অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমীন শাহরিয়ার ফেরদৌস। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে এ আবেদন করেন তিনি। আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন আদালত।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে জানান, ‘কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেই চলেছেন। তিনি সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। আসামিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অর্থাৎ এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন তার দাপ্তরিক কার্যক্ষমতা আসামিদের পক্ষে কাজে লাগাচ্ছেন। তাই তাকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ফৌজদারি আবেদন করেছি। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষায় রেখেছেন।’
মামলার বাদী ও মেজর সিনহার বড় বোন শারমীন শাহরিয়া ফেরদৌস জানান, এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন ঘটনার শুরু থেকেই আসামিদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। উনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মেজর সিনহার মানহানি করেছেন। ওই সময় তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন মেজর সিনহার গাড়িতে তিনি ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য পেয়েছিলেন। একজন পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি এটি বলতে পারেন না। তিনি তদন্তকাজে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করে চলেছেন।
মেজর সিনহার বোন আদালতে ১০টি অভিযোগ এনে নতুন করে অভিযোগপত্রটি প্রদান করেন।
আদালতের নজরে আনা ১০ অভিযোগের মধ্যে বাদী দাবি করেছেন, মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার নিহত অবসপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে অশ্রদ্ধা, অবমাননাকর ও মানহানিকর প্রতিক্রিয়া করে চলেছেন। আসামিদের মামলার দায় হতে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। এছাড়া অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন, গুরুত্বপূর্ণ অফিসে ক্ষমতা সমূহ অপব্যবহার,হত্যাকাণ্ড ঘটার পর ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে মামলার দায়ভার হতে মুক্তি পাওয়ার পন্থাসমূহ শিখিয়ে দিয়েছেন।
এসপি মাসুদ আহত অবস্থায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে চিকিৎসা প্রদানে অনীহা ও কোনো ভূমিকা না রাখা,পুলিশের মামলার সাক্ষীদের আসামি করে টেকনাফ থানায় সাক্ষীদের আসামি করে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করার পর অজ্ঞাত নামা অপহরণ মামলা দায়ের করা, অত্র মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশ কে মেডিকেল লিভ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া,আসামি প্রদীপ দাস কে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছেন।
আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে কারা ছিল তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে পাঠাতে গড়িমসি করে জটিলতা সৃষ্টি করা, সংশ্লিষ্ট অনেককে অন্যত্র বদলি করিয়ে দেওয়া,মামলার ঘটনার পর পুলিশের করা মিথ্যা মামলা অনুযায়ী মিডিয়াতে আসামিদের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করত মেজর রাশেদ খানকে একজন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বক্তব্য প্রচার করত মানহানি অপদস্ত করা, ঘটনার পর পুলিশ সুপার মিডিয়াতে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে শামলাপুরের লোকজন গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহে করে খবর দেন। এই সময়ে তল্লাশি চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু মিথ্যাভাবে বলেন যে, গাড়ির আরোহী পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। আরও জানান যে, গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা বড়ি, কিছু গাঁজা, দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করে। যা আদৌ সত্য নয়, এতে নিহত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের অবমাননাকর বিদায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। এসব কারণে পুলিশ সুপারকে মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান বাদী।
নিহত মেজর সিনহা রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আরো বলেন, ‘আদালতের কাছে আমার প্রত্যাশা এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসপি মাসুদকে উক্ত মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন।
উল্লেখ্য গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারের ফেরার পথে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর গত ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার পরিদর্শক লিয়াকত, ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
Leave a Reply