নিশ্চিত হয়নি বলেও ঘুরতে বাসা অনেক পর্যটক অভিযোগ করেন । এসব সমস্যা সমাধান করলে দূর্গা সাগর দীঘিতে আরও বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশাল জেলার নানারকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিদর্শনের মধ্যে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দূর্গা সাগর অন্যতম। এ দীঘি দেখতে দেশ বিদেশ থেকে শতাধিক মানুষের সমাগম হয় প্রতিদিন। বরিশাল জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক এস. এম. অজিয়র রহমান স্যারের নির্দেশনায় দুর্গাসাগর দিঘি পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ দিঘির মধ্যবর্তী মনোরম দ্বীপের ফুল বাগান ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি উৎপাদনমুখী হওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে বরিশালের দূর্গাসাগর পাড়ের বাগানে বিচরণ করছে হরিণ। দীঘির জলের মধ্যে রাজ হাঁস, পানির মধ্যে নানা প্রজাতির মাছ, মাছ শিকার করার জন্য ছোট ছোট চৌকি, দীঘির পাড়ে নানা ধরনের ফুলের বাগান, পিকনিকের জন্য শেড। এমনটাই জানিয়েছেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান আরো জানান, দীঘির দ্বীপটিকে আকর্ষণীয় করতে সেখানে রাখা হয়েছে কৃত্রিম বাঘ, জীবন্ত বানর। এছাড়া পর্যটকদের বিনোদনে দিঘীতে চলাচল করছে নৌকাও। দীর্ঘদিন আগেই দূর্গাসাগর দীঘিতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
২০১৬ সালে এটিকে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটক নির্ভর করার লক্ষ্যে মাঠে নামে জেলা প্রশাসন। যাতে সফল প্রাপ্তিও ঘটে। দূর্গা সাগর দীঘির দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার মোঃ জাহাঙ্গীর এর সাথে কথা হলে জানান, বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান এর নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া কারনেই দূর্গাসাগরে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
এছাড়া বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় করে বর্তমানে বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে । দূর্গা সাগর দীঘির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরা গেলে বিশ্ব পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সহজ হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। মঙ্গলবার দুপুরের পর রাকুদিয়া এলাকা থেকে ঘুরতে আসা ওবায়দুল ইসলাম উজ্জ্বল সহ উপস্থিত পর্যটকরা বলেন, আগের থেকে দূর্গা সাগর দীঘি আধুনিকায়ন করা হয়েছে যার জন্য বরিশাল জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক এস. এম. অজিয়র রহমান স্যার প্রশংসার দাবিদার। বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় স্থানীয় জনগণের পানি সঙ্কট নিরসনে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করেন চন্দ্রদ্বীপের পরগনার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ন। স্ত্রী রানী দূর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এ দীঘি খনন করা হয়। দিঘী খননে এক রাতে রানী প্রায় ৬১ কানি জমি হেঁটেছিলেন। আর রানী দূর্গাবতীর নামেই দিঘীটির নামকরণ করা হয় দূর্গা সাগর। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দীঘিটি ৪৫ একর ৪২ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। এর ২৭ একর ৩৮ শতাংশ জলাশয় এবং ১৮ একর চার শতাংশ পাড়। এছাড়া দীঘির চারপাশ দিয়ে ১.৬ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা রয়েছে। পাড়টি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৪৯০ ফুট এবং প্রশস্ত পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট। দীঘিটির মাঝখানেই রয়েছে ছোট একটি দ্বীপ। যা এ দীঘির সৌন্দর্য আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলেছে।
স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৪ সালে দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তখনকার জেলা বোর্ড ১২০০ টাকা ব্যয় করে দিঘীটি পরিষ্কার করে। সে সময়েই দীঘির মাঝামাঝি স্থানে অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ছোট দ্বীপের ন্যায় তৈরি করা হয়। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষ রোপন করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। যা বর্তমানে দীঘিটির শোভা বর্ধন করেছে। দীঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দীঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।
মধ্যখানে দ্বীপবিশিষ্ট এ দীঘির সর্বশেষ ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সংস্কার করা হয়। দীঘির চার পাশে চারটি সুদৃশ্য বাঁধানো ঘাট থাকলেও পূর্ব দক্ষিণ পাশের ঘাট দুটি বিলীন হয়ে গেছে। পশ্চিম পাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন। দীঘির পশ্চিমে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শোলনা ও ফুলতলা গ্রাম। চার গ্রামের মধ্যস্থানে এক শুভদিনে হাজার হাজার লোক দীঘি খনন কাজ শুরু করেন। চন্দ্র দ্বীপ রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম হতে প্রজারা দীঘি খননে অংশ নেয়। দীঘি খনন কাজ শেষ করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে। চারপাশে পঞ্চাশ ফুট বিস্তৃত চারটি পাকা ঘাট নির্মাণ করেন। শীতের সময় পিকনিক স্পট ও অতিথি পাখির অভয়ারন্যের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই দূর্গা সাগরে পর্যটকদের ভিড় একটু বেশি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
Leave a Reply